প্রতিবেদন: প্রিয়ঙ্কর ও শ্রাবস্তী, চিত্রগ্রহণ: সুব্রত ও প্রিয়ঙ্কর, সম্পাদনা: সুব্রত
সত্তরের দশকে লস অ্যাঞ্জেলেসের এলজিবিটিকিউ ক্লাব। ফাঙ্ক, ডিস্কো আর হিপহপে মাতাল হাওয়া। আমেরিকার কালো, বাদামি ও অন্যান্য প্রান্তিক মানুষের এক চিলতে মুক্তির অবকাশ। সেই ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে’ই জন্ম বিভিন্ন ‘স্ট্রিট স্টাইল’ নাচের। দৈনন্দিন সামাজিক জীবনের নানান বাধানিষেধের রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে, নিজের শরীরে মুক্তির ছন্দ খোঁজার তাগিদ থেকেই তৈরি হল ‘ওয়্যাকিং’, শুরুতে যাকে অনেকেই ডাকতেন ‘পাঙ্কিং’ নামে। আমেরিকার সিভিল লিবার্টিজ় আন্দোলন যখন সমাজের চাপিয়ে দেওয়া লিঙ্গ পরিচয়কে প্রশ্ন করতে শুরু করেছে, সেই আবহেই বেড়ে উঠছিল উদ্দাম গতিছন্দের এই নতুন নৃত্যশৈলী। হলিউডের নায়িকাদের ঝলমলে পোশাক, ১৯৬০-এর কমিক্সের সুপারহিরোদের মারপিট আর সত্তরের দশকের ‘মার্শাল আর্টস’ ছবি— ওয়্যাকিংয়ে মিশে গেল সবটাই। ‘ওয়্যাকিং’ নামটাই তো কমিক বই থেকে ধার করা— সুপারহিরোর সজোরে চপেটাঘাতকে প্রকাশ করার জন্য ‘স্পিচ বাবলে’ শিল্পী লিখতেন ‘হোয়্যাক’ ধ্বনি। সেখান থেকেই ‘ওয়্যাকিং’।
ক্রমে শহরের অন্ধকার জঠর থেকে মূলস্রোতে উঠে আসে ওয়্যাকিং। জায়গা করে নেয় আমেরিকান টিভিতেও। মিলেমিশে যায় আরও অনেক ধরণের নাচের শৈলী ও কৃৎকৌশল। তবে কিছু অভিজ্ঞান অপরিবর্তনীয়ই থেকে যায়— অসম্ভব গতিময় চক্রাকার হাতের মুদ্রা আর সুস্পষ্ট অভিব্যক্তির প্রকাশ। পাঁচ দশক বাদে, আজকে ইনস্টাগ্রাম বা টিকটিকের মতো সমাজমাধ্যমে দাপটের সঙ্গে রাজ করছে ওয়্যাকিং। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমেও জায়গা করে নিয়েছে এই নাচ।
কাট-টু ২০২৩-এর কলকাতা। সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারের নাচের শৈলীকে নিজেদের শরীরে তুলে আনছেন এক ঝাঁক তরুণতরুণী। সংগ্রাম-রূপসাদের মতো অনেকেই অন্যান্য নৃত্যশৈলীতে অভ্যস্ত ছিলেন। ডিজিটাল বিশ্বের নাগরিকেরা সহজেই আয়ত্ত করেছেন হিপহপ থেকে ভেঙে বেরিয়ে আসা এই ‘মুভমেন্ট’। সংগ্রাম জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে প্রায় আড়াইশো জন ওয়্যাকিং শিল্পী আছেন দেশে। এঁরা সবাই নিজের নিজের মতো করে নিজের ঘরানা তৈরিতে রত। তাই, তাঁদের নৃত্যশৈলী ভাষা পায় কখনও বলিউডের পুরনো গানে, কখনও বা রবীন্দ্রসঙ্গীতে। এ দেশেও লিঙ্গ পরিচয় ও যৌনতার সমাজ-স্বীকৃত গন্ডিকে ছাপিয়ে নিজের অভিব্যক্তির সন্ধানে ওয়্যাকিংয়ে মজছেন অনেকে। তবে এ নাচের জনপ্রিয়তা আটকে নেই প্রান্তিক পরিচয়ে। কলকাতা ছেড়ে দিল্লির পথে পা বাড়ানোর আগে রূপসা জানাচ্ছেন, নতুন প্রজন্মের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। নানান স্তরের নানান মানুষের ব্যবহারে বিবর্তিত হচ্ছে ওয়্যাকিংয়ের আঙ্গিক।