ফিকরুর গোলটা লেভ ইয়াসিনও বাঁচাতে পারতেন না

আটলেটিকো দে কলকাতার ফিকরু তেফেরা যে গোলটা করল বৃহস্পতিবার গুয়াহাটিতে, আমার মতে আইএসএলে এখনও পর্যন্ত সেরা গোল। নর্থইস্টের গোলকিপার জোরভাস গ্রিসের বিশ্বকাপার। চার বছর আগেও বিশ্বকাপে খেলেছে। সে-ও নড়ার সময় পর্যন্ত পেল না! রাতে এই লেখার সময় আমাকে বন্ধু সাংবাদিকের প্রশ্ন, আমি হলে গোলটা বাঁচাতে পারতাম কি না? আরে, আমি কেন? পাঠক, দোষ নেবেন না, লেভ ইয়াসিন পর্যন্ত এ দিন নর্থইস্টের গোলের নীচে থাকলেও, ওই গোল বাঁচত না!

Advertisement

ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৫২
Share:

যেন ‘জোড়া বালোতেলি’! বৃহস্পতিবার গুয়াহাটির ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামে ফিকরুদের সৌজন্যে ভারতীয় ফুটবলে অভিনব চুলের স্টাইল প্রদর্শন। ছবি: উজ্জ্বল দেব

আটলেটিকো-২ (ফিকরু, পদানি)

Advertisement

নর্থইস্ট ইউনাইটেড-০

Advertisement

আটলেটিকো দে কলকাতার ফিকরু তেফেরা যে গোলটা করল বৃহস্পতিবার গুয়াহাটিতে, আমার মতে আইএসএলে এখনও পর্যন্ত সেরা গোল। নর্থইস্টের গোলকিপার জোরভাস গ্রিসের বিশ্বকাপার। চার বছর আগেও বিশ্বকাপে খেলেছে। সে-ও নড়ার সময় পর্যন্ত পেল না! রাতে এই লেখার সময় আমাকে বন্ধু সাংবাদিকের প্রশ্ন, আমি হলে গোলটা বাঁচাতে পারতাম কি না? আরে, আমি কেন? পাঠক, দোষ নেবেন না, লেভ ইয়াসিন পর্যন্ত এ দিন নর্থইস্টের গোলের নীচে থাকলেও, ওই গোল বাঁচত না!

গার্সিয়া-ফিকরু যুগলবন্দি রবিবারের যুবভারতীর থেকেও যেন অ্যাওয়ে ম্যাচে আরও জমাটি দেখাল। গার্সিয়া তো না হয় স্পেনের তারকা বিশ্বকাপার। কিন্তু ইথিওপিয়ার মতো বিশ্বফুটবলের প্রথম ব্র্যাকেটে না থাকা একটা দেশের ফরোয়ার্ড ফিকরু সত্যিই আইএসএলের গোড়াতেই ঝড় তুলে দিয়েছে!

এ দিন প্রথম গোলের মুভে গার্সিয়ার লবটা যতটাই ভাল, ফিকরুর সেই উঁচু বল বুকে রিসিভ করে একই অ্যাকশনে শরীরটাকে হাওয়ায় ভাসিয়ে নেওয়া সাইডভলিটা তার চেয়েও অনেক বেশি ভাল। অসাধারণ একটা পাস থেকে অনবদ্য একটা গোল। গোলপোস্টের যে জায়গা দিয়ে বলটা ঢুকেছে, কোনও গোলকিপারের পক্ষে সম্ভব নয় সেভ করা। কথার কথা নয়, সত্যিকারের বিশ্বমানের গোল বোধহয় একেই বলে!

কলকাতার আটলেটিকোকে যেন যত দেখছি ততই ভাল লাগছে। প্রথম ম্যাচের থেকেও এ দিন গার্সিয়া-বলজিত্‌ সাইনি-বোরহা ফার্নান্দেজ-নাটোদের খেলায় আরও ছন্দ দেখা গেল। নইলে কী আর বোরহা ফার্নান্দেজ দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের সুবাদে লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যাওয়ার পরেও কলকাতার দল দ্বিতীয় গোল পায়! দশ জনে খেলেও একটা টিম যখন গোল তুলে নেয়, তখনই পরিষ্কার তারা কতটা ছন্দে রয়েছে।

নর্থইস্টের ডিফেন্সের ভুলে শেষমেশ প্রায় ফাঁকায় চেক ফুটবলার জাকুব পদানি কলকাতার দ্বিতীয় গোলটা করলেও পাসটা কিন্তু আমাদের ছেলে সঞ্জু প্রধান বেশ ভাল বাড়িয়েছিল। তাকেও কলকাতার আটলেটিকোর স্প্যানিশ কোচ হাবাস কী চমত্‌কার কন্ডিশনে রেখেছেন!

আসলে স্পেনে গিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে প্রায় এক মাস ট্রেনিং করাটা কলকাতার আটলেটিকোর কাছে বিরাট আশীর্বাদ। আমার মনে হয়, এটার লাভ যত টুর্নামেন্ট এগোবে, তত বেশি অনুভব করবে কলকাতার দল। একইসঙ্গে ব্যাপারটা টের পাবে কলকাতার প্রতিপক্ষরা। ফিটনেস আর সহনশীলতা, দু’টোই এই মুহূর্তে আটটা ফ্র্যাঞ্চাইজি টিমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে আটলেটিকো দে কলকাতার খেলায়।

দু’গোল দিয়েছে। আরও বেশি গোলে জিততে পারত কলকাতা। নাটোর শট পোস্টে লাগে। বলজিত্‌ সাইনি সহজ সুযোগ নষ্ট করেছে। উল্টো দিকে নর্থইস্ট বল পজেশন বেশি রাখলেও গোলের মুখ সে ভাবে খুলতে পারেনি নব্বই মিনিটেও। শুভাশিস রায়চৌধুরী যুবভারতীতে অমন জ্বলে উঠে ফুটবল বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে অন্য পেশার সেলিব্রিটিদের পর্যন্ত প্রশংসা আদায় করে নিয়েছিল, সেই ছেলেকে বলতে গেলে এ দিন গুয়াহাটির মাঠে কোনও কঠিন বল ধরতেই হয়নি।

দু’দলের দুই স্প্যানিশ বিশ্বকাপার লুই গার্সিয়া আর কাপদেভিয়ার লড়াই দেখার আশায় ছিলাম। হয়তো ছোট মুখে বড় কথা বলা হয়ে যাবে, তবু বলতে বাধ্য হচ্ছি, স্পেনের বিশ্বকাপজয়ী দলের লেফট ব্যাক কাপদেভিয়ার খেলা এ দিন আমার নর্থইস্টের ডিফেন্সে তেমন আহামরি কিছু লাগেনি। হয়তো ছত্রিশ বছর বয়সটা কাপদেভিয়ার পক্ষে একটু বেশি বোঝা হয়ে গিয়েছে। নর্থইস্টের খেলায় যতটুকু কামড় দেখা যাচ্ছিল, সেটা ওদের প্রথম ম্যাচের উইনিং স্কোরার কোকের মধ্যেই। কিন্তু ওদের কোচ এ দিন কোকেকেই যে কেন তুলে নিলেন, ঠিক বুঝলাম না।

অন্য দিকে, একটা দল অ্যাওয়ে ম্যাচে হাফটাইমে এগিয়ে থাকলে শেষ পঁয়তাল্লিশ মিনিট তাদের ঠিক যে পন্থা নেওয়া উচিত, কলকাতার কোচ হাবাস ঠিক সেটাই নিয়েছিলেন— মাঝমাঠে পাঁচ জন করে দিয়ে (বলজিত্‌ সাইনিও তখন পিছিয়ে খেলছিল) ডিফেন্সকে জমাট করে তুলে। কলকাতার ডিফেন্সকে তখন আরও জমাট দেখাল।

শুধু একটাই চিন্তা— বোরহার লাল কার্ড দেখে পরের রবিবার দেল পিয়েরোদের দিল্লি ডায়নামোসের বিরুদ্ধে যুবভারতীতে থাকতে না পারাটা! হাবাসের স্ট্র্যাটেজিতে বোরহা ডিফেন্সিভ ব্লকার হিসেবে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ভুমিকা নিচ্ছে কলকাতার আটলেটিকোর খেলায়।

আটলেটিকোর লোহার বাসরঘরে বোরহা-ছিদ্র দিয়ে দেল পিয়েরো যেন মারণসাপ হয়ে না ঢোকে সামনের রবিবার!

আটলেটিকো দে কলকাতা: শুভাশিস, ডেঞ্জিল, হোসেমি, অর্ণব, বিশ্বজিত্‌, বোরহা, নাতো, হোফ্রে (পদানি), গার্সিয়া (আর্নাল), ফিকরু, বলজিত্‌ (সঞ্জু)।

গুয়াহাটিতে প্রাপ্তি

• ফিকরু তেফেরার অবিশ্বাস্য গোল। সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে থাকলেন তিনি।

• দুটোর মধ্যে দুটো জিতে লিগ টেবলের শীর্ষে থাকা।

• ১৮০ মিনিট খেলেও কোনও গোল হজম করেনি আটলেটিকো।

• লাল কার্ড দেখে বোরহা ফার্নান্দেজ ছিটকে যাওয়ায়, শেষ কয়েক মিনিট দশ জন ফুটবলার নিয়ে খেলেও দ্বিতীয় গোল করে আটলেটিকো।

• গত ম্যাচে আর্নাল লিবার্টের মতো এ দিনও পরিবর্তে নামা আর এক ফুটবলার পদানি গোল করলেন।

• লুই গার্সিয়া আবার গোলমুখী পাস বাড়ালেন ফিকরুকে। যে জুটির সাহায্যে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে আটলেটিকোর ফরোয়ার্ড লাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement