শহরে ওয়াকার...দমদম বিমানবন্দরে ওয়াকার। শুক্রবার। ছবি: শৌভিক দে।
মহম্মদ শামির ক্রিকেট-রূপকথার শুরু যে এই শহরে, তা জানবেন না, তা আবার হয়? তাই তাঁর নাম শোনা মাত্রই বেশ ঝলমল করে উঠলেন ‘সুলতান অব সুইং’। এই নতুন তারকার মতো আরও পেস-প্রতিভা তৈরি করতেই যে তাঁর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের শহরে আগমন, শুক্রবার রাতে পৌঁছেই জানিয়ে দিলেন ওয়াকার ইউনিস।
গোলাপি-সাদা ডোরাকাটা টি শার্ট আর ঘি রঙের ট্রাউজারে প্রাক্তন পাকিস্তান অধিনায়ককে এমনিতেই বেশ তরতাজা দেখাচ্ছিল এ দিন সন্ধ্যায়। শামির প্রসঙ্গ তোলায় মনে হল আরও কিছুটা তাজা বাতাস এসে লাগল শরীরে। উত্তরপ্রদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কলকাতায় আসার পর মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে যিনি মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পেসার হয়ে উঠেছেন, সেই শামিকে নিয়ে ওয়াঘার ওপারের সর্বকালের অন্যতম সেরা পেসার ওয়াকার বললেন, “শামির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। খুব ভাল ছেলে। ভাল বলও করছে। নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশে তো ভারতীয় দলের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল বল করেছে ও-ই। আসলে ওর মতো প্রতিভা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সেগুলোকে ঠিকমতো বেছে নিতে হয়। এখানে তো সে জন্যই আসা।”
পেস বোলারের খনি বলতে এই উপমহাদেশে পাকিস্তানের রমরমা বরাবর। তাই ভারতের একটি অংশে গিয়ে যে সেখানকার পেস-প্রতিভা অন্বেষণ ও তাদের নিজের হাতে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে তাঁকে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে থেকে এমন প্রস্তাব পেয়ে বেশ খুশিই হন ওয়াকার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আটশোর কাছাকাছি উইকেট নেওয়া প্রাক্তন পাক পেসার বললেন, “এই প্রকল্পে যুক্ত হতে পেরে ভাল লাগছে। উপমহাদেশের ছেলেদের এ ভাবে গড়ে তোলা তো আমাদের দায়িত্ব। আমার পক্ষেও ভাল অভিজ্ঞতা হবে। আমাকে সুযোগ দেওয়ার জন্য এই প্রকল্পের উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।”
বঙ্গ ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা সিএবি-র ‘ভিশন ২০২০’ প্রকল্পের উদ্যোক্তা যে খোদ প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, তা জানার পরই এই প্রস্তাব নিয়ে আর দু’বার ভাবেননি ৪২ বছর বয়সী ওয়াকার। বলেন, “সৌরভ আর আমি একসঙ্গে খেলেছি। ও আমাকে খুব ভাল করে জানে। আমি কী করতে পারি বা না পারি, সেই সম্পর্কে খুব ভাল ধারণা ওর। সে জন্যই ও আমাকে ডেকেছে।”
যদিও বাংলার ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কোনও ধারণা নেই পাকিস্তান দলের প্রাক্তন বোলিং কোচের, তবে তাতে তাঁর কোনও অসুবিধা হবে না বলে মনে করেন ওয়াকার। বলেন, “উপমহাদেশে কেমন পদ্ধতিতে কী ফল হয়, তা জানা আছে। এই অঞ্চলের ক্রিকেটারদের মানসিকতা, তারা কী পরিস্থিতিতে কী ভাবে, তাও অজানা নয়। বরং আমার সুবিধাই হবে এখানকার ছেলেদের প্রশিক্ষণ দিতে।”
সিএবি-র উদ্যোগের প্রশংসা করে ওয়াকারের পরামর্শ, “শুধু কলকাতায় কেন এমন প্রকল্প হচ্ছে? ভারতের অন্যান্য অংশে, শ্রীলঙ্কায় সব জায়গাতেই এমন প্রকল্প হওয়া উচিত। পাকিস্তানেও এর আগে এমন পেসার তৈরির শিবির করা হয়েছে, যেখানে ইমরান খান, ওয়াসিম আক্রমদের মতো পেসাররা যুক্ত ছিল। এটা দারুণ উদ্যোগ। আজকাল প্রচুর ক্রিকেট হয় চার দিকে। সব সময়ই এখানে প্রচুর প্রতিভাবান ক্রিকেটারের প্রয়োজন হয়। সে জন্যই এগুলো করা দরকার।”
পেশাদার বোলারদের সঙ্গে কাজ করা ও তরুণ, উঠতিদের গড়ে তোলার মধ্যে যে দ্বিতীয়টিই বেশি সহজ, তা মেনে নিয়ে ওয়াকার এ দিন বলেন, “ছোটদের প্রশিক্ষণ দেওয়াটা বরং অনেক সহজ। ওরা অনেক কিছু শিখতে চায়। কারণ, ওরা নতুন। উন্নতি করার প্রবল ইচ্ছা থাকে ওদের মধ্যে। আমি নিজেই তো এমন এক দৃষ্টান্ত। ছোট শহর থেকে এসেছিলাম, তার পর অনেকের সাহায্যে নিজেকে ক্রমশ তৈরি করেছি। তাই ওদের ব্যাপারটা ভাল বুঝি আমি। এখানে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।”
শুক্রবার রাত পৌনে এগারোটা নাগাদ শহরে এসে পৌঁছন এই প্রকল্পের আর এক তারকা প্রশিক্ষক মুথাইয়া মুরলীধরন। তিনি বলেন, “এখানে ভাল মানের স্পিনার তৈরির উদ্দেশে এসেছি। এমন একটা প্রকল্পে যুক্ত হতে পেরে আমি সম্মানিত। এর জন্য সৌরভকে ধন্যবাদ।”