বিয়ে এমন এক সামাজিক বন্ধন, যেখানে দু’জন মানুষের আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হিন্দু শাস্ত্র মতে, বাঙালি বিয়ের আচার অনুষ্ঠান বহুবিধ। সাত পাকে বাঁধা তেমনই একটি উল্লেখযোগ্য রীতি।
দু’জন মানুষের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও ভালবাসার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয় এই রীতি। অগ্নিদেবকে সাক্ষী করে অগ্নিকুণ্ডের চারপাশে সাত বার ঘুরতে হয় বর-কনেকে। একেই বলা হয় সাত পাকে বাঁধা পড়া। প্রতিটি পাকের একটি করে বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
প্রথম পাক: পাত্রের শপথ, বিয়ের দিন থেকেই পাত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করবেন। অন্য দিকে, পাত্রীর প্রতিজ্ঞা খাদ্য ও আর্থিক বিষয়-সহ গৃহকর্মের যাবতীয় দায়িত্ব তাঁর। প্রথম পাকে দম্পতি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন, তাঁরা একে অপরের খাদ্য এবং স্বাচ্ছন্দ্যের দায়িত্ব নেবেন।
দ্বিতীয় পাক: পাত্রের প্রতিজ্ঞা তিনি বাড়ি এবং সন্তানদের রক্ষা করবেন। পাত্রীর শপথ, জীবনের সব রকম ওঠাপড়ায় তিনি স্বামীর পাশে থেকে সাহস ও শক্তি জোগাবেন। এই পাকের ব্যাখ্যা- দু’জন দু’জনের সুখ ও সুস্থ জীবনের দায়িত্ব নেবেন।
তৃতীয় পাক: এই পাকের অর্থ পরিবারের সমৃদ্ধি, সন্তানদের দীর্ঘজীবন এবং পড়াশোনার দায়িত্ব পালন করবেন দু’জনে। দম্পতি একসঙ্গে প্রতিজ্ঞা করেন, সব রকম আধ্যাত্মিক কর্তব্য পালন করবেন, মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেবেন এবং একে অপরকে আন্তরিকতা ও ভালবাসায় ভরিয়ে রাখবেন।
চতুর্থ পাক: এই পাকে একে অপরকে পরিপূর্ণতা দেওয়া এবং পবিত্রতা রক্ষার শপথ নেন দম্পতি। জীবনের যে কোনও ক্ষেত্রে, যে কোনও পরিস্থিতিতে একে অপরের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
পঞ্চম পাক: একে অপরকে ভালবাসা এবং সম্মান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন দম্পতি। একে অপরের প্রতি বিশ্বাস এবং একে অপরের শুভাকাঙ্খী হিসেবে বিবেচিত হন তাঁরা।
ষষ্ঠ পাক: সুস্বাস্থ্য এবং রোগহীন জীবনের কামনা করেন দু’জনেই। সারা জীবন একসঙ্গে থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন এই পাকে।
সপ্তম পাক: ঈশ্বরের আশীর্বাদ নিয়ে দাম্পত্য সম্পর্কের সূচনা করেন দু’জনে। যে সম্পর্ক সততা, দায়িত্ব এবং বিশ্বস্ততায় পরিপূর্ণ। এই সম্পর্ককে চিরস্থায়ী ও মজবুত রাখতে সচেষ্ট থাকবেন দু’জনেই- প্রতিজ্ঞা করেন তাঁরা।
বিয়ের ক্ষেত্রে এই সাত পাকে বাঁধা পড়ার রীতি সব থেকে প্রাসঙ্গিক বলে গণ্য করা হয়। প্রসঙ্গত, হিন্দু বৈদিক বিবাহের আচার অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে কুশণ্ডিকা, লাজহোম, সপ্তপদী গমন, ধৃতিহোম এবং চতুর্থী হোম গুরুত্বপূর্ণ।