Durga Puja 2019

বেড়াতে যাচ্ছেন? জেনে নিন নানা জায়গার খুঁটিনাটি

আগাম ভ্রমণ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার সময় কাজে লাগতে পারে এ‘টা টিপস।

Advertisement

অরুণাভ দাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৬:১৪
Share:

বেড়াতে বেরিয়ে অনেক খুঁটিনাটির খোঁজ আমরা রাখি, আবার রাখি না। আসুন কিছু জায়গা সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য জানিয়ে রাখি যা উৎসবের মরসুমে আপনাদের আগাম ভ্রমণ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার সময় কাজে লাগতে পারে।

Advertisement

মোবাইল নেটওয়ার্ক এখন সর্বত্র পাওয়া যায়। কিন্তু লাদাখ ও হিমাচল প্রদেশের স্পিতি উপত্যকায় সব সংস্থার নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। বিএসএনএল নেটওয়ার্ক এই সব জায়গায় কাজ করে। স্পিতিতে জিও চালু হয়ে যাওয়ার কথা ইতিমধ্যে। বাকি দেশে যেখানেই ঘুরবেন, প্রায় সব জায়গা ফোর জি কভারেজ সীমার মধ্যে। উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু রাজ্যে বেড়াতে গেলে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে প্রচলিত নিয়ম অনুসারে ইনারলাইন পারমিট (আইএলপি) করাতে হয়। রাজ্যগুলি হল অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর ও মিজোরাম। কলকাতায় এই সব রাজ্যের নিজস্ব ভবনে লিয়াঁজ অফিসারের কাছে পারমিটের জন্য আবেদনের ফর্ম পাওয়া যায়। পাসপোর্ট সাইজের কয়েকটি ছবি ও সচিত্র পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিলে সহজে পারমিট পাওয়া যায় ১৫ দিন মেয়াদের। এই আইএলপি ওই সব রাজ্যের একাধিক চেকপোস্টে দেখাতে হয়।

হি-পাতাল থেকে রাজকীয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। ছবি- সায়ান্তন মজুমদার

Advertisement

​অনেকের কাছে বেড়াতে গিয়ে বিনোদনের অঙ্গ মদ্যপান। কিন্তু মনে রাখবেন, গুজরাত, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে সুরা পান ও বিক্রি কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। সঙ্গে করে নিয়ে গেলেও প্রকাশ্যে মদ্যপান বিপদ ডেকে আনতে পারে। কেনাকাটা না করলে তো ঘুরতে যাওয়ার মজা সম্পূর্ণ হয় না। স্মারক কিনতে গিয়ে মনে রাখবেন, ফিক্সড প্রাইসের দোকানে ঢুকতে হবে। সরকারি এম্পোরিয়াম হলে ঠকার আশঙ্কা নেই। আন্দামানের পোর্টব্লেয়ারে অনেক ঝাঁ-চকচকে দোকান দেখবেন, প্রবাল, মুক্ত ইত্যাদি বিক্রি করছে। মুখে ওরা নানা গ্যারান্টি দেবে। সঙ্গে দারুণ অফার। কিন্তু কিছু দোকান থেকে জিনিস কিনে ফিরে আসার পর অনেক সময়েই দেখা যায়, সবই ঝুটো জিনিস। তাই আন্দামানে যথার্থ জিনিস কিনতে সবচেয়ে ভাল জায়গা সরকারি সামুদ্রিকা এম্পোরিয়াম। রাজস্থানের জয়পুর ও উত্তরপ্রদেশের লখনউ গেলে দেখবেন, গাড়িওয়ালারা সাইটসিয়িং-এর ফাঁকে আপনাকে বিরাট বিরাট দোকানে নিয়ে যাবে। কিন্তু ওদের দ্বারা ঠকতে পারেন দু’ভাবে। ড্রাইভারের কমিশন ধরে জিনিসের দাম হবে বেশি। কোয়ালিটিও মনমতো হবে, এমন গ্যারান্টি নেই। আর একটা কথা, কখনও পার্ট পেমেন্ট করে বাকিটা ক্যাশ অন ডেলিভারির অপশন পেলে, যতই লোভনীয় হোক, কখনও নেবেন না।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়

অনলাইনে হোটেল বুকিং করলে প্রবেশের কয়েক ঘণ্টা আগে রাস্তা থেকে হোটেলের নম্বরে ফোন করে নিজেদের আসার কথা ও ঘর রেডি করে রাখার কথা জানিয়ে দেবেন। চেকইনের আগে কী কী সুবিধা ফ্রি পাবেন ও কী কী পাবেন না, খুঁটিয়ে জেনে নেবেন। অনেক অনলাইন বুকিং কন্টিনেন্টাল প্ল্যান বা সিপি করা হয়, যার অর্থ বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট। কিন্তু সে ক্ষেত্রে হোটেলের স্ট্যান্ডার্ড বা বুফে ব্রেকফাস্ট দেওয়া হয় না, ডিসকাউন্টেড প্রাইসে ঘর ভাড়া দেয় বলে। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে ভাল ব্রেকফাস্টের বন্দোবস্ত করে নিতে হবে। হোটেলে ঘর বুকিংয়ে প্রচলিত বিভিন্ন প্ল্যান সম্পর্কে জেনে রাখুন: ১) ইপি মানে শুধুই থাকা। ঘরভাড়া ছাড়া বাকি সব সুবিধা নিতে হবে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে, ২) সিপি বা কন্টিনেন্টাল প্ল্যান। এর অর্থ ঘরভাড়ার সঙ্গে ব্রেকফাস্ট ধরা আছে, ৩) এমএপি বা মডিফায়েড আমেরিকান প্ল্যান। এর অর্থ, ভাড়ার ভেতরে ধরা থাকবে ঘর, ব্রেকফাস্ট ও ডিনারের খরচ, ৪) এপি বা আমেরিকান প্ল্যান। এর অর্থ, ঘরভাড়া, ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ ও ডিনার সব ধরা ভাড়ার মধ্যে। এখন আবার হোম স্টে কালচার খুবই প্রচলিত হয়েছে। এখানে এপি বেশি চলে। কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড লাঞ্চ ও ডিনার এক দিনের পর একঘেয়ে লাগতে পারে। কারণ, দার্জিলিং, সিকিমের অধিকাংশ হোম স্টে-তে দেখবেন মিলের মেনু রোজ প্রায় এক, দুপুরে ডিম ভাত ও রাতে চিকেন ভাত বা রুটি। তাই হোম স্টে-র খাওয়ায় বৈচিত্র আনতে হলে পকেট থেকে বাড়তি অর্থ ব্যয় করা প্রয়োজন। এখন পরিবেশ রক্ষার তাগিদে প্লাস্টিকের ক্যারিবাগ ও বোতল বর্জনকে সঙ্গত কারণে অনেক বেড়ানোর জায়গায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২ অক্টোবর থেকে দেশের সব রেলস্টেশনে ও ট্রেনযাত্রায় প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হবে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু মনে রাখবেন, সব ধরনের প্লাস্টিক এই বাতিলের তালিকায় নেই, কেবল সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হবে। মানে, পাতলা ক্যারিব্যাগ ও ১৫-২০ টাকার পিউরিফায়েড জলের বোতলের পুনর্ব্যবহার চলবে না। আবার সব ধরনের প্লাস্টিকের বোতল ও ক্যারিব্যাগ বর্জিত স্থানও অনেক আছে আমাদের দেশে। আন্দামানে জলিবয় ও রেডস্কিন দ্বীপের জলযানে এই সব নিয়ে আপনাকে উঠতেই দেওয়া হবে না। উত্তর সিকিমে লাচুং ও লাচেন যাওয়ার পথে এক জায়গায় গাড়ির চালকই জানিয়ে দেবেন, রাস্তার ধারে ডাস্টবিনে সব ধরনের প্লাস্টিক ফেলে দিয়ে তবেই এগনো যাবে সামনে। নয়তো ধরা পড়লে মোটা অঙ্কের জরিমানা।

আন্দামানের সেলুলার জেল

অনেক মন্দিরে প্রবেশের সময় সেখানে প্রচলিত নিয়ম আপনাকে মানতেই হবে। যেমন, দক্ষিণ ভারতের অনেক মন্দিরে পুরুষরা কেবল ধুতি পরে খালি গায়ে বা চাদর জড়িয়ে প্রবেশ করতে পারেন। যে কোনও জৈন মন্দিরে গেলে মনে রাখবেন, ভেতরে সেলফি বা সঙ্গীর ছবি তোলা নিষেধ। মন্দিরের শিল্প, স্থাপত্য ও মূর্তির ছবি তুলতে কোনও বাধা নেই। অজন্তা গুহামন্দিরে ক্যামেরার ফ্ল্যাশ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ, কারণ তাতে লুপ্তপ্রায় প্রাচীন ছবিগুলির সমূহ ক্ষতি হয়। তিরুপতি মন্দিরে বিরাট লাইন পড়ে দর্শনার্থীদের। তাড়াতাড়ি দেবদর্শন করতে হলে স্পেশাল দর্শনী টিকিট কেটে নেওয়াই ভাল। হিমাচল প্রদেশের অনেক মন্দিরে বিশেষ টুপি পরে ও কোমরে রিবন বেঁধে ঢুকতে হয়। মন্দিরের বাইরে এ সব জিনিস বিনামূল্যে পাওয়া যায়। দর্শন হয়ে গেলে আবার যথাস্থানে রেখে আসুন। নিরাপত্তার ব্যাপারটি মাথায় রেখে বিমানবন্দরের ভেতরের অংশে ছবি তোলা নিয়ে কিছু বিধিনিষেধ আছে। সব জায়গায় অবশ্য নিয়ম কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা হয় না। সেনাবাহিনী পরিচালিত বিমানবন্দরগুলিতে এই নিয়ম কঠোর, মাথায় রাখবেন। যেমন, বাগডোগরা, বিশাখাপত্তনম ও গোয়ার ডাবোলিম বিমানবন্দর ইত্যাদি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement