নিয়মরক্ষার ম্যাচে কোহলিকে হুঁশিয়ারি জাদরানের

চার দশকের মারের শোধ বাইশ গজে নিতে চায় আফগানিস্তান

জীবনে কখনও যদিও ওয়াসিম আক্রমের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হয়ে যায়, কী যে বলবেন, আজও ভেবে উঠতে পারেননি শাপুর জাদরান। ছোটবেলায় পেস-পাঠ নেওয়ার সময় ইচ্ছে হত ওয়াসিম আক্রমের মতো হওয়ার। মনোজ প্রভাকরকেও মন্দ লাগত না।

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৪ ০৮:৩৭
Share:

আফগান-চমক জাদরান

জীবনে কখনও যদিও ওয়াসিম আক্রমের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হয়ে যায়, কী যে বলবেন, আজও ভেবে উঠতে পারেননি শাপুর জাদরান।

Advertisement

ছোটবেলায় পেস-পাঠ নেওয়ার সময় ইচ্ছে হত ওয়াসিম আক্রমের মতো হওয়ার। মনোজ প্রভাকরকেও মন্দ লাগত না। ইচ্ছে হত, একদিন পাকিস্তানের হয়ে খেলবেন। পাকিস্তানের জার্সিতে নয়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আজ খেলতে হয়। আর ওয়াসিম আক্রমের সঙ্গে দেখা হলেও কথা বলা হয়ে ওঠেনি। কেন? শোনা গেল, ছ’ফুট দুইয়ের আফগান দৈত্যকে চুল উড়িয়ে ছুটে আসতে দেখে যতটা ভয়াবহ লাগে, অতটা মোটেও নন। ভেতরে ভেতরে বাঁ হাতি পেসার নাকি বেশ মুখচোরা, বহির্বিশ্বের ভাষার সঙ্গে বিশেষ পরিচয় নেই, ভিনদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে হলে ডাক পড়ে টিম ম্যানেজারের এবং তাঁর মাধ্যমেই ফোনে উত্তর আসে, “কী বলব আক্রমকে? অত বড় একজন ক্রিকেটার!”

বাংলাদেশকে হারানোর রাতটা ভুলে যাওয়া জীবনে আর সম্ভব হবে না মহম্মদ নবির। ঐতিহাসিক শনিবারে কাবুল-পেশোয়ারের রাস্তায় রাতে গোটা আফগানিস্তানের নেমে আসা, দেশের মন্ত্রী-আমলাদের মুহুর্মুহু ফোন, ঘুম ভুলে নাচানাচি সব ক’টা ফ্রেম পরপর মনে আছে, থাকবেও আফগান অধিনায়কের। শুধুই অধিনায়ক কী? আফগান শিবিরের সঙ্গে কথা বললে মনে হবে, তাঁকে অনায়াসে আরও একটা বিশেষণে অভিহিত করা যায়। আফগান ক্রিকেটের ‘ফিদেল কাস্ত্রো’ বা ‘চে গেভেরা’! বলাবলি চলছে, যুদ্ধ-নিপীড়িত দেশে ক্রিকেট-বিপ্লব সম্ভব হয়েছে নাকি তাঁরই জন্য।

Advertisement

সংক্ষেপে, বুধবার বিরাট কোহলিদের প্রধান দুই প্রতিপক্ষ। যাঁদের সাফল্য বা ব্যর্থতা ঠিক করে দেবে টুর্নামেন্টে ভারতের সম্মানরক্ষা।

প্রথম জন আফগান-আগ্রাসনের প্রতিমূর্তি। ভেতরে লাজুক হলেও মাঠে শাপুর জাদরানের কাছে স্পিডোমিটারে ঘণ্টায় একশো পঁয়তাল্লিশ কিলোমিটার কোনও ব্যাপার নয়। যিনি অক্লেশে বিরাট কোহলির উদ্দেশ্যে ফোনে বাংলাদেশ থেকে হুঙ্কার দিলেন, “নতুন বলেই ওকে ফেরাতে হবে।”

দ্বিতীয় জন শ্রীযুক্ত আফগানিস্তান ক্রিকেট। এবং মহম্মদ নবিও শুনিয়ে রাখলেন, আফগানিস্তান টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেবে লোকজনের করুণা নিয়ে নয়, আতঙ্ক ছড়িয়ে, যোগ্য প্রতিপক্ষের মর্যাদা নিয়ে। বলেও দিলেন, “আমাদের টিমটা কমপ্লিট ওয়ান ডে প্যাকেজ। আপসেট নয়, ভারতের বিরুদ্ধে আরও একটা ইতিহাসই টার্গেট!”

স্তম্ভিত লাগবে শুনলে। যে দেশে ক্রিকেট শুরু হয়েছে সবে উনিশ বছর, অভিজ্ঞতার বিচারে যারা এখনও ‘দুগ্ধপোষ্য শিশু’, তাদের এতটা আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে আসে? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ’৯৫ সালে তালিবান জমানায় যখন ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয় আফগানিস্তানের, দেশে ক্রিকেট স্টেডিয়াম দূরস্থান, একটা পিচ পর্যন্ত ছিল না! গোটা দেশে একটাই উইকেট ছিল, সেটাও সিমেন্টের! ইংলিশ উইলো দূরস্থান, কাঠের টুকরো দিয়ে কাজ চালাতে হত। সঙ্গে দেশজুড়ে গুলিগোলার গর্জন। চোখের সামনে রক্তারক্তি, বোমার আঘাতে সর্বসমক্ষে মৃত্যুমিছিল অপরিচিত নয় নবিদের কাছে।

জালালাবাদে জন্মের পর একটা সময় ষোলোটা বছর উদ্বাস্তু শিবিরে কাটাতে হয়েছিল নবিকে। যেখানে তাঁর ক্রিকেট শুরু, যে জীবন নিয়ে জিজ্ঞেস করলে এখনও হতাশা আসে, “সব বলতে গেলে দেড় ঘণ্টা লেগে যাবে। রিফিউজি বলে একটা সময় খাবার, জলের জন্যও লড়তে হয়েছে।” ওই অবস্থা থেকে পরবর্তী জীবনে এমসিসি-র বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি, এমসিসি-র হয়েই খেলা, শেষে আফগান অধিনায়ক। শাপুর জাদরান আবার ছোটবেলায় জানতেনও না, সুইং বোলিং কাকে বলে। জানতেন, শুধু সামনের উইকেটটা ছিটকে দিতে হবে! “প্রচণ্ড গতিতে বলটা করতে চাইতাম। তা ছাড়া আমার হাইট ভাল ছিল। তাই বাউন্সারও দিতাম,” বলে দেন শাপুর। যে গতিকে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ খেলে ফেলা, গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সহবাগ-গম্ভীরের উইকেট এবং এশিয়া কাপে ভারত-যুদ্ধের আগে কোহলিকে নিয়ে বলে দেওয়া, “পেস, বাউন্সেই ওকে ফেরাতে চাই। যতটা সম্ভব কোহলির উপর চাপ তৈরি করতে হবে। তা হলে ভারতও চাপে পড়বে।”

আজ আর সিমেন্টের উইকেট নেই আফগানিস্তানে। বরং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উপযোগী দু’টো স্টেডিয়াম আছে। দশ-বারোটা ক্রিকেট অ্যাকাডেমি আছে। ক্রিকেট এখন কাবুলিওয়ালার দেশে এক নম্বর স্পোর্ট, স্কুলপাঠ্যে ঢুকে পড়েছে ক্রিকেট। এবং ভারত-যুদ্ধের আগে জাদরানদের আগুনে আত্মবিশ্বাস প্রসঙ্গে রীতিমতো কানে বাজবে ফোনে আফগান ম্যানেজার সফিকুল্লাহ স্তানিকজাইয়ের কথাগুলো।

চারটে দশক তো ওরা শুধু পড়ে পড়ে মার খেয়েছে। এখন আর ভয় পাবে কাকে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement