নির্মম: রবিবার সংসদ অভিযানের আগেই দিল্লি পুলিশের হাতে বন্দি সাক্ষী মালিক। টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কুস্তিগিরকে। ছবি: পিটিআই।
বিশ্বমঞ্চে একদিন যাঁরা দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন, তাঁরাই ভূলুণ্ঠিত হলেন রাজধানীর রাজপথে। বিনেশ ফোগট, সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়াদের দুর্দশা দেখে চুপ করে থাকতে পারেননি অলিম্পিক্সে ইতিহাস সৃষ্টিকারী নীরজ চোপড়া, বিজেন্দ্র সিংহের মতো ক্রীড়াবিদরা। আর চোখের জলে বিনেশরা প্রশ্ন করেছেন, ‘‘আমাদের কি এটাই প্রাপ্য ছিল?’’
বিনেশ, সাক্ষীদের টেনে হিঁচড়ে পুলিশ ভ্যানে তোলার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে। যে ভিডিয়োর ছবি দেখে অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জজয়ী বক্সার বিজেন্দ্র সিংহ টুইট করেন, ‘‘আজ আমার সঙ্গে হচ্ছে, কাল তোমাদের সময় আসবে। সবার সময় আসবে।’’ জ্যাভলিনে অলিম্পিক্স সোনাজয়ী নীরজ গণমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘এই ঘটনা দেখে খুবই কষ্ট হচ্ছে। আরও ভাল ভাবে এই ব্যাপারটা সামলানো যেত।” ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীও টুইটারে লেখেন, “কোনও বিবেচনা ছাড়াই কেন কুস্তিগিরদের টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? এটা উপযুক্ত ব্যবহার নয়। আশা করি এই বিতর্কের সমাধান যে পথে হওয়া উচিত সে ভাবেই হবে।”
রবিবার নতুন সংসদ ভবনের সামনে ‘মহিলাদের মহাপঞ্চায়েত’ করার কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন দিল্লিতে অবস্থানকারী প্রতিবাদী কুস্তিগিরেরা। কিন্তু সংসদ ভবন অভিযানের আগে পথেই আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আটক করা হয় বিনেশ ফোগট, সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়াদের।
বন্দি অবস্থায় বাসে বসে চোখে জল নিয়ে বিনেশ বলেন, “আসল অপরাধীকে সরকারের তরফ থেকে আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে দেশের জন্য পদক আনা ক্রীড়াবিদরা আজ কারাগারে বন্দি। তাদের অপরাধ, তারা দেশের মেয়েদের জন্য ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেছিল।”
সাক্ষী মালিকও চুপ করে থাকেননি। তিনিও টুইটারে সরকারের বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন। অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জজয়ী এই মহিলা কুস্তিগিরের মন্তব্য, “এই রকম ভাবেই দেশের চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে। সারা বিশ্ব আমাদের দেখছে। যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত সাংসদ ব্রিজভূষণ আজও সংসদে বসেছেন আর আমাদের রাস্তা থেকে টেনে হিঁচড়ে পুলিশের গাড়িতে তোলা হচ্ছে। ভারতীয় ক্রীড়ার জন্য আজ দুঃখের দিন।” তিনি আরও লিখেছেন, “দেশের জন্য পদক প্রাপ্তি কি কোনও গর্হিত অপরাধ? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তবে আমাদের ফাঁসির আদেশ দিন।”
সাক্ষী আরও জানান বুরারিতে তাঁর মেডিক্যাল পরীক্ষাও করা হয়েছে। কিন্তু তিনি অন্য কুস্তিগিরদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। বলেন, “অন্য কুস্তিগিরদের সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আশা করি প্রত্যেকে ভাল আছে। আমরা এখান থেকে আবার যন্তর মন্তরে যাব এবং ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের এই লড়াই চলবে।”
তাঁর আরও বক্তব্য, “দেশের প্রত্যেক মানুষ দেখেছেন আমাদের সঙ্গে কী রকম অমানুষিক ব্যবহার করা হয়েছে। এই ঘটনা কেউই কোনওদিন ভুলবে না। আমাদের সম্মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছবি তুলতে ব্যস্ত, আর অন্যদিকে আমরা মেয়েরা দিল্লির রাস্তায় ন্যায়বিচারের আশায় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছি।” পরে বজরংও টুইটারে লেখেন, “কোনও সরকার কি দেশের চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে এই রকম ব্যবহার করে? আমরা কী অপরাধ করেছি?”