বজরং পুনিয়া (বাঁ দিকে) এবং সাক্ষী মালিক। — ফাইল চিত্র
হরিদ্বারের গঙ্গায় পদক ভাসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে শেষ মুহূর্তে পিছু হটার পর গত কয়েক দিন বেশ চুপচাপই ছিলেন আন্দোলকারীরা। সোমবার থেকে আবার নতুন নাটক। জানা গেল, তিন দিন আগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে কুস্তিগিরদের। খবর পাওয়া যায়, সাক্ষী মালিক আন্দোলন থেকে নাম তুলে নিয়েছেন। পরে সাক্ষী নিজেই সেই খবরকে অসত্য বলে দেন। সব মিলিয়ে কুস্তি আন্দোলন নতুন মাত্রা পেল সোমবার। আগামী দিনে সেই আন্দোলন আরও জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।
আন্দোলন থেকে তাঁর নাম তোলার খবর শুনে রেলের অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় সাক্ষী নিজেও বলেছেন, ‘‘ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। দয়া করে ভুয়ো খবর ছড়াবেন না।’’ পরে সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে তিনি বলেন, “আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। খুব সাধারণ কথাবার্তা হয়েছে। আমাদের একটাই দাবি ছিল, ব্রিজভূষণ সিংহকে গ্রেফতার করতেই হবে। আমি আন্দোলন থেকে সরে আসিনি। রেলের চাকরিতে যোগ দিয়েছি। আমি জানাতে চাই, বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা পিছিয়ে আসিনি।” সাক্ষী আরও জানান, নাবালিকা কুস্তিগির অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন বলে যে খবর রটেছে, সেটাও ভুয়ো।
অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক
শনিবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন প্রতিবাদী কুস্তিগিরেরা। সর্বভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে শাহের বাসভবনে শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক হয়। রাত ১১টা থেকে শাহের সঙ্গে বৈঠক শুরু হয় প্রতিবাদী কুস্তিগিরদের। বজরং, সাক্ষী-সহ চার জন কুস্তিগির শাহের বাসভবনে গিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের বক্তব্য শুনেছেন। তদন্তের গতি নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে দ্রুত চার্জশিট দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাক্ষীরা। কুস্তিগিরদের আশ্বস্ত করে শাহ বলেছেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে।’’ এর আগে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর আশ্বাস দিয়ে বজরং, সাক্ষীদের বলেছিলেন, ‘‘সব অভিযোগের তদন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে হবে।’’ শাহের আশ্বাস নিয়ে কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল। তিনি বলেছেন, ‘‘অমিত শাহ কুস্তিগিরদের সঙ্গে দেখা করেছেন। কুস্তিগিরেরা সমস্যা সমাধানের আশায় রয়েছেন। আমার অনুমান, কোনও গ্রেফতার হবে না। দুর্বল একটা চার্জশিট দেওয়া হবে। ব্রিজভূষণ জামিন পেয়ে যাবেন। তার পর তাঁরা বলবেন, বিষয়টি এখন বিচারাধীন।’’
অখুশি কুস্তিগিরেরা
অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেও খুশি হননি প্রতিবাদী কুস্তিগিরেরা। বজরং, সাক্ষীরা নাকি অমিত শাহের কাছ থেকে প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া পাননি। তাঁরা বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। এমনই জানান বৈঠকে উপস্থিত থাকা অন্যতম প্রতিবাদী কুস্তিগির সত্যবর্ত কাদিয়ান। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া পাইনি। তাই আমরা বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসি। কী ভাবে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, তা নিয়ে পরিকল্পনা করছি আমরা। কোনও ভাবেই পিছিয়ে আসতে রাজি নই।’’
আন্দোলন প্রত্যাহারের ভুয়ো খবর
দিল্লিতে কুস্তিগিরদের প্রতিবাদ থেকে নাকি সরে দাঁড়াচ্ছেন রিয়ো অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জয়ী সাক্ষী মালিক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের পরেই নাকি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাক্ষী। সোমবার হঠাৎ করেই এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। খবরটি যে সম্পূর্ণ ভুল, তা সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে প্রথম জানান বজরং পুনিয়া।
সাক্ষীদের বক্তব্য
সাক্ষী বলেন, “আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। খুব সাধারণ কথাবার্তা হয়েছে। আমাদের একটাই দাবি ছিল, ব্রিজভূষণ সিংহকে গ্রেফতার করতেই হবে। আমি আন্দোলন থেকে সরে আসিনি। রেলের চাকরিতে যোগ দিয়েছি। আমি জানাতে চাই, বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা পিছিয়ে আসিনি।” বিনেশ ফোগট টুইট করেন, “ন্যায়বিচারের লড়াইয়ে আমরা কেউ পিছিয়ে আসিনি এবং আসবও না। সত্যাগ্রহের পাশাপাশিই আমি রেলের কাজও করার চেষ্টা করছি। বিচার না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। ভুল খবর ছড়াবেন না।” বজরং বলেন, “আমাদের ক্ষতি করার জন্যেই এ ধরনের খবর ছড়ানো হচ্ছে। সমস্যার সমাধানও হয়নি। আমরাও আন্দোলন বন্ধ করিনি। এফআইআর তুলে নেওয়ার যে খবর রটছে তাও অসত্য। আমাদের সত্যাগ্রহকে দুর্বল করার জন্যে এ রকম কাজকর্ম করা হচ্ছে। যিনি বলেছিলেন আমাদের পদকের দাম ১৫ টাকা, তিনিই এ বার আমাদের চাকরির পিছনে পড়েছে। আমাদের জীবন ক্ষতির মুখে। চাকরি সেখানে তুচ্ছ।”