হলুদকে মনে করা হয় শুভ শক্তির প্রতীক
বাঙালি বিয়ের অনুষ্ঠানের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে আছে গায়ে হলুদের প্রথা। চলতি সময়ে বিয়ের নিয়মে অনেক পরিবর্তন এলেও এই গায়েহলুদের রীতি কিন্তু আজও একই রকম জনপ্রিয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে অনুষ্ঠানের খরচও। বর্তমানে গায়েহলুদের বিষয় পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সাজসজ্জা, সব কিছুতেই এখন পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু এই গায়ে হলুদ লাগানোর রীতির পিছনে কোন কারণ লুকিয়ে আছে জানেন? কেন এই প্রথা এখনও এত জনপ্রিয়?
হলুদকে মনে করা হয় শুভ শক্তির প্রতীক। সেই কারণে অশুভ শক্তিকে দূরে রাখতে বিয়ের মতো শুভ অনুষ্ঠানে হলুদের ব্যবহার করা হয়। হবু বর ও কনেকে সব রকম অশুভ শক্তি থেকে সুরক্ষিত রাখতে বিয়ের দিন সকালে তাঁদের গায়েহলুদ লাগানো হয়।
আয়ুর্বেদিক উপাদান হিসেবে হলুদ ত্বকের জন্যও খুব ভাল। বিয়ের দিন সবাই চায়, তাঁকে সকলের থেকে সুন্দর দেখাক। কারণ বিয়ে সকলের জীবনেই একটি অত্যন্ত বিশেষ দিন। বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগে গায়েহলুদ মেখে স্নান করলে ত্বক উজ্জ্বল হয়। তা ছাড়াও হলুদ ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বককে ঝলমলে করে তোলে।
হিন্দু ধর্ম মতে বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন। যেখানে নতুন দম্পতিকে আশীর্বাদ করার জন্য দেব-দেবীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এতে ভগবান বিষ্ণুর বিশেষ স্থান রয়েছে। তাই তাঁর আশীর্বাদের জন্য, তাঁর প্রিয় রং হলুদ ব্যবহার করা হয় বিয়েতে। এই কারণেই, অনেক আচার-অনুষ্ঠানেও বর-কনে হলুদ রঙের পোশাকও পরেন।
বৈজ্ঞানিক ভিত্তি:
হলুদ এমন একটি মশলা যা প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটিতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি সেপটিক, অ্যান্টি ডিপ্রেশনের মতো বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি প্রয়োগে ত্বকে কোনও সংক্রমণের ঝুঁকি নেই এবং এটি ত্বককে ডিটক্স করে। হলুদ লাগালে শরীর তরতাজা হয়। সঙ্গে ত্বক উজ্জ্বলও হয়। তাই বিয়ের কারণে যে সাময়িক উত্তেজনা বা ভীতি কাজ করে তা নিয়ন্ত্রণ করতেও হলুদকে কার্যকরী হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
তা ছাড়াও অনেকেই বিশ্বাস করেন যে হলুদ লাগালে বর ও কনের উপর অশুভ দৃষ্টি বা শক্তির প্রভাব পড়ে না। এই কারণেই সাধারণত বর ও কনেকে হলদি অনুষ্ঠানের পরে, তাদের বিয়ের মুহুর্ত পর্যন্ত বাড়ির বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। তা ছাড়াও, হলুদ সম্পর্কে আরও একটি বিশ্বাস রয়েছে যে বর বা কনে যদি তাদের গায়ের হলুদ কোনও অবিবাহিত ব্যক্তির গায়ে ছোঁয়ায় তবে তাদেরও শীঘ্রই বিয়ে হয়ে যায়।
এই প্রতিবেদনটি ‘সাত পাকে বাঁধা’ ফিচারের অংশ।