প্রতিবেদন: প্রচেতা, সম্পাদনা: সৈকত
বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুন্ডুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় উত্তাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, বুধবার রাতে মেন হস্টেলের ছাদ থেকে পড়ে যায় সে। হস্টেলের অন্য পড়ুয়াদের দাবি, বুধবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ তাঁরা ভারী কিছু পড়ার শব্দ পান। তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে নিকটবর্তী এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়ে যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
নদিয়ার বগুলা থেকে যাদবপুরে এসেছিলেন স্বপ্নদীপ, চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে। বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও বাংলা সাহিত্যের ওপর অসম্ভব টান থেকেই যাদবপুরে পড়তে আসা। তাই নদিয়ার একটি কলেজে ফিজিক্স ছেড়ে বাংলা পড়তে আসে সে। এমনটাই জানিয়েছেন স্বপ্নদীপের মামা অরূপ কুন্ডু। সোমবারই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে স্বপ্নদীপ। মঙ্গলবারই ছিল বাংলা বিভাগের নবীনবরণ। স্বপ্নদীপের পরিবার জানায়, হস্টেলে ঘর পাননি তিনি। এক আবাসিকের সঙ্গেই থাকছিলেন। বুধবার প্রথম ক্লাস সেরে স্বপ্নদীপ উচ্ছ্বসিত ছিলেন বলে জানাচ্ছে তাঁর পরিবার। এর পরেই ছন্দপতন। রাতে দু’তিন বার মাকে ফোন করেন স্বপ্নদীপ। জানান, তাঁর ভাল লাগছে না, বাড়ি যেতে চান। কিন্তু কী কারণে ভাল লাগছে না তা আর বলা হয়ে ওঠেনি। বলেছিলেন, বাড়ি ফিরে সব বলবেন। কিন্তু বাড়ি আর ফেরা হল না। রাতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাত দেড়টা বাড়িতে ফোন করে জানানো হয় যে স্বপ্নদীপ পড়ে গিয়েছেন। স্বপ্নদীপের পরিবার জানায়, ওই রাতেই তাঁর বাবা ও মামা রওনা দেন।
যে বেসরকারি হাসপাতালে স্বপ্নদীপকে ভর্তি করা হয়েছিল, সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান স্বপ্নদীপের মস্তিষ্ক কাজ করছিল না, ভেঙে গিয়েছিল মেরুদণ্ড। চিকিৎসা চলাকালীন তিন বার হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। হার্ট পাম্প করেও বাঁচানো যায়নি তাঁকে। স্বপ্নদীপের মামা অরূপ কুন্ডু ভাগ্নের রহস্যমৃত্যুর নেপথ্যে ‘র্যাগিং’-এর অভিযোগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, বহু প্রাক্তনরা মেন হস্টেলেই থাকেন। আর তাঁরাই নিজেদের ‘ক্ষমতা’ বজায় রাখতে র্যাগিং করেন। ‘র্যাগিং’-র ফল না দুর্ঘটনা? ময়নাতদন্তের ফলের দিকে তাকিয়ে সব মহল।