সুদীপ। বাংলার ধারাবাহিক সাফল্যের মুখ। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
অশোক দিন্দা এখন একটা কাগজের টুকরো নিয়ে ঘুরছেন। প্র্যাকটিসে মাঝে মাঝেই ওটা বার হচ্ছে। কী সব টুকেও রাখছেন।
কাগজটায় বঙ্গ পেসারদের নেট পারফরম্যান্স নোট করা থাকছে! মানে বীরপ্রতাপ সিংহ বা প্রীতম চক্রবর্তী ক’টা বল জায়গায় রাখলেন, ক’টা থাকল না, মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। আর দেখছেন অশোক দিন্দা।
“আমি টিমের সবচেয়ে সিনিয়র বোলার। আমাকেই করতে হবে। এই তো আজ নেটে স্পট তৈরি করে বল করে গেলাম পেসাররা,” ক্লাবহাউসে দাঁড়িয়ে বলছিলেন বেঙ্গল এক্সপ্রেস। বাংলার তরুণ পেসাররা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সঠিক লেংথ খুঁজে পাচ্ছেন না দিন্দা দেখে নিচ্ছেন। সতীর্থ পেসারদের অনভিজ্ঞতায় তাঁর চাপ বাড়ছে দিন্দা বুঝে নেবেন।
টিমের এক নম্বর পেসারের হাঁটাচলা, কথাবার্তা দিয়ে যুদ্ধের আবহ বিচার করতে বসলে মারাত্মক ভুল হবে। দীনেশ কার্তিককে প্র্যাকটিসের ফাঁকে ঠাট্টাচ্ছলে দিন্দার ‘কী রে, শেষ দু’বারই আমাদের কাছে হেরেছিস, মনে আছে?’ মন্তব্য বড়জোর টিমটার বহিরঙ্গ ব্যাখ্যা করতে পারে। ডব্লিউ ভি রামনের টিমের বিরুদ্ধে নামার চব্বিশ ঘণ্টা আগে লক্ষ্মীরতন শুক্লর সংসারের অভ্যন্তরীণ দৃশ্য অনেকটাই আলাদা।
সেখানে পিচ নিয়ে টেনশন। টিম নিয়ে জট।
ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে টিম বাছা যাচ্ছে না, এমন নয়। টিম একটা তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেটা বাংলা নির্বাচকদের এগারোর সঙ্গে মিলছে না। নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচকরা প্রথম এগারো বাছেন না। কিন্তু মুম্বই ম্যাচে বিশ্রী ভাবে পয়েন্ট হারানোর পর সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার ঘরে যে বৈঠক বসে, সেখানে নির্বাচকেরা বলেছিলেন ১৫ জনের দল নয়, এগারোর করো। এখানে, সবার সামনে। সেই টিমে কোনও রোহন বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন না। চাওয়া হয়েছিল নতুন রক্ত। ঠিক হয়েছিল, অরিন্দম দাস এবং অভিমন্যু ঈশ্বরণ ওপেন করবেন। লোয়ার মিডল অর্ডারে সন্দীপন দাসের মতো কোনও তরুণ। কিন্তু বাংলা সোমবার যে দল নামাচ্ছে, সেখানে আপাতত সন্দীপন দাসের জায়গা নেই। রোহন সেই টিমে আছেন। প্রশ্ন উঠছে, শনিবার পর্যন্ত নির্বাচকদের টিমের সঙ্গে সায় দিয়েও আচমকা আবার বদলানো হল কেন? শোনা গেল, সিদ্ধান্তটা বাংলা কোচ অশোক মলহোত্রের।
টুকরো টুকরো বিতর্কের এমন স্ফুলিঙ্গ এখানেই শেষ নয়। টিমের এক সিনিয়র মিডিয়ার কাছে অনুযোগ করে গেলেন, তাঁকে সব সময় টিম মিটিংয়ে ডাকা হচ্ছে না। টিম যে অভিযোগ ওড়াল। পিচ নিয়েও অভাবিত ধোঁয়াশা। ইডেনের যে পিচে আজ থেকে বাংলা-তামিলনাড়ু ম্যাচ, সেটা বিশ্বরেকর্ডের পিচ। রোহিত শর্মা গত নভেম্বরে যেখানে ২৬৪ করেছেন, যেখানে তার পর কোনও ম্যাচ হয়নি। খালি চোখে দেখে আদ্যন্ত সবুজ পিচ মনে হবে। কিন্তু বাংলা টিম ম্যানেজমেন্টের কেউ কেউ বললেন, দেখতে সবুজ। কিন্তু পিচের চরিত্র গ্রিন টপের মতো হবে না।
ডব্লিউ ভি রামন পুরনো ছাত্রদের বেকায়দায় পেয়ে তাঁর হাসি চওড়া হচ্ছে? “বাস দাঁড়িয়ে আছে। যাই,” বলে দৌড় দিলেন প্রাক্তন বাংলা কোচ। বলবেন কী, পুরনো ছাত্রদের তিন ম্যাচে চার পয়েন্ট হলে তাঁর তামিলনাড়ুরও চার ম্যাচে দশ।
পয়েন্ট-ক্ষুধার রাজ্যে দুই টিমের পৃথিবীই গদ্যময়। প্রতিশোধ বা গুরুদক্ষিণার পূর্ণিমা-চাঁদ এখন ঝলসানো রুটি।