Kanaichatta

কানাইচট্টার সমুদ্রতট

ঝাউবন ঘেরা বালুকাবেলায় কাটবে সময়, জুড়োবে মন চোখে পড়বে বকেদের খাবার খোঁজার দৃশ্য আর দূর সমুদ্রে ট্রলারের সার বেঁধে ঘরে ফেরার ব্যস্ততা।জোৎস্নার স্নিগ্ধ আলো উপুড় হয়ে পড়ে দীর্ঘ সমুদ্রতট জুড়ে। বোবা ঝাউবন, ঝিনুকদল আর সফেন সমুদ্রচন্দ্রিকা হয়ে ওঠে বাঙ্ময়। 

Advertisement

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২০ ০০:০১
Share:

তটরেখা: কানাইচট্টার সৈকত

ওয়র্ক-ফ্রম-হোম চলতে চলতে মন যখন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে, নিরালা প্রকৃতির কাছে এক-দু’দিনের জন্য ছুটে যেতে মন্দ লাগে না। করোনা পরিস্থিতিতে জনসমাগম এড়িয়ে নিরিবিলি প্রকৃতি অনেক নিরাপদ। এমনই এক জায়গা পূর্ব মেদিনীপুরের কানাইচট্টা গ্রামের অনাঘ্রাত সমুদ্রসৈকত, স্থানীয় মানুষেরা যাকে ‘ডাইজিন’ বলে চেনে।

Advertisement

কাঁথি থেকে জুনপুট রোড হয়ে জুনপুট পৌঁছে, সেখান থেকে সি ডাইক রোড ধরে বাঁকিপুট পেরিয়ে যাওয়া যায়। অথবা কাঁথি থেকে দরিয়াপুর হয়ে দৌলতপুর পার করে কানাইচট্টার সমুদ্রতীরে পৌঁছনো যায়। এবড়ো-খেবড়ো, সরু পথ। একটা চারচাকা কোনও মতে যেতে পারে। পথের গোড়ার দিকে পরপর মাছের ভেড়ি। ইউক্যালিপটাস, নিম, সোনাঝুরি, খেজুর গাছের ঘনঘটায় মোড়া মোহময়ী গ্রামবাংলা। কাজু বাদামের চাষও চলছে যত্রতত্র। গাছের ফাঁক-ফোকর দিয়ে অদূরে সাগরের ঢেউ চোখে পড়বে। প্রায় ২-৩ কিলোমিটার চলার পরে গাড়ি নিয়ে যায় সমুদ্রের কাছাকাছি। বালিয়াড়ির শেষে সবুজ ঘাসজমি। মাঝে এক ফালি মেঠো পথ। ঘাসজমির দু’পারে তিরতির করে খালের জল বয়ে চলেছে আপন মনে। চোখ তুললেই দেখা যায়, চারদিকে সার দিয়ে ঝাউয়ের দল গলাগলি করে দাঁড়িয়ে। মাঝখানে ঘাসজমি, এটাই সমুদ্রে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা। পর্যটকহীন সমুদ্রসৈকত যেন নিজের মতো করেই দিনযাপন করে।

সমুদ্রতটে পৌঁছেও দু’-চার জন স্থানীয় মানুষ ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায় না। দুপুরের সোনালি আলোয় নিঃসঙ্গ সমুদ্রতীরে হাঁটতে হাঁটতে বহু দূর চলে যাওয়া যায়। নেই কোনও চায়ের দোকান অথবা ঝালমুড়িওয়ালার ঝুনঝুন শব্দ। এক স্থানীয় ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রায় ১২০ ঘর লোকের বাস সমুদ্র লাগোয়া গ্রামটিতে। এক সময়ে ডাইজিন কোম্পানির ব্যবহারের কারণে এই গ্রামের স্থানীয় নাম ডাইজিন। কোম্পানির বাড়ি, অফিসঘর গ্রামের একপ্রান্তে। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট এখন এলাকার দেখভাল করে। ওই বিভাগের কর্তারাই এই ঝাউগাছ রোপণ করেছেন। এখানকার মানুষ শস্য আর চিংড়ির চাষ করে দিন গুজরান করেন। গ্রামের সঙ্গে লেগে থাকা অনাঘ্রাত সাগরতট ঘিরে তাঁদের অজস্র স্বপ্ন। পড়ন্ত আলোয় এক স্থানীয়ের তামাটে মুখে ফুটে ওঠে আশার কথা— ‘এই গ্রামে শিগগির পাকা রাস্তা হবে, বাইরের লোকজন আসবে। আমাদের জীবন অনেক ভাল হবে।’

Advertisement

প্রশান্তি: ডাকছে নীল জলরাশি

কানাইচট্টা গ্রামে হোমস্টে-র ব্যবস্থাও রয়েছে। অন্যথায় থাকার জায়গা পাওয়া যাবে বাঁকিপুট, জুনপুট অথবা পেটুয়াঘাটে

চোখে পড়বে বকেদের খাবার খোঁজার দৃশ্য আর দূর সমুদ্রে ট্রলারের সার বেঁধে ঘরে ফেরার ব্যস্ততা। স্থানীয় মানুষের কথায়, পূর্ণিমার রাতে এই সমুদ্রতটের রূপ নাকি দেখার মতো! জোৎস্নার স্নিগ্ধ আলো উপুড় হয়ে পড়ে দীর্ঘ সমুদ্রতট জুড়ে। বোবা ঝাউবন, ঝিনুকদল আর সফেন সমুদ্রচন্দ্রিকা হয়ে ওঠে বাঙ্ময়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement