সংসদ ভবনের ঠিকানা বদল। ব্রিটিশ কারিগরিতে তৈরি ৯৬ বছরের সংসদ ভবনকে পাকাপাকিভাবে বিদায় জানিয়ে নবনির্মিত সংসদ ভবনে শুরু হল অধিবেশন। গণেশ চতুর্থীর দিন মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করা দিয়ে নিজের যাত্রা শুরু করল নতুন সংসদ ভবন।
১৯২১ সালে সংসদ ভবনের প্রথম নকশা তৈরি করেছিলেন দুই ব্রিটিশ স্থপতি, স্যার এডউইন এবং হার্বার্ট বেকার। পুরনো সেই ভবন নির্মাণে সময় লেগেছিল ছ’বছর। যার নাম দেওয়া হয়েছিল কাউন্সিল ভবন। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর এই কাউন্সিল ভবনের নাম পাল্টে রাখা হয় সংসদ ভবন। রাজ্যসভা এবং লোকসভা মিলিয়ে এই সদনের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৭৯০ জন। রাজ্যসভায় অংশগ্রহণ করতেন ২৪৫ জন সদস্য এবং লোকসভায় স্থান ছিল ৫৪৫ জন জনপ্রতিনিধির।
সময়োপযোগী করতেই ভবনের দরকার ছিল আরও বড় জায়গা। সদনের সুরক্ষার জন্য ভাবা হচ্ছিল ভূমিকম্প-রোধক পরিকাঠামোও। ২০১০ সালে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য একটি কমিটিও গঠন করেছিলেন তৎকালীন স্পিকার মীরা কুমারী। সে সময় পুরাতন সংসদ ভবনের সংস্কার করা হলেও নতুন ভবন নির্মাণ নিয়ে পাকাপোক্ত কোনও সিদ্ধান্ত তখন নেওয়া যায়নি। অবশেষে ২০১৯ সালে ভারত সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করে নতুন সংসদ ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২০ সালে সেই ভবন নির্মাণের আনুষ্ঠানিক শিলান্যাস করেন নরেন্দ্র মোদী। আড়াই বছরের মধ্যেই ৬০ হাজার কর্মবীরের শ্রমে তৈরি হল নতুন সংসদ ভবন। মঙ্গলবারই নতুন সংসদ ভবনে শুরু হল বিশেষ অধিবেশন। নতুন ভবনে অধিবেশন শুরুর দিনই পুরনো ভবনের নামকরণ করে এলেন নরেন্দ্র মোদী। পুরনো সংসদ ভবনের নাম রাখা হল ‘সংবিধান সদন’।
কী আছে নতুন সংসদ ভবনের অন্দরমহলে?
নতুন সংসদ ভবনে থাকছে জ্ঞানদ্বার, শক্তিদ্বার এবং কর্মদ্বার নামের তিনটি প্রবেশদ্বার। আর প্রবেশপথেই রয়েছে মকর, হাঁস, ঘোড়া এবং হাতির স্থাপত্য। নবনির্মিত ভবন মূলত দু’টি ভাগে বিভক্ত। একটি ভাগে রয়েছে লোকসভা কক্ষ এবং অন্য ভাগে রয়েছে রাজ্যসভা কক্ষ। পুরনো সংসদ ভবনের লোকসভা কক্ষের তুলনায় নতুন ভবনের লোকসভা কক্ষের আয়তন প্রায় দ্বিগুণ। লোকসভা কক্ষ সাজানো হয়েছে ময়ূর থিমে। অন্যদিকে রাজ্যসভার সজ্জা হয়েছে পদ্মের থিমে। আয়তনে যা পুরাতন রাজ্যসভা কক্ষের তুলনায় অন্তত দেড়গুণ। আর সংসদ ভবনের একেবারে মাঝখানে থাকছে ‘সংবিধান কক্ষ’। সেখানে রাখা থাকবে সংবিধানের একটি ডিজিটাল কপি। যেহেতু নবনির্মিত সংসদ ভবন জনতার উদ্দেশে উৎসর্গিত, তাই এখানে আম জনতার জন্যও থাকছে নির্দিষ্ট আসন।
ইকোফ্রেন্ডলি এই নতুন সংসদ ভবনে সব মিলিয়ে রয়েছে ১৭০০ দরজা এবং জানলা। গোটা ভবন তৈরি হয়েছে ভূমিকম্প-রোধক প্রযুক্তিতে। দেশের সংসদ নির্মাণে অবদান রেখেছে কম বেশি সব রাজ্যই। কোথাও ব্যবহৃত হয়েছে মহারাষ্ট্রের কাঠ। কোথাও ব্যবহার করা হয়েছে রাজস্থানের মার্বেল। কোথাও আবার উত্তরপ্রদেশের গালিচায় সেজেছে সংসদ ভবন।
এখানই শেষ নয়। প্রযুক্তিকে সর্বাধিকার দিয়ে নতুন সংসদ ভবনে রাখা হয়েছে বায়োমেট্রিকের ব্যবস্থা। ভোটাভুটি থেকে সংসদের সব কাজকর্ম সরাসারি দেখার সুবিধাও থাকছে এই নতুন ভবনে। সব থেকে বড় কথা, নতুন এই সংসদ ভবন গোটাটাই ‘পেপারলেস’। নতুন সংসদ ভবন আক্ষরিক অর্থেই ‘স্মার্ট’ সংসদ।