কাঁথির অদূরে গ্রামের কিনারে রয়েছে এক অল্পচেনা সমুদ্র সৈকত। একদিন সময় থাকলেই ঘুরে আসতে পারেন সেখানে। ছবি: সংগৃহীত।
দিঘা, মন্দারমণি, বগুরান জলপাই, লাল কাঁকড়া বিচ নয়। নতুন একটি সমুদ্রসৈকত রয়েছে কাঁথির অদূরেই। ঝাউবনের ছায়া, ম্যানগ্রোভের জঙ্গল, পুকুর, মেঠো পথ পেরিয়ে সেই সৈকতে পৌঁছলে মন ভাল হয়ে যাবে নিমেষেই। এখানে আস্তানা অগণিত লাল কাঁকড়ার। ছোট ছোট গর্তে ঘাপটি মেরে থাকে তারা। চরে বেড়ায় সৈকতে। আর পায়ের আনাগোনা টের পেলে নিমেষে সেঁধিয়ে যায় তাদের গর্তে।
কাঁথি বাস স্ট্যান্ড থেকে খানিক দূরে দরিয়াপুর গ্রামেই রয়েছে তার ঠিকানা। সৈকটির নাম কানাই চট্ট। এখনও সে ভাবে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে জনপ্রিয় হয়নি জায়গাটি। বরং ভ্রমণপিপাসু কিছু মানুষ নিরালা প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে যেতে শুরু করেছেন সেখানে।
থাকার জায়গা বলতে একটি মাত্র ‘বিচ ক্যাম্প’। গাছপালা ঘেরা উন্মু্ক্ত পরিবেশে তাবুঁতে থাকার ব্যবস্থা। তবে গুঁড়ি মেরে ঢুকতে হবে না তাতে। দিব্যি দাঁড়ানো যায়। খাট-বিছানা সবই আছে। আতিশয্য না থাকলেও প্রয়োজনের সবটুকুই মিলবে এখানে। বাড়তি পাওনা, গাছের ছায়া, উন্মুক্ত পরিবেশ জমিয়ে মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি খাওয়া।
সৈকতের কাছাকাছি রাত্রিবাস করতে গেলে এ ছাড়া গতি নেই। সেখান থেকে মেঠো পথে মিনিট পাঁচেক হেঁটে পৌছঁনো যায় কানাই চট্টের কাছে।সবুজ এখনও এখানে শেষ হয়ে যায়নি। লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা সৈকতের কাছে মাথা তোলেনি নামী-দামি রিসর্ট। সৈকতে গুমটি তৈরি করে খাবারের দোকান তৈরি হয়নি এখনও।
এখানে এলে দেখা যায় ট্রলারের আনাগোনা। পড়ন্ত বিকেল চুপ করে বসে প্রিয় মানুষটির সঙ্গে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়া যায় সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করে।
অলস দিনযাপন ছাড়া এখানে অবশ্য তেমন কিছুই করার নেই। তবে চাইলে একটা অটো ভাড়া করে চলে যেতে পারেন দরিয়াপুর বাতিঘরে। টিকিট কেটে ঢুকতে হয় ভিতরে। এখান থেকে চলে যেতে পারেন পেটুয়াঘাট। সেখান থেকে ভেসেলে রসুলপুর নদী পেরিয়ে পৌঁছনো যায় হিজলি শরিফে। পেটুয়াঘাটে দেখা মিলবে সারিবদ্ধ অসংখ্য ট্রলারের। হিজলি শরিফে গিয়ে সেখানেও আশপাশ ঘুরে নিতে পারেন। চাইলে নৌ-বিহারও করতে পারেন বেশ কিছু ক্ষণ। চড়া রোদ না থাকলে নৌকো করে এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও মনে রাখার মতোই হবে। আর কোথাও ঘুরতে না চাইলে কানাই চট্টে এক বা দু’টি দিন আড্ডা, গল্প করে কাঁকড়ার ঝাল খেয়ে বিশ্রামও নিতে পারেন।
কী ভাবে যাবেন?
ট্রেনে এলে কাঁথি স্টেশনে নেমে অটো ভাড়া করে পৌঁছতে হবে কানাই চট্ট সৈকতে। সড়কপথে এলে কলকাতা থেকে দিঘাগামী বাস ধরে নামতে হবে কাঁথির রূপশ্রী বাইপাস। সেখান থেকে অটো ভাড়া করে কাঁথি সেন্ট্রাল বাস স্ট্যান্ড আসতে হবে।এ ছাড়া রপশ্রী বাইপাস থেকে পেটুয়াঘাটের ট্রেকার পাওয়া যায়।তাতে চেপেই আসতে হবে দরিয়াপুর। সেখান থেকে টোটো করে কানাই চট্ট সমুদ্র সৈকত। গাড়িতেও কলকাতা থেকে সরাসরি এই পথ ধরে আসতে পারেন সৈকতে।
কোথায় থাকবেন?
সৈকতের আশপাশে থাকার জন্য একটি বেসরকারি ক্যাম্প রয়েছে। যদি থাকতে না চান, তা হলে সকালে এসে বিকালে চলে যেতে পারেন। আবার দিঘা বা মন্দারমণি গাড়িতে গেলে পথে এই সৈকতটি ঢুঁ মেরেও যেতে পারেন।