লাল-হলুদে র্যান্টির প্রথম দিন। বুধবার। ছবি: উৎপল সরকার।
ভারতে আসার পর প্রথম বার কোটি সমর্থকের ক্লাবে সই করা র্যান্টি মার্টিন্স বলে দিলেন, “সমথর্কদের চাপ নিতে পারব বলেই ইস্টবেঙ্গলে সই করেছি। এ বার ইস্টবেঙ্গলকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করে সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।”
জাতীয় লিগ এবং আই লিগ মিলিয়ে পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন দলে থাকার অভিজ্ঞতা আছে র্যান্টির। আই লিগে টানা তিন বার সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন। কিন্তু সেগুলো সবই ডেম্পো বা ইউনাইটেড স্পোর্টসে। যাদের সমর্থক খুবই কম।
র্যান্টি সম্পর্কে এত দিন বলা হত, ভর্তি গ্যালারির চাপ নিতে পারবেন না বলেই বারবার প্রস্তাব দেওয়া সত্ত্বেও ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানে খেলতে তিনি রাজি হন না। সেই র্যান্টি সই করার পর বুধবার প্রথম পা রাখলেন ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে। এ বার ইস্টবেঙ্গলে খেলার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললেন নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার। বলে দিলেন, “ইউনাইটেডে থাকার সময়ে আমি কলকাতার ফুটবল আবহের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। ইস্টবেঙ্গলের মতো সমর্থক সমৃদ্ধ ক্লাবে খেলার আমার মানসিকতাও তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাই মনে করেছি এটাই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সেরা সময়। তা ছাড়া সঙ্গে পাচ্ছি আর্মান্দো কোলাসোর মতো একজনকে। যিনি আমার সব জানেন।”
ইস্টবেঙ্গলে নিজের পাশে কাকে সঙ্গী হিসেবে পেতে চান র্যান্টি? কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বলে দিলেন, “ক্লাব কর্তারা এটা ঠিক করবেন। তবে চিডি যদি থাকে খুব ভাল হয়। ডেম্পোতে আমরা এক সঙ্গে খেলেছি। চিডির সঙ্গে আমার বোঝাপড়াও খুব ভাল। ওর সঙ্গে জুটি হলে জমবে।” র্যান্টি চাইলেও চিডি যে ক্লাব ছাড়তে চাইছেন! মঙ্গলবারই তিনি আনন্দবাজারকে বলে দিয়েছেন, “ইস্টবেঙ্গলে আমি আর খেলতে চাই না।” র্যান্টিকে নিয়ে এ দিন লাল-হলুদ তাঁবুতে সাংবাদিক সম্মেলন হলেও চিডির থাকা নিয়ে তাই নানা প্রশ্ন এবং গুঞ্জন শুরু হয়েছে ক্লাব জুড়ে। শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, “চিডির এজেন্টের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা চিডিকে থাকার প্রস্তাব দিয়েছি। যার থাকার থাকুক, না হলে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’।” শোনা যাচ্ছে, চিডিকে যে টাকায় খেলতে বলছে ইস্টবেঙ্গল তাতে তিনি ক্ষুব্ধ। আগের বারের তুলনায় যা কম।
গত চার বছরে তিন বার আই লিগে রানার্স হয়েছে ইস্টবেঙ্গল। এক বার তৃতীয় স্থানে শেষ করেছেন চিডিরা। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দেবব্রতবাবু ফুটবলারদের দিকেই ঘুরিয়ে আঙুল তুললেন। “সিনিয়র ফুটবলারদের আরও দায়িত্ব নিতে হবে।” সম্ভবত এ জন্যই গতবারের অধিনায়ক মেহতাব হোসেনকেও এক হাত নেন তিনি। দেবব্রতবাবুর যুক্তি, “মেহতাব চোটের জায়গায় অস্ত্রোপচার করেছে ক্লাবকে না জানিয়ে। এটা তো দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়।” শীর্ষ কর্তার মন্তব্যের পর ময়দানে জোর গুঞ্জন মেহতাবকে কি আর রাখতে চাইছে না ইস্টবেঙ্গল?
সব মিলিয়ে মরসুমটা মোটেও ভাল যায়নি ইস্টবেঙ্গলের। কলকাতা লিগ পেলেও সর্বভারতীয় স্তরে কোনও ট্রফি নেই। তাই র্যান্টি-আর্মান্দো ‘লাকি’ জুটির ওপর ভরসা করেই আই লিগ কলকাতায় আনতে চাইছেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। ডেম্পো ফর্মুলায়। র্যান্টি নিজেও বললেন, “আট বছর ডেম্পোতে ছিলাম আর্মান্দোর কোচিংয়ে। আই লিগ, ফেড কাপ-সহ বহু ট্রফি জিতেছি। এ বার আবার আই লিগ জিততে চাই লাল-হলুদ জার্সিতে। সে জন্যই আর্মান্দোর দলে আসা।” র্যান্টি যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন তখন পিছনের দরজা দিয়ে সস্ত্রীক বেরিয়ে গেলেন সুয়োকা। তার সঙ্গেও এখনও কথা বলেননি কর্তারা। এ দিকে, ভাসুম যোগ দিচ্ছেন পুণে এফ সি-তে। সেখানে কোচ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে করিম বেঞ্চারিফার। তবে কোচের তালিকায় না থাকলেও নওবা সিংহ এবং বলজিৎ সিংহকে এখনও রিলিজ দেয়নি ইস্টবেঙ্গল।