শহরের মুখরতা থেকে দু’এক দিনের বিরতি নিতে রূপনারায়ণের কূলে অবস্থিত দেউলটি হতে পারে আদর্শ জায়গা। ছবি: সংগৃহীত
শীতের রোদ গায়ে লাগতেই ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির মন নেচে ওঠে পিকনিকের জন্য। বছরের এই শেষ দিকে বেশ কয়েকটি ছুটিও মিলে যায়। শীতে বাড়ি বসে সেই ছুটি কাটানোর কোনও মানে হয় না। তার চেয়ে পরিবারের সকলকে নিয়ে কাছেপিঠে কোথাও বেরিয়ে পড়লেই হয়। কোথায় যাবেন, সেটা ঠিক করতেই সবচেয়ে বেশি সময় ব্যায় হয়। তবে শান্ত, নিরিবিল পরিবেশ পছন্দ করলে এই শীতে ঘুরে আসতেই পারেন কলকাতার অদূরে দেউলটি থেকে।
শহরের মুখরতা থেকে দু’এক দিনের বিরতি নিতে রূপনারায়ণের কূলে অবস্থিত দেউলটি হতে পারে আদর্শ জায়গা। দেউলটির সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের এক চিরন্তন সম্পর্ক রয়েছে। এখানকার পানিত্রাসের সামতাবেড় গ্রামে কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি। জীবনের শেষ কয়েক বছর তিনি এই গ্রামেই কাটিয়েছিলেন। দেউলটি গেলে শরৎচন্দ্রের বাড়ি দেখে আসতে ভুলবেন না। দেউলটি স্টেশন থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে। বছর কয়েক আগে রাজ্য সরকার এই বাড়িটির সংস্কার করেছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এখন এই নিবাস পর্যটকের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। কথিত আছে এই বাড়িতে বসেই শেষের দিকের বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় উপন্যাস লেখেন। কাঠের তৈরি আসবাবপত্রে সাজানো তাঁর বাড়ি। লেখার টেবিল থেকে শরৎচন্দ্রের ব্যবহৃত ঘড়ি— সবই সযত্নে রক্ষিত রয়েছে।এই বাড়ি থেকে দূরেই রূপনারায়ণ। বর্ষায় রূপনারায়ণের রূপ ভয়ঙ্কর হয়। কিন্তু শীতের রূপনারায়ণ একেবারে শান্ত, তবে স্রোতস্বিনী। ভরা শীতেও এই নদীর হাওয়া উদাস করে দেবে আপনার মন।
পাখি দেখতে যাঁরা ভালবাসেন, দেউলিটি তাঁদের ফেরাবে না। রাস্তায় চলার ফাঁকেই হয়তো চোখে পড়বে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি। তাঁদের রূপ, রঙের সমাহার মন কেড়ে নেবে। কলকাতা থেকে মাত্র ৬৩ কিলোমিটার দূরে গ্রামবাংলার এই অপরূপ দৃশ্য মনে গেঁথে যাবে সারা জীবনের জন্য। যেন গোটাটাই একটা ছবি। কোনও অচেনা শিল্পী রং আর তুলির আঁচড় কেটে যত্নে ক্যানভাস সাজিয়েছেন।
এখানে রয়েছে রাধা ও মদনগোপাল মন্দির, এই মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার কাজ মুগ্ধ করে। অনেকে মিলে গেলে শুধু ঘুরে চলে আসার চেয়ে, বনভোজন করতে পারেন। চড়ুইভাতির আসর বসাতে পারেন রূপনারায়ণের কূলে। মাতাল হাওয়া আর নদীর পাড়ের চড়া রোদ বনভোজনের বাড়তি সংযোজন।
কী ভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে লোকাল ট্রেনে করে পৌঁছতে হবে দেউলটি। শরৎচন্দ্রের গ্রামে যেতে দেউলটি স্টেশন থেকে অটো ধরতে হবে। এ ছাড়া সড়কপথেও গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। পথে কোথাও না দা়ঁড়ালে দেড় থেকে দু’ ঘণ্টার পথ।
কোথায় থাকবেন? সকালে গিয়ে রাতে ফিরে আসতে পারেন। তবে হাতে সময় থাকলে থাকতেও পারেন। রিসর্ট আছে এখানে বেশ কয়েকটি। যাওয়ার আগে সেখানে বুকিং করে গেলে অসুবিধা হবে না।