প্রতিবেদন ও চিত্রগ্রহণ: সুবর্ণা ও প্রিয়ঙ্কর, সম্পাদনা: অসীম
শীর্ষ আদালতের শুনানিতে সমকামী বিয়ের স্বীকৃতির দাবির তীব্র বিরোধিতা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতীয় পরিবারের ধারণার সঙ্গে খাপ খায় না সমকামী বিয়ে, যুক্তি কেন্দ্রের। কেন্দ্রের দাবি, সমকামী বিয়ের অধিকার একটি ‘শহুরে উচ্চবর্গের ধারণা’, দেশের সংখ্যাগুরু সাধারণ জনতার এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। কেন্দ্রের যুক্তি খণ্ডন করে প্রধান বিচারপতি বলেন, এর কোনই সংখ্যাতাত্ত্বিক প্রমাণ নেই। কলকাতার অদূরের মফস্সল বৈদ্যবাটীতে বাস সংঘমিত্রা-আত্রেয়ীর। দীর্ঘ তেরো বছর এক সঙ্গে ঘর করছেন, কিন্তু আইনি স্বীকৃতি নেই বলে ইচ্ছে থাকলেও বিয়ে করে ওঠা হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট স্বীকৃতি দিলে বিয়ে করবেন? এক সঙ্গেই তো আছেন, তাহলে বিয়ে করে আলাদা কী সুবিধা? পরিবার বলতেই বা কী বোঝেন? এ রকম আরও প্রশ্ন নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইন হাজির হয়েছিল সমকামী যুগলের মধ্যবিত্ত সংসারে।
এক সপ্তাহেরও বেশি হয়ে গেল সমকামী বিয়ের স্বীকৃতির মামলায় প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চে শুনানি চলছে। সমলিঙ্গের দুই ব্যক্তির মধ্যে বিয়ের অধিকারের দাবিতে শীর্ষ আদালতে প্রায় ২০টি পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল। বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৪ (স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট), হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫, বৈদেশিক বিবাহ আইন, ১৯৬৯ (ফরেন ম্যারেজ অ্যাক্ট) এবং নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫-র মতো বিধিগুলি এক জন পুরুষ ও এক জন নারীর মধ্যে বিয়েকেই শুধু আইনি স্বীকৃতি দেয়। এই সব ক’টি আইনের পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়ে শীর্ষ আদালতের কাছে বিয়ের অধিকারের সমতা প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়েছে পিটিশনগুলি। বিভিন্ন প্রেক্ষিতে এই দাবির কড়া বিরোধিতা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। পাল্টা সমকামী যুগলদের নানান অধিকার ও নাগরিক সুবিধার প্রয়োজনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে আদালত। তবে কেন্দ্রের বক্তব্য, সমকামী বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আদর্শ পরিসর আদালত নয়, এ নিয়ে আলোচনা হোক সংসদেই। বৃহস্পতিবারের শুনানিতে সাংবিধানিক বেঞ্চ কেন্দ্রের এ যুক্তির সঙ্গে সহমত পোষণ করলেও সমকামী সম্পর্কের আইনি ও নাগরিক সুবিধা সুনিশ্চিত করার জন্য মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে। শুনানি শেষ হওয়ার সম্ভাবনা অচিরেই। কী রায় দেয় শীর্ষ আদালত? আশায় বুক বাঁধছেন সংঘমিত্রা-আত্রেয়ীর মতো অগুণতি মানুষ, যাঁরা কোনও ভাবেই নিজেদের ‘শহুরে উচ্চবর্গ’ তকমায় ফেলতে রাজি নন।