লক্ষ্য ৭৮৮

রঞ্জিতে মহালজ্জার সামনে বাংলা

এক সপ্তাহ আগে মুম্বইয়ে আসার বিমানে যত ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে এসেছিলেন বাংলার ক্রিকেটাররা, রবিবার রাতে কলকাতায় ফেরার বিমানে তার চেয়ে অনেক বেশি ‘লাগেজ’ নিয়ে উঠতে হবে তাঁদের। সাগরপারের স্বপ্ননগরীকে দুঃস্বপ্নের ক্রিকেট দেখিয়ে এত লজ্জা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে মনোজ তিওয়ারিদের, যা তাঁদের ব্যাগপত্তরের ওজনকেও ছাপিয়ে যেতে পারে অনায়াসে।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৯
Share:

এক সপ্তাহ আগে মুম্বইয়ে আসার বিমানে যত ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে এসেছিলেন বাংলার ক্রিকেটাররা, রবিবার রাতে কলকাতায় ফেরার বিমানে তার চেয়ে অনেক বেশি ‘লাগেজ’ নিয়ে উঠতে হবে তাঁদের।

Advertisement

সাগরপারের স্বপ্ননগরীকে দুঃস্বপ্নের ক্রিকেট দেখিয়ে এত লজ্জা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে মনোজ তিওয়ারিদের, যা তাঁদের ব্যাগপত্তরের ওজনকেও ছাপিয়ে যেতে পারে অনায়াসে।

আর মুম্বইয়ের মাঠে বাংলাকে জিতিয়ে, রঞ্জি ট্রফির সেমিফাইনালে তুলে যিনি নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, সেই সাইরাজ বাহুতুলে আর এখন কলকাতায় ফিরছেনই না। ফিরছেন না আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা স্পিনার প্রজ্ঞান ওঝাও। নিজের শহরের ক্রিকেট মহলে কী জবাব দেবেন, বাংলার কোচ এখন সেটাই ভাবছেন বোধহয়।

Advertisement

একে আইপিএল নিলামে বাংলার ক্রিকেটারদের চাহিদার হতদরিদ্র অবস্থা। দ্বিতীয়বার নিলামে ডেকে কোনও মতে অশোক দিন্দার গতি করা হলেও মনোজ তিওয়ারির ভাগ্যে তাও জুটল না। বাংলায় এসে প্রজ্ঞান ওঝারও একই দশা। তার উপর ব্রেবোর্নে রঞ্জি কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলার সামনে এমন একটা লক্ষ্য চাপিয়েছে মধ্যপ্রদেশ, তা বোধহয় কোনও সাহসী স্ক্রিপ্ট রাইটারও লিখতে পারবেন না। ৭৮৮।

৬ ফেব্রুয়ারি। শনিবার। দিনটাকে বাংলার ক্রিকেটের কালো দিন বলা যেতেই পারে।

ব্রেবোর্নের প্রেস গ্যালারিতে বসে সেটা যেন আরও বেশি করে মনে হচ্ছিল। বাংলার ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের নিয়ে মুম্বইয়ের সাংবাদিকদের আওড়ানো কিছু জোক তো মীরাক্কেল-এ বলা জোকসকে বলে বলে দশ গোল দিতে পারে।

ম্যাচের চতুর্থ দিন যে হার দেখতে পাচ্ছে বাংলা, তা দেখা শুরু হয়েছে দ্বিতীয় দিন থেকেই। সেই হারের দিকে তিল তিল করে ক্রমশ নগ্ন হতে হতে এগিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের। এই পরিস্থিতিতে সেই দলের কোচ আর কীই বা বলতে পারেন?

থমথমে মুখে নকল হাসি আনার চেষ্টা করতে করতে বাংলার কোচ বললেন, ‘‘গায়ে বিঁধছে এই হারটা। ভীষনভাবে বিঁধছে। লড়াই করে হারায় তাও কিছুটা হলেও সম্মান আছে। এই হারে শুধু জ্বালা, শুধুই জ্বালা।’’ যেন মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কোনও আসামী তার শাস্তির দু’দিন আগে কথাগুলো বলছে। সে জানে মৃত্যু অবধারিত। আসন্ন মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার কোনও উপায় নেই।

দিনের শেষে বিপক্ষের ক্যাপ্টেন দেবেন্দ্র বুন্দেলা যখন বলছিলেন, ‘‘বাংলাকে পুরোপুরি হতাশার ডুবিয়ে দেওয়ার জন্যই এত বড় ইনিংসটা খেললাম, যাতে ওরা আর কোনও ভাবেই ফিরে না আসতে পারে, মনের জোরটা পুরো শেষ হয়ে যায়,’’ তখন মনে হচ্ছিল হাজারের ব্যবধান না গড়ে মনোজ তিওয়ারিদের করুণা করলেন। মনোজদের হাল এখন এ রকমই, করুণার পাত্র তাঁরা। দলের ৫৬০-এ ঈশ্বর পাণ্ডে আউট হতেই ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেন বুন্দেলা। তার আগে তিনি নিজে ৭২ করেছেন, আগের দিন রজত পাটিদারের (১৩৭) পর এ দিন হরপ্রীত সিংহ ভাটিয়ারও সেঞ্চুরি (১৩৯)। বাংলার বোলিংয়ে যে এক ফোঁটা বিষও নেই, এর চেয়ে বড় প্রমাণ কী হতে পারে?

রাগে, অভিমানে ব্যাট হাতে পেয়ে দু’টো ছয় ও তিনটে চার হাঁকিয়ে ৪২ বলে ৩২ রান করে ফেললেন বাংলার অধিনায়ক। সুদীপ চট্টোপাধ্যায় প্রথম ইনিংসের মতো ফের বাজে শট খেলে ফিরে গেলেন। মনোজ-ঋদ্ধির অপরাজিত জুটি শেষ দিন বাংলার ক্রিকেটের নগ্ন দেহে কোনও চাদর ঢাকা দিতে পারে কি না, সেটাই দেখার।

অশোক দিন্দা কার্যত মেনেই নিচ্ছেন তাঁদের নির্বিষ বোলিং ও ব্যাটিংয়ের ভরাডুবির জন্যই এই বেহাল দশা বাংলার। বললেন, ‘‘প্রথম দিন প্রথম সেশনে যদি দু-তিনটে উইকেট তুলে নিতে পারতাম, তা হলে বোধহয় সারা ম্যাচে এত খাটতে হত না। চার দিন ধরে আমি প্রায় ৬৩ ওভার বল করেছি। আজ ভেবেছিলাম তাড়াতাড়ি ওদের উইকেট ফেলে দিয়ে একটু বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পাব। তাও পেলাম না।’’

দিন্দাদের বোলিং কোচ রণদেব বসু অবশ্য কোনও দায়িত্ব নিতে রাজি নন। দিন্দার পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ কেন নেই, এর ব্যাখ্যা দলের বোলিং কোচেরই দেওয়ার কথা। তিনি কিন্তু আঙুল দেখিয়ে দিলেন সাইরাজ বাহুতুলের দিকে। বোলারদের ব্যর্থতার জবাবও তাঁকেই দিতে হবে!

বাহুতুলেই দিলেন। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘এই যে রঞ্জি ট্রফির মাঝখানে টি টোয়েন্টি, ওয়ান ডে টুর্নামেন্ট ঢুকে পড়ল, এটাই আমাদের অনভিজ্ঞ পেসাররা মানিয়ে নিতে পারেনি।’’ তবে ১২১-এ অল আউট হওয়ার কোনও ব্যাখ্যা তাঁর কাছে নেই। থাকলে কি এত লজ্জা-র বাড়তি লাগেজ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হত মনোজদের? বোধহয় না।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
মধ্যপ্রদেশ
৩৪৮ ও ৫৬০-৯ (রজত ১৩৭, হরপ্রীত ১৩৯, বুন্দেলা ৭২, দিন্দা ২-৯২, প্রজ্ঞান ২-১৬৯)।

বাংলা
১২১ ও ১১৩-৩।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement