—ফাইল চিত্র
দীর্ঘ ১০ বছর পর সিঙ্গুর মামলার নিষ্পত্তি হল। সুপ্রিম কোর্টে ঐতিহাসিক জয় পেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঙ্গুর মামলার রায় ঘোষণা করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিল, ২০০৬ সালের জমি অধিগ্রহণ সম্পূর্ণ অবৈধ। বিচারপতি গোপাল গৌড়া এবং বিচারপতি অরুণ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার নির্দেশ দিল, আগামী ১২ সপ্তাহের মধ্যে কৃষকদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে অধিগৃহীত জমি। দেখে নিন এই মামলার মূর কথাগুলো:
• বাম আমলে সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ বেআইনি, অসংবিধানিক ছিল।
• জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া মেনে করা হয়নি। ফলে তা খারিজ করে দেওয়া হয়।
• ১০ সপ্তাহের মধ্যে সমীক্ষা করে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। ১২ সপ্তাহের মধ্যে জমি ফিরিয়ে দিতে হবে কৃষকদের।
• যাঁরা ক্ষতিপূরণ নিয়েছিলেন তাঁদের থেকে ক্ষতিপূরণ ফেরত নেওয়া হবে না।
• যাঁরা ক্ষতিপূরণ নেননি, তাঁরা যেহেতু ১০ বছর নিজেদের জমি ব্যবহার করতে পারেননি। অর্থাৎ তাঁরা জমির মালিকানা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এবং ক্ষতিপূরণও পাননি। তাই তাঁদের বর্তমান বাজারদরে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
• সিঙ্গুর মামলার শুনানিতে দু’জন বিচারপতি ভি গোপালা গৌড়া আর অরুণ মিশ্রের দু’টো বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। এক, জমি জনস্বার্থে নেওয়া হয়েছিল নাকি কোনও বেসরকারি সংস্থার জন্য নেওয়া হয়েছিল।
• যার পক্ষে বিচারপতি অরুণ মিশ্র জানান, জনস্বার্থেই সেই জমি নেওয়া হয়েছিল। বিচারপতি গোপালা গৌড়ার মতে, জনস্বার্থে জমি নেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন:
মমতার ঐতিহাসিক জয়, ‘সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ অবৈধ’: সুপ্রিম কোর্ট
‘১০ বছর অপেক্ষায় ছিলাম, এখন আমি শান্তিতে মরতেও পারি’
• দুই, তখন কৃষকদের দেওয়া ক্ষতিপূরণ রাজকোষ থেকে গিয়েছিল কি না? বিচারপতি গোপালা জানান, রাজকোষ থেকে সেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ শিল্প উন্নয়ণ নিগম ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। বিচারপতি অরুণ মিশ্র এরপর জানান, পশ্চিমবঙ্গ শিল্প উন্নয়ণ নিগম মানেই তো রাজকোষ থেকে টাকাটা যাওয়া। তার মানেই জনস্বার্থে নেওয়া হয়েছে।
• এরপর জমি অধিগ্রহণের আগে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল তা যথাযথ হয়েছিল কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিচারপতি গোপালা গৌড়া বলেন, তা যথাযথ হয়নি। অপরদিকে, বিচারপতি অরুণ মিশ্র বলেন, তা যথাযথই হয়েছিল। কিন্তু বাকি সব ক্ষেত্রেই এত ভুল-ভ্রান্তি ছিল যে সামগ্রিকভাবে জমি অধিগ্রহণ বেআইনি। সুতরাং জমি অধিগ্রহণ খারিজ করে তা ফিরিয়ে দিতে হবে।
• রায় ঘোষণার পর টাটার আইনজীবী গোপাল জৈন বলেছেন, সিঙ্গুর জমি অধিগ্রহণ নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ কিছু মামলা জমা রয়েছে যাতে জমির হাতবদলের ব্যাপারে স্থগিতাদেশ জারি করা রয়েছে। তাতে বিচারপতিরা জানান, ওইসব মামলার আর কোনও গুরুত্ব থাকল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিঙ্গুরে জমি ফিরিয়ে দেওয়ার আইন কলকাতা হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছিল। জমি অধিগ্রহণ বেআইনি হওয়ায় সেই মামলারও আর কোনও অর্থ থাকল না।
আরও খবর- সিঙ্গুর: জমি বিবাদের দলিল
আরও খবর- ফিরে দেখা সিঙ্গুর লড়াই...