বিনেশ ফোগট (বাঁ দিকে) ও বজরং পুনিয়া। —ফাইল চিত্র
এশিয়ান গেমসে ট্রায়াল ছাড়াই দুই কুস্তিগির বজরং পুনিয়া ও বিনেশ ফোগট সুযোগ পেয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছেন আরও দুই কুস্তিগির অন্তিম পাঙ্ঘাল ও সুজিত কলকল। যদিও আদালত জানিয়েছে, এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না তারা। এই পরিস্থিতিতে বজরং ও বিনেশের দাবি, ট্রায়ালে তাঁরা ভয় পান না। যদিও নিজেদের অধিকারের জন্য তরুণ কুস্তিগিরদের লড়াইয়ের প্রশংসাও করেছেন তাঁরা।
বিনেশকে সরাসরি সুযোগ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ অন্তিম। তিনি সরাসরি ভারতীয় কুস্তি সংস্থার অ্যাড হক কমিটিকে দায়ী করেছেন। এই প্রসঙ্গে বিনেশ বলেন, ‘‘আমরা ট্রায়ালের বিরোধিতা করিনি। আমি অন্তিমের বিরুদ্ধে নই। ওর কথা আমি বুঝি। ও নিজের অধিকারের জন্য লড়ছে। আমরাও আমাদের অধিকারের জন্য লড়ছি। অন্তিমের বয়স অল্প। ও বুঝবে না। কিন্তু আমরা তো ভুল কিছু করিনি। আমরা একটি সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়ছি। এই লড়াই খুব কঠিন।’’
কমনওয়েলথ গেমসে পদকজয়ী বিনেশ জানিয়েছেন কারও সঙ্গে প্রতারণা তিনি করেননি। বিনেশ বলেন, ‘‘অন্তিমের মনে হয়েছে কমনওয়েলথ গেমসের ট্রায়ালে ও প্রতারিত হয়েছিল। যদি তা হয়েই থাকে তা হলে সেটা করিয়েছিল ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ। আমার কাজ আখড়ায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়া। আমি সেটাই করেছি। যদি ওর মনে হয় আমি কিছু করেছি তা হলে তখনই ওর আদালতে যাওয়া উচিত ছিল। তবে এখন যে ওরা লড়াই করছে তাতে আমি খুশি।’’
বজরং জানিয়েছেন, এত দিন আদালতে মামলা চলছিল বলে তাঁরা মুখ খোলেননি। কিন্তু এখন বলতে কোনও বাধা নেই। অলিম্পিক্সে পদকজয়ী বজরং বলেন, ‘‘অন্তিমের দাবি, দেশের তিন-চার জন কুস্তিগির বিনেশকে হারানোর ক্ষমতা রাখে। কিন্তু এখনও তো কেউ ওকে হারাতে পারেনি। হতে পারে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা একমাত্র ভারতীয় মহিলা অন্তিম, কিন্তু বিনেশও তো একমাত্র কুস্তিগির যার দুটো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পদক আছে। তার বিরুদ্ধেই অন্তিম মামলা করেছে। আমরা জীবনের ২০ বছর কুস্তিকে দিয়েছি। এটাই কি আমাদের প্রাপ্য?’’
বজরং, বিনেশেরা জানিয়েছেন, ট্রায়ালে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। শুধু প্রস্তুতির সময় চেয়েছিলেন তাঁরা। বিনেশ বলেন, ‘‘আমরা ট্রায়াল থেকে পালাইনি। শুধু বলেছিলাম, প্রস্তুতির সময় দিতে। ট্রায়ালে যে কেউ জিততেই পারে। কিন্তু এক মাস প্রস্তুতি নিয়ে কি লড়তে নামা যায়?’’
গত মঙ্গলবার ভারতীয় কুস্তি সংস্থার বিশেষ (অ্যাড হক) কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বিনেশ ও বজরংকে ট্রায়ালে অংশ নিতে হবে না। সরাসরি সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা। তবে বাকি কুস্তিগিরদের ট্রায়ালে অংশ নিতে হবে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। কুস্তিগিরদের একটি অংশের মতে, পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, জাতীয় কোচদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই একক ভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি।
অ্যাড হক কমিটি একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারতীয় কুস্তি সংস্থার নিয়ম মেনে এশিয়ান গেমসে পুরুষদের ৬৫ কেজি ও মহিলাদের ৫৩ কেজি বিভাগে দুই কুস্তিগিরকে নির্বাচন করা হয়েছে। কিন্তু এই বিভাগে ট্রায়াল হবে। সেখানে যাঁরা জিতবেন তাঁরা স্ট্যান্ড বাই হিসাবে থাকবেন। কোন দুই কুস্তিগিরকে নির্বাচন করা হয়েছে সেই নাম বিবৃতিতে না জানালেও কমিটির সদস্য অশোক গর্গ সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বজরং ও বিনেশের নাম জানিয়েছেন।
দিল্লিতে এশিয়ান গেমসের জন্য কুস্তির ট্রায়ালের ঠিক চার দিন আগে দুই কুস্তিগিরের নাম জানিয়েছে কমিটি। তার পরেই প্রশ্ন উঠেছে, কেন দু’জনকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে? যেখানে বাকিদের ট্রায়ালে অংশ নিতে হবে সেখানে কী হিসাবে সরাসরি খেলবেন বজরং ও বিনেশ? এর পরেই মামলা করেন অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন কুস্তিগির অন্তিম এবং অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান গেমস চ্যাম্পিয়ন সুজিত। সেই মামলারই রায় ঘোষণা ছিল শনিবার। সেখানে আদালত জানিয়ে দেয়, এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না তারা।
এর আগে অ্যাড হক কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে অন্তিম বলেছিলেন, ‘‘গত এক বছর ধরে অনুশীলন না করার পরেও এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেয়েছে বিনেশ। আমি ২০২২ সালের জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতেছি। তার পরেও আমাকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে কমিটি কী চাইছে? ভারতের কুস্তি নিয়ে তারা কতটা ভাবছে?’’ গত কমনওয়েলথ গেমসের ট্রায়ালেও তাঁর প্রতি অন্যায় হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন অন্তিম। চলতি বছর সিনিয়র এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে রুপোজয়ী কুস্তিগির বলেন, ‘‘কমনওয়েলথ গেমসের ট্রায়ালেও বিনেশ আর আমার খেলা ৩-৩ শেষ হয়েছিল। কিন্তু কমনওয়েলথে বিনেশকে সুযোগ দেওয়া হল। তখনও আমার প্রতি অন্যায় করা হয়েছিল। তা হলে আমি কী করব? কুস্তি ছেড়ে দেব? আমি শুধু স্বচ্ছ ট্রায়াল চাই। কারণ, শুধু আমি নয়, আরও অনেকেই বিনেশকে হারাতে পারবে।’’ এই প্রসঙ্গে এ বার মুখ খুললেন বজরং ও বিনেশ।