—প্রতীকী ছবি।
টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল। ট্রফি জিতে আবেগে ভাসছেন বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদবেরা। আর তখনই পতাকা হাতে সটান পিচে চলে যান রোহিত শর্মা। সেখানকার মাটি মুখে নিয়ে গিলে ফেলেন টিম ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন। যা লেন্সিবন্দি করতে ভোলেননি চিত্রগ্রাহকেরা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল সেই ছবি।
রোহিতের সেই কীর্তিকলাপ নিয়ে মজা করেছেন নেটিজেনদের একাংশ। কেউ কেউ আবার তুলেছেন স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রশ্নও। যদিও আধুনিক গবেষণা বলছে এ সবই জল্পনা। মাটি বা কাদা মানবদেহের জন্য মোটেই ক্ষতিকর নয়। বরং তা নিয়মিত সেবনে বজায় থাকতে পারে তারুণ্য। শরীরে আসবে আলাদা জেল্লা।
এই ইস্যুতে সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট। সেখানে বলা হয়েছে, “টিকটক বন্ধ হওয়ায় আমজনতার অসুবিধাই হয়েছে। কারণ, ওই সমাজমাধ্যম থেকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অনেক টিপস পাওয়া যেত। সেখানেই একদিন একটি শিশুকে শুকনো কাদামাটি খাওয়ানোর ছবি পোস্ট হয়েছিল। মনে রাখতে হবে, এক চামচ কাদামাটিতে সবচেয়ে বেশি অণুজীব রয়েছে।” ওই পোস্টটি করেছিলেন স্টেফনি অ্যাডলার নামের এক হরমোন প্রশিক্ষক।
উল্লেখ্য, প্রসাধন সামগ্রী হিসাবে গত কয়েক বছর ধরেই কাদামাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। মূলত মুখমণ্ডল থেকে ব্রণ-ফুস্কুড়ি সারাতে এটি ব্যবহার করা হয়। যা নিয়ে যথেচ্ছ প্রচার চালায় ই-কমার্স সংস্থা। সেখানে কাদামাটির বিক্রির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে বলে জানা গিয়েছে।
বর্তমান সময়ে অনলাইনে যে কাদামাটির বস্তা বিক্রি হচ্ছে, তা মানুষের হজমশক্তির কথা মাথায় রেখে তৈরি করছে একাধিক সংস্থা। এগুলির দাম ১১ থেকে ২৭ ডলারের মধ্যে। এই দর শুধুমাত্র পরিমাণের উপর নির্ভর করে নেওয়া হচ্ছে না। কাদামাটির গুণগত মানের ভিত্তিতেও দামের হেরফের রাখা হয়েছে।
ই-কমার্স সংস্থাগুলির ভেন্ডারদের দাবি, লাল রঙের মাটির বস্তার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কারণ, গ্রাহকদের একটা বড় অংশই মনে করেন এই মাটি নিয়মিত সেবন করলে ঠেকানো যাবে বার্ধক্য। এ ছাড়া ঊজ্জ্বল মুখ ও খুসকির সমস্যার থেকে বাঁচতে এই মাটি অনেকে ব্যবহার করেছেন বলে জানা গিয়েছে। লালমাটির ক্ষেত্রে বস্তাপিছু ১২ ডলার দাম ধার্য করেছে ই-কমার্স সংস্থা।
কাদামাটি সেবন শরীর ভাল রাখার চাবিকাঠি– এই তত্ত্ব কিন্তু একেবারে গাঁজাখুরি নয়। ২০১৯ সালের গবেষণায় জানা গিয়েছে, কাদামাটি পেটে গেলে আরও মজবুত হতে পারে অন্ত্র। যার বিবর্তনের ক্ষেত্রে এটি ম্যাজিকের মতো কাজ করেছিল। প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ নিয়মিত কাদামাটি সেবন করত। পরবর্তী কালে অবশ্য মানুষের খাদ্যাভাস পুরোপুরি বদলে যায়।
এই ইস্যুতে সম্প্রতি মুখ খুলেছেন হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক। তাঁর কথায়, ‘‘মনে রাখতে হবে মাটি থেকেই যাবতীয় রসদ সংগ্রহ করে দাঁড়িয়ে থাকে ছোট-বড় গাছ ও লতাগুল্ম। আর তাই মাটির গুণাগুণ অস্বীকারের কোনও জায়গা নেই। রোগব্যাধি প্রতিরোধে এটি কাজ করতেই পারে।’’