মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত অগস্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে জানিয়েছিলেন, একশো দিনের কাজে রাজ্যের বকেয়া পাওনার পরিমাণ ৬৫৬১ কোটি টাকা। সোমবারই তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সৌগত রায় লোকসভায় অভিযোগ তুলেছিলেন, একশো দিনের কাজে পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া অর্থের পরিমাণ ৭৩০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। রাজ্যের দাবি কার্যত নস্যাৎ করে আজ কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক লোকসভায় জানাল, একশো দিনের কাজে পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া পাওনা ৩২০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে মজুরি বাবদ পাওনার পরিমাণ ২৭৪৪ কোটি টাকা। বাকিটা যন্ত্রপাতি, সরঞ্জামের জন্য।
রাজ্যের পাওনা আটকে রাখা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বিবাদ আজ ফের সংসদে উঠে এসেছে। লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ তুলেছেন, মোদী সরকারের আমলে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্কের কাঠামো চ্যালেঞ্জের মুখে। একশো দিনের কাজের মতো বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া অর্থ আটকে রেখে রাজ্যকে অর্থনৈতিক ভাবে কোণঠাসা করছে। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন সময়ের চিঠিও তুলে ধরে সরব হয়েছেন তিনি।
একশো দিনের কাজে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে টাকা দেওয়া বন্ধ করেছিল কেন্দ্র। রাজ্য অবশ্য কেন্দ্রের নিয়ম মেনে প্রকল্প চালানোর আশ্বাস দিয়েছে। তৃণমূল সাংসদ মালা রায় লোকসভায় জানতে চেয়েছিলেন, ওই প্রকল্পে কোন রাজ্যের কত টাকা বাকি। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক জানিয়েছে, রাজ্যগুলির প্রায় ৭,৬৫৪ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে মজুরি বাবদ পাওনা ৪,৪৪৮ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে যে পশ্চিমবঙ্গের পাওনার পরিমাণই সবচেয়ে বেশি, তা অবশ্য কেন্দ্র মেনে নিয়েছে। কেন্দ্রের এই তথ্যের পরে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর সূত্রের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক কী ভাবে এত কম বকেয়ার অঙ্কে পৌঁছচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
তৃণমূল এখানেই কেন্দ্রের দিকে রাজনীতির অভিযোগ তুলেছে। সুদীপের দাবি, বিজেপি সভাপতি নিজেই পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে বলেছেন, রাজ্যকে বকেয়া অর্থ দেওয়া হয়নি। কারণ, রাজ্য খরচের শংসাপত্র দেখাতে পারেনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই বলেছিলেন, এই অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা। সুদীপ বিজেপি সভাপতির নাম করায় বিজেপির সাংসদেরা প্রতিবাদ জানান।
একশো দিনের কাজ নিয়ে তৃণমূল নেতারাও কেন্দ্রের কাছে দরবার করেছেন। জুন মাসে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের সঙ্গে দেখা করে তৃণমূলের সংসদীয় দল দাবি করেছিল, বকেয়া ৭,১৩০ কোটি টাকার অন্তত অর্ধেক অর্থ ছেড়ে দেওয়া হোক। সুদীপ সরাসরি মন্ত্রীকে ফোনও করেছিলেন। আজ সুদীপ বলেন, ‘‘সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা আমাদের সংবিধানের অঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গ তথা পূর্বাঞ্চল স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’