এই বার্তা নিয়েই আজ আকাশে উড়তে পারে প্রতিবাদ।-টুইটার
দশ মাসে যে ডেভিড মোয়েসকে এমন চরমতম হেনস্থার প্রোকোপে পড়তে হবে, তা তিনি তো নয়ই, বোধহয় ব্রিটিশ ফুটবলমহলও ভাবতে পারেনি!
শনিবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে অ্যাস্টন ভিলার বিরুদ্ধে ওয়েন রুনিদের ম্যাচ চলাকালীন যদি টিভি ক্যামেরা ম্যাঞ্চেস্টারের আকাশে ফোকাস করে, একটা অদ্ভুত ব্যাপার মোয়েস তো বটেই বাকি ফুটবলবিশ্বও দেখতে পাবে।
আকাশে উড়ে যাচ্ছে একটা ছোট প্লেন। যা থেকে একটা ব্যানার ঝুলবে। যেখানে লেখা থাকবে: ‘রং ওয়ানমোয়েস আউট।’
মোয়েস, তোমাকে নির্বাচন করাই ভুল হয়েছে। তুমি এ বার বিদায় হও!
স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসনের উত্তরসূরি হিসেবে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে আসার পর থেকে স্ট্রেটফোর্ড এন্ড গ্যালারি থেকে একটা ব্যানার ঝুলছে। যাতে লেখা: ‘দ্য চোজেন ওয়ান’। গত মঙ্গলবার ম্যাঞ্চেস্টার সিটির কাছে হারের পর ক্ষুব্ধ সমর্থকরা যে ব্যানার ছিঁড়ে ফেলতে চেয়েছিলেন। মাঠে উপস্থিত স্টুয়ার্ডরা সেটা কোনও রকমে আটকান। কিন্তু তাতে ইউনাইটেড সমর্থকদের রাগ তো কমেইনি, উল্টে মোয়েসের বিরুদ্ধে অভিযানের এক অভিনব রাস্তা তাঁরা বের করে ফেলেন। ঠিক হয়ে যায়, ম্যাঞ্চেস্টারের পরের ম্যাচ একটা প্লেন মাঠের উপর দিয়ে উড়ে যাবে। যেখানে থাকবে ওই অপমানজনক উদ্ধৃতি। একটি ওয়েবসাইটে সমর্থকরা জানিয়েছেন, এই অভিনব বিদ্রোহের জন্য তাঁরা প্রায় এক হাজার পাউন্ড চাঁদা তুলেছেন। তাঁদের দাবি, কিক অফের পাঁচ থেকে দশ মিনিট আগে ম্যাঞ্চেস্টারের আকাশে প্লেনের আবির্ভাব হবে। তাঁদের সরকারি বিবৃতি“আমাদের ঘরের মাঠে খেলতে আসা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী টিমকে যে ম্যানেজার ‘ফেভারিট’ বলতে পারেন, তাঁকে আমরা মেনে নিতে পারছি না। ক্লাবের নীতি, ফুটবলার এবং সমর্থকদের সঙ্গে মোয়েস বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।”
যদিও সব সমর্থক এমন বিতর্কিত পদক্ষেপের সঙ্গে নেই। কেউ কেউ যেমন বলছেন, শুরু দিকে ফার্গুসনও কোচ হিসেবে সাফল্য পাননি। কিন্তু তাঁকে প্রচুর সময় এবং সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ম্যাঞ্চেস্টারের রীতিই এটা। সুতরাং, আর একটা মরসুম না গেলে মোয়েসের বিচার করতে বসা ঠিক হবে না। মোয়েস নিজেও আশাবাদী যে, ম্যাঞ্চেস্টারে তিনি পুরোপুরি অবাঞ্ছিত নন।
বলেছেন, “যেখানেই যাই ভক্তদের প্রচুর সমর্থন পাই। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেও।” আর সম্ভাব্য বিদ্রোহ প্রসঙ্গে মোয়েস বলছেন, “হ্যা।ঁ ব্যাপারটার কথা শুনেছি। লোকে এটা করতেই পারে। তাদের সেই অধিকার আছে।”
কিন্তু মোয়েস সেই ‘অধিকার’ প্রয়োগ নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারলেও, রিও ফার্দিনান্দ পারছেন না। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের চলতি মরসুম যাঁর কাছে চূড়ান্ত ‘লজ্জার’। “সত্যি ব্যাপারটা খুব লজ্জার। ব্যক্তিগত অপমানের মতো। ম্যাচের পর আর বাড়ি থেকে বেরোতেই ইচ্ছে করে না। টিভি দেখাও প্রায় বন্ধ করেছি,” সাক্ষাৎকারে বলেছেন অভিজ্ঞ ম্যাঞ্চেস্টার ডিফেন্ডার ফার্দিনান্দ। ক্লাব কর্তারা যেখানে প্রকাশ্যে মোয়েসকে সমর্থন করে যাচ্ছেন, ফার্দিনান্দ সেখানে খোলাখুলি মেনে নিয়েছেন, ক্লাবের অবস্থা শোচনীয়। “বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছে দিতে ইচ্ছে করে না। রাস্তায় বেরোলেই মনে হয়, ম্যাচ হেরেছি বলে সবাই আমাকে দোষ দিচ্ছে,” বলছেন ফার্দিনান্দ। সঙ্গে সংযোজন, “গাড়িতে পেট্রোল ভরতে বা দোকানে যেতে ইচ্ছে করে না। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। ম্যাচের রেজাল্ট আর টিমের ফর্ম নিয়ে কথা বলে। এ ভাবে কেউ বাঁচতে চায়? সবাই তো চায় স্বচ্ছ্বন্দে, স্বাধীন ভাবে বাঁচতে। আমি চাই না অন্য কাউকে ট্রফি তুলতে দেখতে। সেটা আমরাই এত দিন করে এসেছি। আর করে যেতে চাই। তবে ট্রফি তোলার অধিকার অর্জন করতে হয়। যেটা এই মরসুমে আমরা করতে পারিনি।”