ফেরারি মন

Advertisement

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২০ ০০:১৬
Share:

কথায় আছে, ‘ইটস দ্য জার্নি, নট দ্য ডেস্টিনেশন।’ একটু রিওয়াইন্ড করলেই বোঝা যায় কথার সারবত্তা। আগে কোথাও বেড়াতে গেলে তার মেজাজ তৈরি করে দিত ট্রেনজার্নি। ফোরজি স্পিডের যুগে বদলে গিয়েছে সেই জার্নির ছবি। জনপ্রিয় হয়েছে রোড ট্রিপ। বাইকে বা চার চাকায়। আসমুদ্রহিমাচল ঘোরা হয়ে যাচ্ছে রাস্তা ধরে। তবে ইচ্ছে হলেই হুট করে রোড ট্রিপে বেরিয়ে পড়া যাবে না। তার জন্য চাই ঠিক প্রস্তুতি এবং পর্যাপ্ত পরিকল্পনা।

Advertisement

প্রযুক্তি প্রথম: বাইকের টুল বক্স সঙ্গে রাখতে হবে। চার চাকায় গেলে পাম্প সঙ্গে রাখুন। বাইক চালালে পরতে হবে নি গার্ড, এলবো গার্ড, স্পাইন গার্ড। এই পুরো গিয়ার সেটআপ বিভিন্ন দামে বাজারে পেয়ে যাবেন। প্রয়োজন বুঝে কিনুন। ভাড়াও পাবেন। কাজে লাগবে ফ্ল্যাশলাইটও। মোবাইলের ফ্ল্যাশে ভরসা না করে হাই পাওয়ারের ফ্ল্যাশলাইট ও নতুন ব্যাটারি কাছে রাখুন। ফার্স্টএড কিট জরুরি। গাড়ির সওয়ারিদের জন্য জরুরি ওষুধপত্রও ভরে নিতে পারেন তাতে। জিপিএস ও নেভিগেশন ফোনেই পেয়ে যাবেন। তবে ছোট শহর বা গ্রামের রাস্তায় অনেক সময়ে নেভিগেশন মেলে না। দুর্গম জায়গায় নেটওয়র্কও থাকে না। সঙ্গে রাখুন স্থানীয় ম্যাপ। রাস্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলুন। পুরো রাস্তা ফোনে নেভিগেশন অন থাকলে চার্জ ফুরোবে তাড়াতাড়ি। তাই ড্যাশবোর্ড মাউন্ট ও কার চার্জার অথবা পাওয়ার ব্যাঙ্ক সঙ্গে নিন। জ্বালানি ক্যারি করতে হলে সাবধান। সিল্‌ড ক্যান নেওয়াই ভাল।

Advertisement

নথিপত্র: রোড ট্রিপে এক রাজ্যের গাড়ি অন্য রাজ্যের মধ্য দিয়ে গেলে তা চেক করার মাত্রা বেড়ে যায়। আউটসাইডার গাড়ি পুলিশ চেক করে। গাড়ির কাগজপত্র ঠিক থাকা জরুরি। ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে শুরু করে রেজিস্ট্রেশন, কার ইনশিয়োরেন্স, পিইউসি (পলিউশন আন্ডার কন্ট্রোল) সার্টিফিকেট... সঙ্গে রাখতে হবে। খুচরো টাকাও হাতের কাছে রাখুন।

পথ: কোন রাস্তায় যাবেন, তা বিবেচ্য। সমতলে কয়েকটি রোড ট্রিপ করে তবেই পাহাড়ি রাস্তায় রোড ট্রিপ শুরু করুন। বাইকে গেলে অবশ্যই ফুল হেলমেট পরতে হবে। ফোর হুইলারে চেপে পাহাড়ি পথে গেলে কোথাও ছোট গাড়ি, কোথাও বড় গাড়ির দরকার পড়ে। তাই আপনার ট্রিপের রাস্তায় কোন গাড়ি চলে, তা জেনে নিন। গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষমতা সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞান জরুরি। মরসুম অনুযায়ী কিছু রাস্তা বন্ধ থাকে। যেমন শীতকালে লেহ, বর্ষায় ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারির রাস্তা। তাই খোঁজখবর নিয়েই প্ল্যান করুন।

সঙ্গী: রোড ট্রিপ কিন্তু সকলে উপভোগ করতে না-ও পারে। এই জার্নিতে অ্যাডভেঞ্চার যেমন আছে, রয়েছে কষ্টও। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা। বাথরুম সব জায়গায় মনের মতো না-ও পেতে পারেন। তাই এমন সঙ্গী নিন, যে জার্নিটা উপভোগ করবে। আর সঙ্গী যদি বাইক বা গাড়ি চালাতে পারে, তা হলে আপনারই সুবিধে। দু’জনে ভাগ করে ড্রাইভ করুন। খুব ছোট বাচ্চা নিয়ে গেলে তার খাবার সঙ্গে রাখুন। পর্যাপ্ত জল নিয়ে বেরোন। গাড়িতে তার ঘুমানোর ব্যবস্থা করতে ছোট বালিশ ও কম্বল সঙ্গে রাখুন। সে ক্ষেত্রে একটু বড় গাড়ি নিলেই সুবিধে।

নাইট ড্রাইভিং: নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছনোর চাপ তো থাকেই। কিছু ক্ষেত্রে সূর্যাস্তের পরেও ড্রাইভ করার প্রয়োজন হয়। তবে অজানা রাস্তায়, বিশেষত পাহাড়ে দিনের মধ্যেই হল্ট প্লেসে পৌঁছনোর চেষ্টা করুন। রাতে অজানা রাস্তায় গাড়ি না চালানোই ভাল। একান্তই তা করতে হলে স্পিড নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। গাড়ি চালানোর সময়ে ক্লান্তিতে চোখ বুজে এলে ব্রেক নিন।

ড্রাইভিং টাইম: পুরো ট্রিপ কমপ্লিট করতে কত ঘণ্টা লাগবে, আগে দেখে নিন। ধরুন, প্রায় ১২০ ঘণ্টার ট্রিপ। প্রত্যেক দিন আট-দশ ঘণ্টা করে তা ভাগ করে নিন। যাঁরা পরিকল্পনা করে ঘুরতে ভালবাসেন, তাঁরা আগে থেকে হল্টের হোটেল বুক করে রাখতে পারেন। চাইলে হল্টে পৌঁছেও থাকার জায়গা খুঁজে দেখতে পারেন। রোজকার ড্রাইভিং টাইমের চেয়ে অতিরিক্ত সময় হাতে রাখুন। ট্র্যাফিক, শরীর খারাপ, চেকপোস্টে... নানা কারণে দেরি হতে পারে।

রোডট্রিপ করার আগে প্রয়োজন মানসিক প্রস্তুতি ও শারীরিক ফিটনেস। শরীর যখন ক্লান্তির কথা জানান দেবে, তখন তা অবশ্যই শুনুন। কারণ গন্তব্য নয়, রোড ট্রিপে জার্নিটাই আসল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement