টানা ৪০ দিন যন্তর মন্তরের ধর্নামঞ্চে কাটিয়েছেন। রোদ-জল উপেক্ষা করে ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছেন। সারা দেশ দেখেছিল, কী ভাবে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের দিনে রাজধানীর রাস্তা থেকে তাঁকে এবং তাঁর সাথীদের টেনেহিঁচড়ে প্রিজ়ন ভ্যানে তুলেছিল দিল্লি পুলিশ। অপমানে কেঁদে নিজের সব পদক ভাসিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সে বার সমাজমাধ্যমে জুটেছিল ‘দেশদ্রোহী’র তকমাও। বিনেশ দমেননি। গলা ফাটিয়ে গিয়েছিলেন কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত, সর্বভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের তৎকালীন প্রধান ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের গ্রেফতারির দাবিতে। সেই বিনেশই যখন মাত্র ১০০ গ্রাম ওজনের জন্য প্যারিস অলিম্পিক্সের ফাইনাল থেকে ছিটকে গেলেন, গোটা দেশের চোখে জল। শনিবারই ২৯ বছর বয়সী তরুণী কুস্তিগির ফিরলেন প্যারিস থেকে। দিল্লি এয়ারপোর্ট থেকে নিজের গ্রাম বলালি পৌঁছতে সময় লাগল পাক্কা ১৩ ঘণ্টা। গোটা রাস্তাতেই সমর্থকদের আবেগে ভেসে গেলেন অলিম্পিক্স ফেরত অ্যাথলিট। প্যারিসে স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার পর অভিমানী বিনেশ কুস্তিকে বিদায় জানানোর কথা বলেছিলেন। দেশে ফিরে বিনেশ বলছেন, “হয়তো কুস্তিতে ফিরব।” আসলে বিনেশেরা যে হারতে শেখেননি। সমাজের কটাক্ষ, মহাপরাক্রমশালী রাষ্ট্রের চোখরাঙানি, বা কঠিন প্রতিপক্ষ— মল্লভূমে কাউকেই ভয় পান না বিনেশ। তাঁর রক্তে যে ভয় নেই, আছে শুধু দাঁতে-দাঁত চিপে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ধাতু। তাই সমাজে, বাড়িতে, কর্মক্ষেত্রে রোজ হেনস্থা-নির্যাতনের শিকার হওয়া এ দেশের লক্ষ লক্ষ মেয়ের প্রতিবাদের মুখ হয়ে ওঠেন বিনেশেরাই।