রাজ-শুভশ্রীর বিয়ের মুহূর্ত। ছবি: সংগৃহীত
বিয়ে মানেই মাথার মধ্যে হাজারও চিন্তার ঘুরপাক! বিয়ের কার্ড ছাপানো, নিমন্ত্রণ থেকে শুরু করে খাবারের আয়োজন করা, বিয়েবাড়ি ভাড়া, তত্ত্ব পাঠানো, সব শেষে মধুচন্দ্রিমা— এক কথায় বিয়ে মানেই যেন মহাযজ্ঞ। আর এই মহাযজ্ঞের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন অর্থের। বিয়ের জাঁকজমক কতটা হবে, তা পুরোটাই নির্ভর করে বাজেটের উপর। বিয়েতে অতিরিক্ত খরচ কমানোর জন্য রইল কিছু ফিকির
প্রথমেই বাজেট ঠিক করুন
বিয়ের কথা পাকা হওয়ার পর প্রথমেই ঠিক করে নিন আনুমানিক কী কী খরচ হতে পারে এবং আপনার কাছে ঠিক কত পরিমাণ টাকা রয়েছে যা আপনি বিয়ের জন্য খরচ করতে পারবেন। কোন কোন খাতে আপনি ঠিক কত টাকা খরচ করতে পারবেন তার একটা তালিকা তৈরি করে নিন। এতে গোড়াতেই আপনার ধারণা স্বচ্ছ হয়ে যাবে
ঋণ এড়িয়ে চলুন
অনেকেই বিয়ের খরচের হিসেব কষে ব্যক্তিগত ঋণের জন্য আবেদন করে। একান্ত প্রয়োজন না হলে এই ঋণ না নেওয়াই শ্রেয়। কারণ এতে সুদের হার বেশ চড়া — প্রায় ১০ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশ। ফলে খরচ তো কমেই না, উল্টে বেড়ে যায়।
টাকার একটা অংশ অন্যত্র সরিয়ে রাখুন
বাজেট ঠিক করার পরেই বিয়ের বাজেটের অন্তত ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ টাকা আলাদা করে সরিয়ে রেখে দিন। বিয়ের খরচ শুরু হলে অনেক ক্ষেত্রে খরচ হিসেবের তুলনায় বেড়ে যেতেই পারে। সে ক্ষেত্রে ওই টাকা আপনার কাজে লাগবে।
কোন খাতে কত খরচ
প্রত্যেকেরই ইচ্ছে থাকে জমকালো বিয়ের অনুষ্ঠান করার। ফলে সঠিক পরিকল্পনা না থাকলে অনেক জায়গাতেই খরচ বাড়ে বই কমে না। কিন্তু প্রথম থেকেই খাত হিসেবে খরচের একটা খসড়া করে রাখলে খরচ কমানো সম্ভব হতে পারে।
যে যে খাতে খরচ হতে পারে—
১। বিয়ে বাড়ি ভাড়া, আলো, বাড়ির সাজ, ফুল, খাওয়াদাওয়া, গয়না, পোশাক, গাড়ি ভাড়া, বিয়ের কার্ড, তত্ত্ব, ছবি ও ভিডিয়ো বাবদ খরচ এবং সবশেষে মধুচন্দ্রিমা।
২। কোন খাতে কত খরচ হতে পারে তা একটি জায়গায় লিখে রাখুন। প্রয়োজনে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
প্রতীকী ছবি।
৩। খরচে রাশ টানুন নানা উপায়ে
সময় বদলেছে। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিয়ের খরচ কমাতে বিভিন্ন উপায় বেছে নিচ্ছে এই প্রজন্ম। যেমন—
১। জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করে নয়, বরং ছিমছাম আয়োজন করে, স্রেফ আইনি ভাবে বিয়ে সারছেন অনেকেই। এতে সাশ্রয় তো হয়ই, সেই সঙ্গে ওই টাকা নবদম্পতির নতুন সংসারের শুরুতে অনেকটা কাজে লাগে।
২। বাগদান, মেহন্দি, বিয়ে, বউভাত, রিসেপশন— আয়োজন যত বাড়বে, খরচও তত বাড়বে। নতুন প্রজন্মে চল বেড়েছে একসঙ্গে অনুষ্ঠান করার। অর্থাৎ এক দিনেই দুই পক্ষের আত্মীয়-স্বজন সকলকে ডেকে নিয়ে অনুষ্ঠান সেরে ফেলেন অনেকেই। খরচও ভাগ হয়ে যায় দুই ভাগে। অনেকটা খরচ বেঁচে যায়।
৩। খরচ বাঁচাতে খাওয়ারের পদ নির্বাচনের দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে। একগাদা পদ না করে বাছাই করা বিশেষ কিছু পদ মেনুতে রাখুন। কেটারিং তো রয়েছেই, কিন্তু খরচ কমাতে হলে চেষ্টা করুন নিজেরা বাজার করে ঠাকুরকে দিয়ে রান্না করাতে। নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে বাজার করলে অনেক ক্ষেত্রেই খরচ বাঁচে।
৪। বিয়ের খরচের একটা বড় অংশ কিন্তু গয়নার পিছনেই চলে যায়। তাই আপনি ঠিক কী কী গয়না কিনতে চাইছেন আগে থেকে তার একটা পরিকল্পনা করে নিন। হাতে বেশ কিছুটা সময় নিয়ে তবেই বিয়ের দিনক্ষণ স্থির করুন।প্রয়োজনে ছ’মাস বা এক বছরের মতো সময় নিন। এই সময়ের মধ্যে একটু একটু করে গয়না বানিয়ে নিন। এ ছাড়াও লকারে চোখ বুলিয়ে নিন। দেখে নিন, কতটা গয়না রয়েছে এবং কী কী কিনতে হবে।
৫। অনুষ্ঠান বাড়ি ভাড়া, আলো, ফুলের গেট, ছবি এবং ভিডিয়োর খরচ এবং গাড়ি খরচ, ইত্যাদি বাঁচাতে অবশ্যই অন্তত ৪ ৫ জনের সঙ্গে দর-দাম করে নিয়ে তার পরেই সিদ্ধান্ত নিন।
৬। আগে পরিবারে কোনও বিয়ে থাকলে, আত্মীয়রা সকলে মিলে সব দায়িত্ব সামলে নিতেন৷ কিন্তু এই ব্যস্ততার মধ্যে সেটা অনেকাংশেই সম্ভব নয়৷ সেই কারণেই এখন বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজক সংস্থাগুলি তৈরি হয়েছে৷ এদের সাহায্য নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ৷ তবে হ্যাঁ, অবশ্যই আগে থেকে সব কিছু আলোচনা করে নেবেন। না হলে, উল্টে খরচ বাড়তে পারে।