হারের পরে টেনিসের গ্ল্যামার গার্ল। মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি
এক দিনে জোড়া ইন্দ্রপতন! উইম্বলডনে মারিয়া শারাপোভাই নেই! আর বিশ্বের এক নম্বর রাফায়েল নাদালকে ছিটকে দিলেন ১৯ বছর বয়সি অস্ট্রেলিয়ান নিক কিরগিওস! যিনি নাদালের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে ‘মাত্র’ ১৪৩ ধাপ! তবে তরুণ প্রজন্মের দাপটের দিনেও উইম্বলডনের রাজা রজার অম্লান। বত্রিশেও!
দু’বছর আগে এ রকমই বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম একশোর বাইরে থাকা রসোলের কাছে দ্বিতীয় রাউন্ডে হেরেছিলেন নাদাল! গত বার বিদায় প্রথম রাউন্ডেই! এ বার হার টিনএজার ওয়াইল্ড কার্ডধারীর কাছে! প্রাক্তন জুনিয়র বিশ্বসেরা কিরগিওস গত বছরও জুনিয়র উইম্বলডন খেলেছেন। দু’বারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন নাদালের কাছে কি ইদানীং ঘাস অখাদ্য হয়ে উঠছে? এ বার প্রথম তিন রাউন্ডই জিতেছিলেন প্রথম সেট হেরে। এ দিনও সেটাই ঘটায় মনে হচ্ছিল এটাই বুঝি এখন নাদাল-স্টাইল! কিন্তু বিশ্বকাপে তাঁর দেশের কোচ দেল বস্কি টিমের ফর্ম বুঝতে না পারুন, স্প্যানিশ টেনিস সুপারস্টার হয়তো বুঝেছিলেন, কিরগিওস কঠিন হার্ডল। নইলে কেন আগের দিনই নাদাল সাফাই দেবেন, “টেনিসে এখন তরুণ প্রজন্ম ভয়ঙ্কর! কিরগিওস যে ভাবে এখানে ১৩ নম্বর বাছাই রিচার্ড গাস্কের সঙ্গে ন’টা ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়ে জিতেছে!” ছ’ফুট চার ইঞ্চি, ৭৮ কেজির দীর্ঘকায় মেলবোর্নবাসীর ৩৭টা ‘এস’ আর ৭০টা ‘উইনার’-এর সামনে বেসামাল দেখিয়েছে ১৪ গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়নকে।
দ্বিতীয় বাছাই নাদালকে কিরগিওসের ৭-৬ (৭-৫), ৫-৭, ৭-৬ (৭-৫), ৬-৩ হারানো দেখে জন ম্যাকেনরোর মন্তব্য, “শেষ এ রকম দেখেছিলাম তরুণ বরিস বেকারকে। যে ওই বয়সেই মনে করত, বিশ্বের সবাইকে হারাতে পারে!” তবে এক জন কিন্তু মোটেই আশাবাদী ছিলেন না নাদাল-বধের ব্যাপারে। কিরগিওসের মা নোরালিয়া অস্ট্রেলীয় টিভিতে বলেছিলেন, “নাদাল আমার ছেলের তুলনায় একটু বেশিই ভাল প্লেয়ার। নিক পারবে না।” জেতার পর কপট রাগ দেখিয়ে কিরগিওস বলেন, “মা-র কথায় খুব রাগ হয়েছিল। তবে যে কেউই যে কোনও কিছু ভাবতে পারে!”
শারাপোভার আবার টিনএজার হিসাবে উইম্বলডন জয়ের এটা দশম বছর। শেষ ন’টা উইম্বলডনে টেনিসের গ্ল্যামার গার্ল কখনও কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেননি। তা সত্ত্বেও অল ইংল্যান্ড ক্লাবের ঘাসে মেয়েদের সিঙ্গলস মানেই শারাপোভা-সিনড্রোম! এ বার প্রথম দুই বাছাই সেরেনা উইলিয়ামস আর লি না ছিটকে যাওয়ায় শারাপোভা নিয়ে মাতামাতি আরও বেশি। কিন্তু চতুর্থ রাউন্ডে জার্মান নবম বাছাই অ্যাঞ্জেলিক কের্বারের কাছে আড়াই ঘণ্টার লড়াইয়ে ৬-৭ (৪-৭), ৬-৪, ৪-৬ হারের পর শারাপোভার খেলার ধরন নিয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে নানা টিপ্পনি! ‘মাশাকে তো স্পনসররা পছন্দ করবেই। নিশ্চিন্ত গেমগুলোকেও ও একেবারে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়। আর দর্শকদের টিকিটের দাম সুদে-আসলে মিনিটে দেয়। দীর্ঘ সময় কোর্টে নিজেকে প্রকাশ্য রেখে!’ কের্বারের বিরুদ্ধেও ছ’টা ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচানোর মধ্যে যেমন ২৭ বছরের শারাপোভার লড়াকু চরিত্র স্পষ্ট, তেমনই কের্বারের মাত্র ১১ আনফোর্সড এররের পাশে শারাপোভার ৪৩টা অনিচ্ছাকৃত ভুলের মধ্যে তাঁর বিশৃঙ্খল টেনিস-চরিত্রও স্পষ্ট। তা সত্ত্বেও বরিস বেকারের এ বারের মেয়েদের বিভাগে কালো ঘোড়া কের্বার জিতে উঠে বলেছেন, “অবিশ্বাস্য লাগছে! যাকে হারিয়েছি সে ঘাসের কোর্টের গ্রেট প্লেয়ার।”
ফেডেরার সেখানে বিশ্বকাপে স্বদেশের ম্যাচ টিভিতে দেখবেন বলে সাততাড়াতাড়ি কোয়ার্টার ফাইনাল উঠে পড়েন! সাত বারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন প্রথম সেট মাত্র ২১ মিনিটে তুলে নিয়ে, দ্বিতীয় সেটে নিজের সার্ভে একটাও পয়েন্ট না খুইয়ে চতুর্থ রাউন্ডে টমি রব্রেদোকে ৬-১, ৬-৪, ৬-৪ হারিয়ে উঠে বলেন, “মেসির বিরুদ্ধে আমার দেশের খেলা দেখতে হবে না? সুইৎজারল্যান্ডের এত গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বকাপ ম্যাচটা লাইভ দেখব বলে একটু তাড়াতাড়ি জেতার চেষ্টা করেছি আজ।” একইসঙ্গে গত ইউ এস ওপেনের শেষ ষোলোয় রব্রেদোর কাছে ছিটকে পড়ার শোধও তুললেন রজার।
মহাঅঘটন-ঘটনার মধ্যে ছেলে-মেয়েদের শেষ আটে ওয়ারিঙ্কা-ফেডেরার, রাওনিক-কিরগিওস, কিংবা বাউচার্ড-কের্বার, লিসিকি-হালেপ লাইনআপ, কিভিতোভা ও শাফারোভার সেমিফাইনালিস্ট হওয়া কিংবা ডাবলসে ইন্দো-পাক এক্সপ্রেসের (বোপান্না-কুরেশির) দ্বিতীয় রাউন্ডেই বিদায় সংক্ষিপ্ত খবরের বেশি গুরুত্ব পাওয়ার কথা নয়। এবং পাচ্ছেও না!