Travel

বিবিধের মাঝে পুষ্করে মিলন

পুষ্করের রঙিন মেলা দেখতে ভিড় জমান দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা অজমের থেকে বাসে করে পুষ্কর এক ঘণ্টার পথ। মেলার ক’দিন দু’চাকা ছাড়া কোনও যান ওই চত্বরে চলে না।

Advertisement

প্রীতম দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২০ ০০:০১
Share:

মেলাপ্রাঙ্গণ: রঙিন সাজে নৃত্যশিল্পী

বিসর্জনের পরের দিন শহরের ফাঁকা দুর্গামণ্ডপ দেখলে ভিতরটা কেমন হুহু করে! কে বলবে, চার দিন ধরে কত হইহুল্লোড় ছিল... পুষ্করের মেলা যে দিন শেষ হল, ঠিক তার পরের দিন ওই রকমই অনুভূতি হচ্ছিল। কোথাও ভিড় নেই, কোলাহল নেই... তবে দশ দিন ধরে যা ছিল, তার চিহ্ন ধরে রেখেছিল মেলার কাছে পড়ে থাকা হাজারো জুতো।

Advertisement

জয়পুর আমার আগেই ঘোরা। পুষ্করের মেলার কথাও জানতাম। তবে ফোটোগ্রাফির সূত্রেই পুষ্করের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। বিদেশের বিখ্যাত আলোকচিত্রীরা এই মেলার ছবি তোলেন। গত দশ বছরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তা ভাইরাল। ক্যামেরা আর ক্যামেরাতুতো তিন বন্ধুর সঙ্গে তাই প্ল্যান সেরে ফেললাম। কার্তিক পূর্ণিমার দশ দিন আগে শুরু হয় পুষ্করের এই মেলা। কার্তিক পূর্ণিমার দিন, মানে মেলার শেষ দিনে ভিড় উপচে পড়ে। গত বছর আমরা ছিলাম মেলার শেষ চার দিন।

অজমের থেকে বাসে করে পুষ্কর এক ঘণ্টার পথ। মেলার ক’দিন দু’চাকা ছাড়া কোনও যান ওই চত্বরে চলে না। ভোররাতে যখন পুষ্করে পৌঁছলাম, বাসস্ট্যান্ড থেকেই চোখ চলে যাচ্ছিল মেলার নাগরদোলার দিকে। দশ দিন ধরে ঘুমোয় না পুষ্কর। দিন-রাত ধরে চলে বিকিকিনি, মানুষের আনাগোনা। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই হোটেলে ব্যাগ রেখে ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়লাম। হোটেল থেকে হেঁটে পৌঁছলাম মেলাপ্রাঙ্গণে।

Advertisement

পুষ্করের মেলার খ্যাতি উট, ঘোড়া, গরুর বেচাকেনার জন্য। দেশের অন্যতম বড় ‘ক্যাটল ফেয়ার’ এটি। আমরা প্রথম যে দিন গিয়েছিলাম, সে দিন উটের সংখ্যা চোখে একটু কমই লাগছিল। স্থানীয়দের কাছে জানলাম, কুড়ি বছরে সবচেয়ে কম উট এসেছিল গত বারের মেলায়। তার কারণ, উটের ব্যবসায় এখন আর লাভ নেই। কৃষিকাজের ক্ষেত্রে উটের পরিপূরক এসে গিয়েছে অনেক দিন। এ ছাড়া সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্যের বাইরে উট বিক্রি করা এবং উট হত্যা করা দুই-ই নিষিদ্ধ। তাই অনেকেই উট প্রতিপালনে আগ্রহ হারিয়েছেন।

যাত্রিবাহী: সারি সারি উটের গাড়ি

মেলার এক দিকে যদি উটের পশরা, অন্য দিকে বাসনপত্র, জামাকাপড়ের সম্ভার। এ ছাড়া নানা ধরনের রাইড তো রয়েছেই। আর্থিক সঙ্গতি যেমনই হোক, ওখানকার স্থানীয় মানুষেরা মেলা থেকে লাঠি কিনবেনই।

পরের দিন গিয়েছিলাম সাবিত্রী মন্দির দর্শনে। কয়েক হাজার সিঁড়ি ভেঙে যেতে হয় ওই মন্দিরে। আমার অবশ্য পুণ্য অর্জনের কোনও ইচ্ছে ছিল না। মেলার টপভিউ ছবি নেওয়ার জন্যই যাওয়া। উঠতে-নামতে বেশ কষ্টও হয়েছিল। তবে রোপওয়ে করে মন্দির দর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে ওখানে।

অস্তরাগের ছোঁয়া: পুষ্কর হ্রদের মাঝে মন্দির

কার্তিক পূর্ণিমার দিনে মেলায় লোকে লোকারণ্য। ক্যামেরা বার করে কিছু মুহূর্ত যে তুলব, তার সুযোগই পাচ্ছিলাম না। ওই দিন পুষ্কর হ্রদে স্নান করে স্থানীয়দের পুণ্যার্জন গঙ্গাস্নানের শামিল। পরে তাঁরা যান ব্রহ্মা মন্দির দর্শনে। দেশের একমাত্র ব্রহ্মা মন্দির এটি। কথিত, তাঁর পদ্ম দিয়ে এক অসুরকে বধ করেছিলেন ব্রহ্মা। মর্ত্যে সেই পদ্মের পাপড়ি এসে পড়েছিল পুষ্কর হ্রদে।

দশ দিন ধরেই পুষ্কর স্টেডিয়ামে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে। শেষ দিনে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হয়। উট সাজানোর প্রতিযোগিতা, সেরা উট, সেরা ঘোড়া, সবচেয়ে লম্বা গোঁফ, জলভরা কলসি নিয়ে হাঁটা... প্রতিযোগিতার শেষ নেই। জলভরা কলসি নিয়ে হাঁটায় স্থানীয়রাই জিতেছিলেন। আবার বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে দড়ি ধরে টানাটানিতে স্থানীয়রা ক্রমাগত দল ভারী করছিলেন। তাই বিদেশিরা জিততে জিততেও হেরে গেলেন! বিদেশি পর্যটকদের ভিড় এই মেলা জমজমাট হওয়ার আরও একটি কারণ।

চারটি দিন মেলা ঘিরেই কেটে গেল। ছবিশিকারি চোখ অবশ্য আশপাশেও অন্য কিছু খুঁজেছিল। তবে মেলার বহুরূপী, স্থানীয় পোশাক পরা নৃত্যশিল্পী, দূর দূরান্ত থেকে আসা গ্রাম্যরাই বেশি জায়গা নিয়ে নিলেন ক্যামেরার মেমরি কার্ডে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement