খবর প্রকাশের পরেই পরেই খুশির খবর পয়েছিলেন শ্বেতা। নিজস্ব চিত্র।
কুস্তি লড়তে গেলে বড্ড খিদে পায়। আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন শ্বেতা দুবে। জানিয়েছিলেন, টানা তিন বার রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হলেও অনুশীলন চালিয়ে যেতে এখন অর্থের প্রয়োজন। দরকার একটা চাকরি। সেই খবর পড়ে একটি বেসরকারি সংস্থা শ্বেতাকে মাসিক বৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করল। সোমবারই ওই সংস্থার দফতরে ডেকে শ্বেতার হাতে প্রথম বৃত্তির অর্থ তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ওই সংস্থা তাদের এই কাজের কোনও প্রচার চায় না। তাই সংস্থার নামটি প্রকাশ করা গেল না। আপাতত এক বছর শ্বেতাকে বৃত্তি দেবে তারা। বৃত্তির নথিপত্রহাতে পাওয়ার পরে অনেকটাই নিশ্চিন্ত শ্বেতা বলেন, ‘‘ওই সংস্থার প্রতি তো বটেই, আনন্দবাজার অনলাইনের প্রতিও আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। নিজেকে তৈরি করার ক্ষেত্রে আমার দায়িত্ব বেড়ে গেল।’’
শ্বেতাকে নিয়ে খবর প্রকাশের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ওই সংস্থা। আর্জি ছিল, শ্বেতার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে হবে। কারণ, তারা শ্বেতাকে আর্থিক সহায়তা দিতে চায়। শর্ত একটাই— প্রচার না করে গোপন রাখতে হবে সংস্থার নাম। শ্বেতা তখন ব্যক্তিগত কাজে রাজ্যের বাইরে। তাই তখনই তাঁর হাতে সাহায্য তুলে দেওয়া যায়নি। শ্বেতা কলকাতায় ফেরার পর দেরি না করে ওই সংস্থা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের দফতরে ডেকে শ্বেতার হাতে আর্থিক বৃত্তি তুলে দিয়েছে। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, আপাতত এক বছরের জন্য বৃত্তি দেওয়া হবে শ্বেতাকে। তার পর অবস্থা বুঝে তার মেয়াদ বাড়ানো হবে। কিন্তু ওই সংস্থার কর্তৃপক্ষ চান, কাজের চাপ না নিয়ে যেন আখড়ায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করে কুস্তির অনুশীলন চালিয়ে যেতে পারেন স্বপ্নদ্রষ্টা কুস্তিগির। তাই ‘বেতন’ নয়। ‘বৃত্তি’।
ছোট থেকে আখড়ায় যাওয়া বাংলার শ্বেতা এখন ভারতের জাতীয় কুস্তি দলেরও সদস্য। টোকিও অলিম্পিক্সে কুস্তিতে ভারতের পদকপ্রাপ্তির পরে শ্বেতার কুস্তি চালিয়ে যাওয়ার খিদে আরও বেড়ে যায়। সেই খিদের উল্লেখ করে অন্য খিদের কথাও জানিয়েছিলেন শ্বেতা। বাংলার ‘দঙ্গল-কন্যা’ বলেছিলেন, ‘‘কুস্তি লড়তে গেলে অনেক দুধ-ঘি-মাখন খেতে হয়। দিনে কমপক্ষে হাফ ডজন ডিম খাওয়া দরকার। আরও অনেক কিছুই খেতে হয়। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আমি তবু খাবার পেয়েছি। কিন্তু এখন কুস্তি শিখতে আসে মূলত গরিব বাড়ির ছেলেমেয়েরা। তারা বেশিদিন চালাতে পারে না। সত্যি করেই বলছি, কুস্তিতে বড্ড খিদে পায়।’’ পাশাপাশিই শ্বেতা বলেছিলেন, ‘‘আমার গুরুজি (কোচ) খুবই ভাল প্রশিক্ষণ দেন। কিন্তু আরও ভাল কোচিং দরকার। কিন্তু সেই সুযোগ নেই এখানে। অর্থাভাবেই আমার মতো অনেকেই কুস্তিকে ভালবাসলেও এগোতে পারে না।’’ আদতে শ্যামবাজার এলাকার মেয়ে হলেও এখন শ্বেতা থাকেন হুগলির ডানকুনিতে। তবে এখনও অনুশীলনের জন্য ছেলেবেলার আখড়া কলকাতার জোড়াবাগানের কাছে পঞ্চানন ব্যায়াম সমিতি ছাড়েননি।
শ্বেতার ‘গুরুজি’ অসিত সাহা একইসঙ্গে রাজ্য কুস্তি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকও। শ্বেতার মুখে হাসি ফোটায় তিনিও খুশি। আনন্দবাজার অনলাইনকে অসিত বলেন, ‘‘শ্বেতা একা নয়, এমন অনেক ছেলেমেয়েই বাংলার সম্পদ। আরও ভাল কোচিং, আরও ভাল ম্যাট দরকার ওদের প্রশিক্ষণের জন্য। সুযোগ পেলে শুধু দেশের মধ্যে নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বাংলার জন্য গর্ব ছিনিয়ে আনতে পারে, এমন অনেকেই আছে। শ্বেতা তাদের মধ্যে অন্যতম সেরা। ও যে সুযোগ পেল, তা বাকিদেরও প্রেরণা জোগাবে। আগ্রহ বাড়াবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কুস্তির মতো অজনপ্রিয় খেলার উন্নতিতে যে সংস্থা এগিয়ে এসেছে, তাদের কথা চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু তারাই তা চায় না। তাই নাম না করেই বাংলার কুস্তি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও ওই সংস্থার শ্রীবৃদ্ধি কামনা করছি। একই সঙ্গে যে ভাবে আনন্দবাজার অনলাইন শ্বেতাকে আলো দেখিয়েছে, তাতে তাদেরও কুর্নিশ।’’