৫-এ পা ‘প্রাক্তন’-এর। এত বিপর্যয়ের মধ্যেও তাই মন জুড়ে অদ্ভুত ভাল লাগা! অজানা শিহরণ ছবির স্মৃতি ঘিরে। না চাইতেই ফ্ল্যাশব্যাকে ফিরে আসছে যেন দৃশ্যগুলো। উইনডোজ প্রযোজনা সংস্থার প্রস্তাব, নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অনুরোধ, চিত্রনাট্য শোনা, ফের প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় আর আমি পর্দায়, সৌমিত্র-সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয়-- সব মিলিয়ে বলে না বোঝানোর মতোই স্মৃতির দৌরাত্ম্য। অভিনয় করতে গিয়ে, ‘সুদীপা’ হয়ে উঠতে গিয়ে আমাকেই কি কম ধকল পোহাতে হয়েছে? কম কাটাছেঁড়া আমার মধ্যেও চলেনি।
সে সব ভাবতে বসে সত্যিই গর্ব হচ্ছে। ৫ বছর আগে অভিনয় করতে করতে বুঝেছিলাম, এই ছবি অনেকের জীবন বদলে দেবে। এমন একটা ছবির সঙ্গে জড়িত ছিলাম, যে ছবি আক্ষরিক অর্থেই ‘লোকশিক্ষে’ দিয়েছিল। ‘প্রাক্তন’ দেখতে দেখতে বহু দম্পতি নাকি চোখের জলে ভিজেছেন। কানে এসেছে। বহু জন বাড়ি ফিরে মিটিয়ে নিয়েছেন নিজেদের মধ্যে জমে থাকা রাগ, অসন্তোষ, ভুল বোঝাবুঝি। জেনে ভাল লেগেছে।
একটু একটু আফসোসও হচ্ছে। আজকের দিনে আমার কলকাতায় থাকার কথা। অতিমারি না হলে ঘটা করে উদযাপন হত, নিশ্চিত। সে সব ফেলে সুদূর সিঙ্গাপুরে বসে শুধুই স্মৃতি রোমন্থন! ৫ বছর পরে ছবির কথা ভাবতে ভাবতে বুঝতে পারছি, কেন এত সফল ‘প্রাক্তন’? নন্দিতাদি-শিবু ছবিতে দাম্পত্যের গল্প বলেছেন। যেখানে দাম্পত্য কলহও ছিল। দাম্পত্য ভাঙার ব্যথাও বাদ যায়নি তার থেকে। এই গল্প কমবেশি সব মেয়েরই জীবনের গল্প। হয়তো আমারও। তাই ৫ বছর পরেও আমাদের ‘প্রাক্তন’ সবার কাছে ভীষণ বর্তমান!
সৌমিত্রকাকুর সেই সংলাপ মনে আছে আপনাদের? আমার আর বুম্বাদার যে দৃশ্য কিংবদন্তি অভিনেতা তাঁর গলার স্বর, সংলাপ দিয়ে জীবন্ত করে গিয়েছেন--- ‘কিছুই কি নেই আর বাকি?’ সে দিন অভিনয় করতে করতে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল। আজও দৃশ্যটা আমায় তাড়িয়ে নিয়ে ফেরে। সবাই জানেন, এই ছবির হাত ধরেই ১৪ বছর পরে আমি আর বুম্বাদা মানে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ফের জুটি হয়ে পর্দায় ফিরেছিলাম। আপনারা, দর্শকেরা চেয়েছিলেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল। সম্ভব হয়েছিল চিত্রনাট্যের দাবিতে। সম্ভব হয়েছিল পরিচালক জুটির আন্তরিক অনুরোধে। ভাগ্যিস উইনডোজের ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম! তার জন্যেই এই ‘ইতিহাস’ জন্ম নিল।