সাধ্যের মধ্যেই প্রিয় মানুষটির সঙ্গে ক’টা দিন কাটাতে চান এই দ্বীপে? ছবি- সংগৃহীত
আগে বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে নানা জায়গায় ঘুরতে গেলেও বিয়ের পর দু’টিতে জুটিতে প্রথম কোথাও ঘুরতে যাওয়ার রোমাঞ্চই আলাদা। তবে ইদানীং মধুচন্দ্রিমায় খুব চেনা বা জনবহুল স্থানে ঘুরতে যেতে চাইছে না রোমাঞ্চপ্রিয় তরুণ প্রজন্ম। বাঙালির চিরকালের শ্রেষ্ঠ হানিমুন ডেস্টিনেশনগুলির মধ্যে দিঘা-পুরী-দার্জিলিং অর্থাৎ ‘দিপুদা’ জনপ্রিয় হলেও নির্জনতার অভাব রয়েছে সেখানে। তাই নির্জন কোনও দ্বীপের খোঁজে মানুষ এখন বিদেশেও পাড়ি দিচ্ছেন। কিন্তু তার খরচ তো অনেকেরই হাতের নাগালের বাইরে। সাধ্যের মধ্যেই প্রিয় মানুষটির সঙ্গে ক’টা দিন কাটাতে আপনিও কি এমন কোনও দ্বীপের সন্ধানে রয়েছেন? তবে দেশেই রয়েছে হ্যাভলক দ্বীপ।
চারপাশে যে দিকেই চোখ পড়বে, ছোট বড় নানা মাপের সবুজ দ্বীপ৷ নীল-সবুজের চোখজুড়ানো জলছবি যেন। বঙ্গোপসাগরের নীল জলের বুকে হারিয়ে যাওয়ার আদর্শ ঠিকানা এই হ্যাভলক দ্বীপ। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বড় দ্বীপ এটি৷ ব্রিটিশ জেনারেল স্যার হেনরি হ্যাভলক-এর নামানুসারেই এই দ্বীপের নাম দেওয়া হয় ‘হ্যাভলক’৷ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় ‘দেশদ্রোহী’দের ‘কালাপানি’ পার করে পাঠানো হত এই দ্বীপেই। বর্তমানে এই আইল্যান্ডের জনসংখ্যা সর্বসাকুল্যে সাড়ে ৬ হাজারের মতো। সব চেয়ে মজার কথা হল এর মধ্যে অধিকাংশই বাঙালি৷ হ্যাভলকের মূল আকর্ষণ হল রাধানগর বিচ। এ ছাড়াও রয়েছে নীল দ্বীপ ও জলিবয়।
নাম না জানা রঙিন সব মাছ এবং প্রবাল প্রাচীর দেখার জন্য প্রায় সারা বছরই পর্যটকরা ভিড় জমান এখানে। ছবি- সংগৃহীত
কী কী দেখবেন?
হ্যাভলক জেটির থেকেই ‘এলিফ্যান্ট’ বিচের জন্য ছোট লঞ্চ ছাড়ে। ‘স্নোরকেলিং’এর জন্য বিখ্যাত এই জায়গা। নাম না জানা রঙিন সব মাছ এবং প্রবাল প্রাচীর দেখার জন্য প্রায় সারা বছরই পর্যটকরা ভিড় জমান এখানে। এ ছাড়াও যত ধরনের জলকেলি হয়, তার সব রকম ব্যবস্থাই আছে এখানে। ভোরবেলা এখান থেকে সূর্যোদয় দেখার অভিজ্ঞতাই আলাদা। এখান থেকেই আবার নৌকা করে যেতে পারেন নীল দ্বীপে। এখানে রয়েছে আরও তিনটি বিচ। ভরতপুর, সিতাপুর এবং লক্ষ্মণপুর বিচ। লক্ষ্মণপুর বিচের প্রাকৃতিক ব্রিজটি দেখার মতো। ভরতপুরে গিয়ে ‘গ্লাসবটম বোট রাইড’ করতে পারেন। নৌকা চড়তে চড়তেই সমুদ্রের তলার সব প্রাণী এসে ধরা দেবে পায়ের তলায়।
বঙ্গোপসাগরের নীল জলের বুকে, হারিয়ে যাওয়ার আদর্শ ঠিকানা এই হ্যাভলক দ্বীপ। ছবি- সংগৃহীত
কোথায় থাকবেন?
গোটা আন্দামান জুড়ে থাকার জায়গার অভাব নেই। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন মানের এবং দামের হোটেল রয়েছে এখানে। কলকাতা থেকে বুকিং করে আসাই ভাল। কলকাতায় আন্দামান-নিকোবর পর্যটন দপ্তরের সরকারি একটি কার্যালয় রয়েছে। চাইলে সেখানে গিয়ে অথবা অনলাইনে বুকিং করতে পারেন।
কলকাতা অফিসের ঠিকানা:
আন্দামান-নিকোবর পর্যটন, ৭ ডি পি ব্লক, সেক্টর-৫, সল্টলেক, কলকাতা-৭০০০৯১,
ওয়েবসাইট: www.andamans.gov.in
কী ভাবে যাবেন?
ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে আন্দামান যেতে পারেন জলপথ ও আকাশপথে। কলকাতা ও চেন্নাই থেকে নিয়মিত জাহাজও ছাড়ে। আকাশপথে যেতে ঘণ্টাদুয়েক লাগলেও, জাহাজে সময় লাগে চার দিন। জাহাজের টিকিট কাটতে গেলে, নজর রাখতে হবে সংবাদপত্রের পাতায়। এক মাস আগে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেয় ‘দ্য শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া’।
ঠিকানা: ১৩ স্ট্যান্ড রোড, কলকাতা-৭০০০০১।
পোর্টব্লেয়ার-এর ফিনিক্স বে জেটিঘাট থেকে ছাড়ে হ্যাভলক আইল্যান্ডে যাওয়ার সরকারি ফেরি৷ প্রাইভেট কিছু ক্রুজ়ও রয়েছে৷ ইচ্ছে করলে হেলিকপ্টার সার্ভিসও নিতে পারেন৷
যদি জাহাজে যান, সি সিকনেস এড়াতে বমির ওষুধ অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন৷ শীতে হালকা উলেন পোশাকই যথেষ্ট৷ টুপি, ছাতা, সানগ্লাস সঙ্গে থাকা বাঞ্ছনীয়৷