প্রতিবেদন: প্রিয়ঙ্কর, চিত্রগ্রহণ ও সম্পাদনা: সুব্রত
পোড়া বাড়ির ছবি তোলার জন্য গাড়ি থেকে নামতেই রে রে করে ছুটে এলেন মণিপুর পুলিশের কম্যান্ডো। ভাঙা হিন্দি ও মণিপুরি মিশিয়ে যা বললেন, তার মর্মার্থ, এখানে ছবি তুলতে গেলে উপরমহলের অনুমতি লাগবে। ছুট লাগানো গেল ইম্ফল পূর্বের এসপি-র অফিসে। সেখান থেকে অনুমতি আদায় করে আবার ইম্ফল শহরের নিউ চেকন এলাকায়। মূলত মেইতেই সম্প্রদায়ের বাস হলেও, ইম্ফলের বেশ কিছু এলাকায় কুকি পাড়া ছিল। ৩ মে ও তার পরবর্তী হিংসায় এলাকাছাড়া হয়েছেন সে সব কুকি পরিবার। নিউ চেকন সে রকমই এক পাড়া, এখন ধু-ধু। একটি বাড়িও আর আস্ত নেই, চারিদিকে শুধুই ভাঙাচোরা অবশেষ আর দগ্ধ স্মৃতি। রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি কুকুর, হয়তো কারোর পোষ্য ছিল, উন্মত্ত জনতার আক্রমণের মুখে প্রাণ হাতে করে পালানোর সময় আর কুকুরটিকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়নি। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া বাড়ির সামনে ইতিউতি ঘোরা আর মালিকের জন্য অপেক্ষা করাই এখন তার রুটিন।
কুকি অধ্যুষিত এলাকায় মেইতেই গ্রামগুলির ছবি খুব একটা আলাদা নয়। সেখানেও হাওয়ায় ভেসে বেড়ায় ছাই। এক কালে প্রতিবেশী ছিলেন যাঁরা, তাঁদেরই ভয়ে পালিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে ত্রাণ শিবিরে। গোটা মণিপুর জুড়ে এখন এ রকম অজস্র ‘রিলিফ ক্যাম্প’। কত জন ঠিক ঘরছাড়া হয়েছেন এখনও পর্যন্ত তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
নিউ চেকনের কুকি বসতি ছেড়ে বেরোতে বেরোতে প্রায় সন্ধ্যা নেমে আসছিল। পুড়ে যাওয়া সারি সারি কুকি বাড়ির উল্টো দিকেই খেলার মাঠ। সেখানে তখন ফুটবল খেলা চলছে। পাড়ায় ঢোকার পর পরই যে কুকুরটির সাক্ষাৎ মিলেছিল, সেটি তখনও ঠায় বসে রয়েছে রাস্তায়, সামনের পোড়া বাড়ির থেকে ওর চোখ সরছে না কিছুতেই।