বিশ্বকাপের জন্য হয়তো নিজেকে গুটিয়ে রাখছে মেসি

বোল্টের মতোই স্প্রিন্ট টানল বেল

আই লিগে শনিবার চার্চিলের বিরুদ্ধে আমার ইউনাইটেডের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ গোয়ার মাটিতে। বৃহস্পতিবার তাই সাত-তাড়াতাড়ি বিমানবন্দরে যাওয়ার তাড়া ছিল। তবুও কোপা দেল রে ফাইনালে বার্সেলোনা-আর রিয়াল ম্যাচটা দেখার লোভ ছাড়তে পারিনি। প্রায় মাঝরাতে খেলা শেষের পর রিয়াল অধিনায়ক কাসিয়াসের হাতে ট্রফিটা দেখে দু’টো বিষয় মাথায় ঘুরছে। এক) রোনাল্ডো ছাড়াও রিয়াল মাদ্রিদ যে জিততে পারে সেটা কি গ্যারেথ বেল বুধবার রাতে ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে প্রমাণ করল। দুই) মেসি কি বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে লুকিয়ে রাখছে? না খেলা থেকে মন সরে গিয়েছে ওর?

Advertisement

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৫৯
Share:

অবিশ্বাস্য গোলের পরে বেলের উল্লাস। ছবি: এএফপি।

রিয়াল মাদ্রিদ-২ (দি’মারিয়া, বেল)

Advertisement

বার্সেলোনা-১ (বারত্রা)

আই লিগে শনিবার চার্চিলের বিরুদ্ধে আমার ইউনাইটেডের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ গোয়ার মাটিতে। বৃহস্পতিবার তাই সাত-তাড়াতাড়ি বিমানবন্দরে যাওয়ার তাড়া ছিল। তবুও কোপা দেল রে ফাইনালে বার্সেলোনা-আর রিয়াল ম্যাচটা দেখার লোভ ছাড়তে পারিনি।

Advertisement

প্রায় মাঝরাতে খেলা শেষের পর রিয়াল অধিনায়ক কাসিয়াসের হাতে ট্রফিটা দেখে দু’টো বিষয় মাথায় ঘুরছে।
এক) রোনাল্ডো ছাড়াও রিয়াল মাদ্রিদ যে জিততে পারে সেটা কি গ্যারেথ বেল বুধবার রাতে ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে প্রমাণ করল।
দুই) মেসি কি বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে লুকিয়ে রাখছে? না খেলা থেকে মন সরে গিয়েছে ওর?

এল ক্লাসিকো যে উত্তেজনা ছাড়া হতে পারে না সে জানা কথা। ম্যাচের শুরুতে তাই রিয়ালের স্টপার পেপের সঙ্গে বার্সার নেইমারের শঠে শঠ্যাং ফুটবল দেখে মোটেও বিচলিত হইনি। রেফারি কুড়ি মিনিটের মধ্যে দু’দলের তিন জনকে হলুদ কার্ড দেখালেও না।


বেলের অবিশ্বাস্য গোল। সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।

গোটা ম্যাচটায় আমি দেখার অপেক্ষায় ছিলাম বেশ কয়েক দিন ধরে সমালোচনার বাণে বিদ্ধ মেসি দর্শনীয় গোল করে সবার মুখে কুলুপ এঁটে দিতে পারে কি না? আর রোনাল্ডো মাঠের বাইরে থাকা সত্ত্বেও পুরো শক্তির বার্সেলোনার বিরুদ্ধে রিয়াল মাদ্রিদ জিততে পারে কি না? রোনাল্ডো খেলা সত্ত্বেও গত মাসে লা লিগায় ঠিক এই ম্যাচটাতেই দু’গোলে এগিয়ে গিয়েও জিতে ফিরতে পারেনি কার্লো অ্যান্সেলোত্তির দল।

কিন্তু ম্যাচে বার্সার হৃৎপিণ্ড মেসি অতি সাধারণ। নেইমারকেও আহামরি লাগল না। কিন্তু গ্যারেথ বেল দেখিয়ে দিল রোনাল্ডো ছাড়াও রিয়ালকে জেতানোর লোক এসে গিয়েছে।

শুধু মাত্র গ্যারেথ বেলের গোলটার জন্যই গোটা রাত জেগে বসে থাকা যায়। হাতে সে যতই কাজ থাক না কেন? ভাবুন একবার, একজন স্ট্রাইকার বলটা ধরল নিজেদের লেফট উইং হাফ যেখানে দাঁড়ায় সেখান থেকে। ৬৫ গজের ঐতিহাসিক দৌড়। তাও আবার আট সেকেন্ডের কম সময়ে! আর তার ফিনিশিং পয়েন্ট বার্সার জালে। শুরু থেকেই দেখছিলাম নিজেকে যেন প্রমাণ করতেই নেমেছে ৮৬ মিলিয়ন পাউন্ডে এ বার রিয়ালের জার্সি গায়ে চাপানো ওয়েলসের এই স্ট্রাইকার। জেরার্দো মার্টিনোর ডিফেন্ডার বারত্রার ধাক্কায় মাঠের বাইরে চলে গিয়েও দুরন্ত স্প্রিন্টে ঠিক জায়গা মতো পৌঁছে সেই বারত্রাকে হারিয়েই রিয়ালের জার্সিতে এই মরসুমে নিজের কুড়িতম গোলটা করে গেল! আসলে গোটা মরসুম জুড়েই ছন্দে রয়েছে বেল। মনে রাখবেন, লা লিগাতে ওর ১৪ গোলের একটা ম্যাচেও রোনাল্ডো খেলেনি। কিন্তু বড় ম্যাচে তাঁর সেই প্রতিভার জানান দিয়ে গেল গোটা দুনিয়াকে। গত মার্চে ওয়েলসের হয়ে আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে এ রকম একটা গোল করেছিল ও। সেটা দেখিনি। কাগজে পড়েছিলাম। বুধবার দেখলাম গ্যারেথ বেলও ফুটবল মাঠে মাস্তানিতে কোনও অংশে কম নয়। বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার বুধবার রাতে ভ্যালেন্সিয়ার স্টেডিয়ামে গোলটা করে যেন নীরবে বলে গেল, “বিশ্বকাপে মেসি, নেইমার দেখবে। কিন্তু আমাকে দেখতে পাবে না ওয়েলস নেই বলে। আজ দেখে নাও আমি কী করতে পারি।” ফ্লাইটে গোয়া আসার পথে ফুটবলারদের মধ্যে রসিকতা চলছিল বেলের মধ্যে গোলটার সময় উসেইন বোল্ট ভর করেছে বোধ হয়। সত্যিই, বোল্টের মতোই স্প্রিন্ট টানল বেল।

তবে বেলের গোলটার সময় মাসচেরানো কেন ধারেকাছেও গেল না, তা বুঝলাম না। ক্লান্তি না কি পিঠ লুকোনের মনোভাব বার্সার আর্জেন্তাইন ডিফেন্ডারের মধ্যে ছিল তা খতিয়ে দেখা দরকার। পুরো ম্যাচটাতেই মাসচেরানো আর তাঁর সতীর্থরা অ্যান্সেলোত্তির কাউন্টার অ্যাটাক ফুটবলের সামনে খাবি খাচ্ছিল। বেলের মতোই এই ম্যাচে আরও দু’জনকে মনে ধরল। প্রথম জন ডি’ মারিয়া। বেঞ্জিমার থেকে পাওয়া বলটা ধরে দুরূহ কোণ থেকে যে ভাবে বার্সেলোনার কিপার পিন্টোকে পরাস্ত করে গোল করে গেল, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। আর একজন ইস্কো। মেসিদের থেকে যেমন বল কাড়ল তেমনই সেই বল ধরে রসদ জোগাল বেল-ডি’মারিয়া-বেঞ্জিমাদের ত্রিভুজ আক্রমণে।


ক্লিক করুন।

এটা হতে পারে যে বিশ্বকাপের আগে পা বাঁচিয়ে খেলছে আর্জেন্তিনার ফুটবল গ্ল্যামার বয়। কারণ, বিশ্বকাপটা নিজের হাতে তুলতে ও মরিয়া। তবে সঙ্গে এটা বলতেই হবে, বিগত কয়েক মরসুম ধরেই মেসি নিজেকে দলের ঊর্ধ্বে ভাবতে শুরু করে দিয়েছে। যা পত্রপত্রিকা থেকে জানতে পেরেছি। এটা কিন্তু মোটেও ভাল লক্ষ্মণ নয়। এটা সামলাতে পারতেন গুয়ার্দিওলা। জেরার্দো মার্টিনোর সেই রাশ কোথায়। থাকলে রিয়াল ডিফেন্স নেইমারের আউটসাইড ডজের ফর্মুলা ধরে ফেলার পর তার অ্যান্টিডোট খুঁজে ঠিক বার করে ফেলতেন।আর জেরার্দো মার্টিনোর বার্সেলোনা সেখানে শুরুটা ভাল করেও তার পর যেন ক্রমশ গুটিয়ে গেল। শেষের দিকে অবশ্য বারত্রা এবং ইনিয়েস্তা একটু চেষ্টা করেছিল। এই সময়েই বারত্রার সমতা ফেরানো। যদিও এ ক্ষেত্রে পেপেকে দায়ী করা যায়। কিন্তু বার্সার বাকিরা এতটাই সাধারণ তা বলার নয়। কোথায় তাদের বিখ্যাত তিকিতাকা? জাভি-বুস্কেতসও সেই দলে পড়ে গেল দেখে অবাকই হলাম। ২০০৭ সালে রাইকার্ড জমানার পর এত খারাপ খেলতে দেখলাম মেসির দলকে। আর মেসি নিজে? এত মলিন পারফরম্যান্স ওর থেকে আশা করা যায় না। গোটা ম্যাচেই পা বাঁচিয়ে খেলে গেল। ক্লান্তি? মনে তো হয় না। কারণ যে ছেলেটা এক মাস আগেও হ্যাটট্রিক করেছে এল ক্লাসিকোতে তাঁর মান এত তাড়াতাড়ি পড়ে গেল!

নিট ফল, কোপা দেল রে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সব হেরে বার্সা সাত বছর পর ট্রফিহীন ভাবেই মরসুম শেষ করার দিকে এগোচ্ছে। বাকি রইল কেবল লা লিগা। সেখানেও শীর্ষে থাকা আটলেটিকোর চেয়ে চার পয়েন্ট পিছনে। যেটা মেসির টিমের টিআরপি-র জন্য মোটেও ভাল নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement