বেলুন বিক্রেতা বাবা-মেয়ের জীবনযাপনের গল্প এক বেলুন ক্রেতার সৌজন্যে ছড়িয়ে পড়ে নেটমাধ্যমে। ছবি : টুইটার থেকে।
মেয়ের গায়ে ‘রাজকন্যার পোশাক’! বাবার কিন্তু রাজপ্রাসাদ নেই। বলতে গেলে চারটে দেওয়ালই নেই, মাথার উপর ছাদ কিংবা বাড়ি তো দূর অস্ত্। ক্লান্ত হলে খোলা আকাশই হয় দু’জনের ছাদ। গাছের ছায়ায় চাদর পেতে ঘুমিয়ে নেন বাপ-মেয়ে। ক্লান্তি জুড়োলে ওঁদের সঙ্গী হয় পিচের শহুরে রাস্তা। সেই রাস্তাতেই রাতভর মেয়ের হাত ধরে বেলুন ফেরি করে বেড়ান ‘প্রাসাদ’হীন বাবা। উদ্দেশ্য একটাই— তাঁর পাঁচ বছরের ‘রাজকন্যা’র পড়াশোনার খরচ জোগাতে হবে তাকে। ঘর না থাক, ভাল মানুষ হতে হবে।
ঘর নেই, বর্ধিত পরিবারও নেই। মধ্য চিনের হেনান প্রদেশের জুচাং নামে একটি এলাকার বাসিন্দা ওই বেলুন বিক্রেতা এক জন একা বাবা। মেয়েই তাঁর পরিবার। তাঁদের জীবনযাপনের গল্প এক বেলুন ক্রেতার সৌজন্যে ছড়িয়ে পড়ে নেটমাধ্যমে। তার পর থেকেই ওই বাবা-মেয়ের কাহিনি আলোচনার কেন্দ্রে।
ওই বেলুন ক্রেতার নাম ওয়্যাং। নেটমাধ্যমের একটি ভিডিয়ো শেয়ার করে তিনিই শুনিয়েছেন ওই বাবা-মেয়ের গল্প। ওয়্যাং জানিয়েছেন, রাতে বাড়ি ফেরার পথে এক দিন ওই বেলুন বিক্রেতার সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। বেলুন কিনতে কিনতেই গড়ায় আলাপচারিতা। মেয়েটির পরনে ছিল গোলাপি রঙের প্রিন্সেস গাউন। আর হাতে তুলোর খরগোশ। পাশে তার বাবা যদিও শুধুই একটি শর্ট প্যান্ট আর হাতাহীন গেঞ্জি পরেছিলেন।
ওয়্যাং তাঁর ভিডিয়োয় বলেছেন, ‘‘ওঁরা প্রতি দিন ভোর তিনটে পর্যন্ত ওই বেলুন পুতুল ফেরি করেন। ঘুমোতে যান ভোরের আলো ফুটলে। কোনও একটি গাছের ছায়া খুঁজে নিয়ে চাদর পেতে শুয়ে পড়েন বাবা-মেয়ে।’’
মালপত্র বলতে সামান্যই। একটি স্যুটকেসে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র একটি প্লাস্টিকের চাদর আর গায়ে চাপা দেওয়ার একটা সুতির কাঁথা। সে সব একটি ঠেলাগাড়িতে চাপিয়ে পথে নামেন একা বাবা এবং তাঁর এক মাত্র কন্যা। বাবা-মেয়ের ঘরহীন সংসারে এই ঠেলাগাড়িই সঙ্গী। রাত হলে তাতেই সার দিয়ে সাজানো থাকে বেলুন পুতুল। মেয়ের পায়ে ব্যথা হলে ওই গাড়িতেই তাঁকে তুলে টেনে নিয়ে যান বাবা। তবে এমন ঠিকানাহীন ভবঘুরে জীবনেও মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করেছেন বাবা। তাঁর পড়াশোনার খরচ জোগানো এখন বাড়তি দায়িত্ব তাঁর।
ওয়্যাংয়ের ওই ভিডিয়ো অনলাইনে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। অভিভূত দর্শকরা তাঁর নাম দিয়েছেন ‘বেলুন বাবা’। কেউ আবার বলেছেন, সব বাবার কাছেই মেয়েরা ‘রাজকন্যা’। তবে, এই বাবাও তাঁর সংসারের ‘মুকুটহীন রাজা’।