আকস্মিক: দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি।—ছবি টুইটার
মালয়েশিয়া মাস্টার্স খেতাব জেতার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিশ্বের এক নম্বর ব্যাডমিন্টন তারকা কেন্তো মোমোতা গাড়ি দুর্ঘটনার মুখে পড়লেন। সোমবার কুয়ালা লামপুরের কাছে এই দুর্ঘটনায় মোমোতার গাড়ির চালক মারা গিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ২৫ বছর বয়সি জাপানি খেলোয়াড়কে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। তাঁর নাক ভেঙেছে, কেটে গিয়েছে মুখের কয়েক জায়গায়। তবে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। গত মরসুমে দুরন্ত ছন্দে থাকা মোমোতার এই দুর্ঘটনার ফলে টোকিয়ো অলিম্পিক্সের প্রস্তুতি জোর ধাক্কা খেল বলে মনে করছেন অনেকে।
হাইওয়েতে ধীর গতিতে চলতে থাকা একটি লরিকে পেছন থেকে মোমোতাদের গাড়ি ধাক্কা মারতেই দুর্ঘটনা ঘটে। মোমোতার সঙ্গে জাপানি দলের এক জন সহকারী কোচ, ফিজিয়ো ও ব্যাডমিন্টন কর্তাও ছিলেন সেই গাড়িতে। তাঁরাও আহত হয়েছেন। তবে গুরুতর চোট লাগেনি কারও। রবিবার মালয়েশিয়া মাস্টার্সের ফাইনালে ডেনমার্কের ভিক্টর অ্যাক্সেলসেনকে হারিয়ে নতুন মরসুমের অভিযান শুরু করেন মোমোতা। কে জানত তার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। ‘‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। বিশেষ করে মোমোতার মতো এ রকম একজন বড় তারকাও রয়েছে আহতদের মধ্যে,’’ আহতদের হাসপাতালে দেখে আসার পরে মালয়েশিয়ার ক্রীড়ামন্ত্রী সৈয়দ সাদিক বলেন সাংবাদিকদের। তবে তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। চার জনের অবস্থাই স্থিতিশীল।’’ পুলিশ জানিয়েছে, মোমোতা ছাড়া বাকি তিন জনের কারও মুখে, কারও হাতে বা পায়ে চোট লেগেছে। মালয়েশিয়ার ব্যাডমিন্টন সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এই দুর্ঘটনায় তাঁরা ‘‘দুঃখিত’’।
সোমবার স্থানীয় সময়, ভোর চারটে চল্লিশ মিনিট নাগাদ এই দুর্ঘটনা ঘটার পরে ১০ জন দমকলকর্মী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছন। মালয়েশিয়ার দমকল ও উদ্ধারকারী দলের এক কর্তা সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, ‘‘আহতরা গাড়ি থেকে নিজেরাই নেমে আসতে পেরেছে।’’ সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরতে থাকা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দুর্ঘটনায় মোমোতাদের গাড়ির সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পিছনের অংশ অক্ষত রয়েছে।
হাসপাতালে মোমোতা। (ডান দিকে) দুর্ঘটনার কয়ের ঘণ্টা আগেই চ্যাম্পিয়ন হন মোমোতা। টুইটার
গত মরসুমে অসাধারণ ছন্দে ছিলেন মোমোতা। রেকর্ড ১১টি খেতাব জিতেছিলেন তিনি। যার মধ্যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, এশিয়া চ্যাম্পিয়নশিপ এবং অল ইংল্যান্ড ওপেনও রয়েছে। ২০১৬ সালে ক্যাসিনোয় জুয়া খেলার জন্য নির্বাসিত হয়েছিলেন মোমোতা। জাপানে যা অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু সেই ঘটনা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গত মরসুমে তিনি শাসন করেন ব্যাডমিন্টন বিশ্ব। এমন দাপট এর আগে কোনও পুরুষ ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় দেখাতে পারেনি। মালয়েশিয়ার লি চং উয়েই বা চিনের কিংবদন্তি লিন ডানও না।
মোমোতার ট্রফি ক্যাবিনিটে এক মাত্র যা অধরা সেটা হল অলিম্পিক্স পদক। জুয়া কেলেঙ্কারিতে জড়ানোর জন্য ২০১৬ রিয়ো অলিম্পিক্সে নামতে পারেননি তিনি। তাই অনেকেই মনে করেছিলেন, এ বার নিজের দেশে অলিম্পিক্সের আসরে সোনা জেতার দৌড়ে তিনিই অনেকটা এগিয়ে থাকবেন। কিন্তু এই দুর্ঘটনার ধাক্কা কাটিয়ে মোমোতা কী ভাবে ঘুরে দাঁড়ান, সেটাই দেখার।
কয়েক সপ্তাহ আগেই মোমোতার প্রাক্তন কোচ মালয়েশিয়ার ইজুয়ান ইব্রাহিম মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৩৫ বছর। মাথায় যন্ত্রণার সমস্যা নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরীক্ষা করে দেখা যায় তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জন্যই সমস্যা হচ্ছিল। সপ্তাহখানেক পরেই তাঁকে মালয়েশিয়ার জুনিয়র দলের কোচিংয়ের কাজে যোগ দিতে হত। কিন্তু চাকরিতে আর যোগ দিতে পারেননি তিনি। প্রাক্তন কোচের প্রয়াণে মর্মাহত মোমোতা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, ‘‘কোচ ইজুয়ান ইব্রাহিম সাহায্য না করলে আজ আমি যে জায়গায় উঠে এসেছি সেখানে পৌঁছতে পারতাম না। এ রকম এক জন মানুষের সংস্পর্শে আসতে পেরে আমি সম্মানিত। এই কঠিন সময়ে তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি।’’ কে জানত প্রিয় কোচের প্রয়াণের পরে ফের এ রকম একটা ধাক্কা অপেক্ষা করছিল মোমোতার জন্য!