সেই চেনা প্রিন্সেপ ঘাট, আরও একবার ঘুরে আসতেই পারেন। ছবি: ফ্রিপিক।
কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। দিনে বেরোলেও সেই গরম আর নেই। বরং উত্তুরে হাওয়ার দাপটে, রোদ মেখে অনেকেরই মন চাইছে ঘুরে বেড়াতে। তা হলে দেরি না করে বেরিয়ে পড়ুন। এই বেলায় চেনা কলকাতার আনাচকানাচ আরও এক বার ঘুরে নিন। আলিপুর চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া, জাদুঘরের ভিড় এড়াতে চাইলে বেছে নিতে পারেন এই শহরেরই অন্য কয়েকটি জায়গা।
হরিণালয়: আলিপুর চিড়িয়াখানা ঘোরা হয়ে গিয়েছে। এ বছরের শীতে ঘুরে আসুন নিউটাউন ইকো পার্কের মিনি জ়ু থেকে। নামে ‘হরিণালয়’ হলেও, এখানে রয়েছে কুমির, জ়েব্রা, জিরাফ, জলহস্তী থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি পশু-পক্ষী। এখানে এমন অনেক বন্যপ্রাণীর দেখা মিলবে, যেগুলি আলিপুর চিড়িয়াখানায় নেই। ১২.৫ হেক্টর জুড়ে ছড়ানো জায়গাটিতে প্রথমেই নজর কাড়বে এখানকার সুসজ্জিত আবহ। ঝকঝকে রাস্তা, ফুলের বাহার আর রয়েছে মানানসই ক্যাফে। পরবর্তী কালে এখানে বাঘ, সিংহ, চিতাবাঘও আনার পরিকল্পনা রয়েছে। ঘুরে নিতে পারেন ইকো পার্কের সপ্তম আশ্চর্য, চাপতে পারেন টয় ট্রেনেও।
সময়: সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে হরিণালয়। বৃহস্পতিবার বন্ধ। ইকো পার্কের ৬ নম্বর গেটে রয়েছে হরিণালয়টি।
মার্বেল প্যালেস: কলকাতার বুকে অসাধারণ স্থাপত্যের নিদর্শন মিলবে মার্বেল প্যালেসে গেলে। জোড়াসাঁকোর কাছে মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটে রয়েছে এই প্রাসাদ। ১৮৩৫ সালে রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক এই প্রাসাদটি তৈরি করেন। শিল্পরসিক রাজেন মল্লিকের আর্ট গ্যালারিও আছে এখানে। দেওয়ালে হাডসনের দেড়শো বছর আগের তৈলচিত্র মুগ্ধ করবে। মার্বেল প্যালেসের সেরা আকর্ষণ হল এখানকার চিড়িয়াখানা ও পক্ষীশালা। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও হরিণের দেখা মিলবে সেখানে। প্রাসাদোপম এই বাড়ির নীচের তলায় রয়েছে সংগ্রহশালা। বিশাল বিশাল ফুলদানি থেকে ঝাড়লণ্ঠন, মূর্তি সংরক্ষিত রয়েছে।
কলকাতার বুকেই রয়েছে মার্বেল প্যালেস। এখানকার শান্ত পরিবেশ মন ভাল করে দেবে। ছবি: সংগৃহীত।
সময়: সোম এবং বৃহস্পতিবার ছাড়া সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টে পর্যন্ত এটি পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে।
এয়ারক্র্যাফট মিউজ়িয়াম: কলকাতার নিউ টাউনে রয়েছে এয়ারক্র্যাফট মিউজ়িয়াম। দেশে এই ধরনের সংগ্রহশালা রয়েছে দু’টি। প্রথমটি বিশাখাপত্তনমে, দ্বিতীয়টি কলকাতায়। এখানে রাখা হয়েছে ২৯ বছরের পুরনো অবসরপ্রাপ্ত যুদ্ধবিমান, টি-ইউ ১৪২। দৈর্ঘ্যে ৫৩ মিটার এবং প্রস্থে ৫০ মিটার বিমানটির ওজন ১৮৫ টন। ভারতীয় নৌসেনার তত্ত্বাবধানে সেটি তামিলনাড়ু থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। সংগ্রহশালাটি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব রয়েছে হিডকো।
এয়ারক্র্যাফট মিউজ়িয়ামে রাখা যুদ্ধবিমান। ছবি: সংগৃহীত।
সময়: সোমবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন সকাল সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে। টিকিট মাথাপিছু ৩০ টাকা। স্কুলপড়ুয়াদের পরিচয়পত্র দেখালে টিকিট দরকার হয় না।
ফোর্ট উইলিয়াম: ব্রিটিশ রাজত্বে কলকাতার বুকে গড়ে উঠেছিল ফোর্ট উইলিয়াম। রাজা তৃতীয় উইলিয়ামের নামে এই দুর্গের নামকরণ। বর্তমানে এই স্থান ভারতীয় সেনা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। ফোর্ট উইলিয়ামের পাশ দিয়ে বহু বার গেলেও কখনও তা ঘুরে দেখা হয়নি? এই বছর পরিকল্পনা করে ফেলুন। তবে চাইলেই ফোর্ট উইলিয়াম ঘুরে দেখা যায় না। আগাম অনুমতি প্রয়োজন হয়। ছবি তোলার ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা থাকে। শহরের ভিতর আর একটি শহর দেখতে কলকাতার হেরিটেজ ওয়াকের সঙ্গী হতে হবে। ইমেল করে নির্ধারিত অর্থ, তথ্য দিয়ে বুকিং করে করতে হবে। একসঙ্গে ১৫-১৬ জন হলে তবেই স্লট বুকিং হয়। নিয়ে যেতে হয় পরিচয়পত্র।
প্রিন্সেপ ঘাট: পড়ন্ত বিকালে নৌকায় ভেসে দ্বিতীয় হুগলি সেতু, গঙ্গার বুকে সূর্যাস্তের শোভা দেখতে চাইলে একটা দিন চলে যান প্রিন্সেপ ঘাট। সন্ধ্যার পর সেই ঘাটের আমেজ একেবারে ভিন্ন। ভিড়ভাট্টা যতই থাক, গঙ্গার পারে বন্ধুবান্ধব মিলে আড্ডা দিতে মন্দ লাগবে না। তার সঙ্গেই পেয়ে যাবেন রকমারি খাবার। এই স্থান ১৮৪১ সালে কলকাতায় হুগলি নদীর তীরে, ব্রিটিশ শাসনকাল পণ্ডিত জেমস প্রিন্সেপের স্মরণে নির্মিত হয়েছিল। এখানে সাদা সৌধটির সামনে অসংখ্য বাংলা ছবির শুটিং হয়েছে।