Sport News

ভুল সিদ্ধান্তে জিতল ফ্রান্স

শনিবার কাজানে ফুটবল বিশ্ব দেখল একেবারে নতুন অস্ট্রেলিয়াকে। যারা এ বারের বিশ্বকাপে অন্যতম ফেভারিট ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কখনও আত্মসমর্পণ করেনি।

Advertisement

ট্রেভর জেমস মর্গ্যান

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৮ ০৫:২৮
Share:

নায়ক: অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুরন্ত গোলের পরে পোগবাকে নিয়ে উচ্ছ্বাস সতীর্থদের। শনিবার কাজানে। ছবি: এএফপি

ফ্রান্স ২ • অস্ট্রেলিয়া ১

Advertisement

শনিবার দুপুরে পার‌্থের রাস্তার বেরিয়ে চমকে গিয়েছিলাম। প্রায় জনশূন্য। ভিড় শুধু পাবগুলোতে। কী ব্যাপার? বিস্মিত হয়ে গেলাম শুনে, বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ম্যাচ খেলবে। পার‌্থের স্থানীয় সময় সন্ধে ছটায় খেলা। কিন্তু দুপুর থেকেই সবাই ভিড় করেছেন পাবে।

আমার জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা ইংল্যান্ডে। বিশ্বকাপের সময় ওখানে এটা পরিচিত দৃশ্য। ইংল্যান্ড ছেড়ে বহু বছর আগেই পাকাপাকি ভাবে পার‌্থে চলে এসেছি। ১৯৭৪ সালে প্রথম বার বিশ্বকাপ খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। ২০০৬ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় উঠেছিল তারা। তা সত্ত্বেও ফুটবল নিয়ে অস্ট্রেলীয়দের এই উন্মাদনা আগে কখনও দেখিনি। ছবিটা আসলে বদলে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের কোচ বের্ত ফান মারউইক!

Advertisement

২০১০ বিশ্বকাপে মারউইকের কোচিংয়ে ফাইনালে উঠেছিল নেদারল্যান্ডস। এ বছরের শুরুতে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বদলে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। শনিবার কাজানে ফুটবল বিশ্ব দেখল একেবারে নতুন অস্ট্রেলিয়াকে। যারা এ বারের বিশ্বকাপে অন্যতম ফেভারিট ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কখনও আত্মসমর্পণ করেনি।

যা ঘটল কাজানে

• কী ভাবে তৈরি হল ইতিহাস?

ভার প্রযুক্তি ব্যবহার করে রেফারি দ্বিতীয়ার্ধে ফরাসিদের পেনাল্টি দিতেই তৈরি হয় ইতিহাস। কারণ এই প্রথম বিশ্বকাপে এক জন রেফারি ভার ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত বদল করলেন।

• কী হয়েছিল?

জোশুয়া রিসডন গ্রিজম্যানকে ট্যাকল করার পরেই রিপ্লে-তে দেখা গিয়েছিল, বল অস্ট্রেলীয় গোলকিপার ম্যাটি রায়ানের কাছে যাচ্ছে। কিন্তু মাঠের বিভিন্ন কোণে বসানো ক্যামেরার ছবিতে দেখা যায়, কোনও ভাবে গ্রিজম্যানের পা আটকে যাচ্ছে। তৃতীয় রিপ্লে দেখায় সামান্য হলেও রিসডনের পা ছুঁয়েছে গ্রিজম্যানকে।

• কখন ভার?

এই ম্যাচের ভার-এর দায়িত্বে ছিলেন আর্জেন্টিনার মাউরো ভিগলিয়ানো। তিনিই গোল সংক্রান্ত প্রতিটি মুভ খতিয়ে দেখছিলেন। তিনিই রেফারি আন্দ্রেসকে বলেন, খেলা থামাতে। ফাউলটি খতিয়ে দেখার জন্য।

• ভার কি পেনাল্টির নির্দেশ দেয়?

যদি পেনাল্টি মনে হয়, তা হলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য পরামর্শ দিতে পারে ভার। তবে সরাসরি নয়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এ ক্ষেত্রে নেন রেফারি।

• রেফারি টিভি রিপ্লে দেখেন কেন?

ভার রেফারিকে কখনও সরাসরি সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের নির্দেশ দেয় না। কিন্তু নির্দেশ বদলের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে রেফারিকে রিপ্লে দেখে নিতে বলা হয়।

• ভুল নয় কি?

রেফারি ভিডিয়ো দেখার পরে যদি মনে করেন, সিদ্ধান্ত বদলাতে হবে, তা হলে তিনি বদলাতে পারেন। রেফারির সিদ্ধান্তই এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত।

• রেফারি কুনহা কি অতীতে ভার ব্যবহার করেছেন?

কোপা লিবের্তাদোরেস-এ কিছু ম্যাচে ভার ব্যবহার হয়েছে। সেখানে খেলিয়েছেন তিনি। ভার হিসেবে তিনি রিভারপ্লেটকে প্রথমার্ধে পেনাল্টি দেওয়ার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেননি।

প্রথম ম্যাচে ৪-২-৩-১ ছকে দল নামিয়েছিলেন মারউইক। অর্থাৎ, মাঝমাঠেই ফ্রান্সের আক্রমণ থামিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা। তাই প্রথমার্ধে দু’বারের বেশি গোল করার মতো সুযোগ পায়নি জ়িনেদিন জ়িদানের দেশ। পাঁচ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া পল পোগবার ফ্রি-কিক সরাসরি চলে যায় অস্ট্রেলিয়া গোলরক্ষক ম্যাথিউ রায়ানের হাতে। সাত মিনিটে আঁতোয়া গ্রিজ়ম্যানের শটও বাঁচিয়ে দেন রায়ান। প্রথমার্ধে ফ্রান্সকে দেখে মনে হচ্ছিল, চক্রব্যূহে বন্দি পোগবারা!

ফ্রান্স ফুটবলারদের উচিত ছিল উইং দিয়ে আক্রমণে ওঠা। কিন্তু তা না করে ওঁরা বার বার চেষ্টা করছিলেন মাঝমাঠ দিয়ে বল নিয়ে পেনাল্টি বক্সে ঢুকতে। মারউইক এই ফাঁদটাই পেতেছিলেন গ্রিজ়ম্যানদের জন্য। এই কারণেই রক্ষণের সামনে বাড়তি দু’জনকে রেখেছিলেন। ফ্রান্সের ফুটবলাররা সেই ফাঁদেই পা দিলেন। অস্ট্রেলিয়াকে এত পরিকল্পিত ফুটবল খেলতে আগে কখনও দেখিনি।

প্রথমার্ধ গোলশূন্য ভাবে শেষ হওয়ার পরে মনে হয়েছিল, আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়ানোর জন্য দিদিয়ে দেশঁ পরিকল্পনায় অদলবদল করতে পারেন। আমার ধারণাই মিলে গেল, যখন দেখলাম পোগবা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের ভূমিকা পালন করছেন। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে ফরাসি মিডফিল্ডারকে জোসে মোরিনহো দুই স্টপারের সামনে ব্লকার হিসেবে খেলান। কিন্তু পোগবার আসল জায়গা যে ফরোয়ার্ডদের একটু পিছনে, তা ফের প্রমাণিত হল। দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রান্সের খেলায় আক্রমণের ঝাঁঝ অনেক বেশি ছিল। ৫৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন গ্রিজ়ম্যান।

এই পেনাল্টিটা নিয়েই আমার আপত্তি রয়েছে। জোস রিসডন কিন্তু গ্রিজ়ম্যানের পা থেকে বলটা কাড়ার জন্যই ট্যাকল করেছিলেন। ফলোথ্রুতে ওঁর পায়ে লেগে পড়ে যান ফরাসি তারকা। উরুগুয়ের রেফারি কুনহা আন্দ্রস প্রথমে পেনাল্টি দেননি। কিন্তু নতুন প্রযুক্তি ‘ভার’ (ভিডিয়ো অ্যাসিট্যান্ট রেফারি)-র সাহায্য নিয়ে পেনাল্টি দেন। আমার মতে, রিসডনের লক্ষ্য কিন্তু গ্রিজ়ম্যানকে ফাউল করা ছিল না। তিনি চেয়েছিলেন ট্যাকল করে বল বিপন্মুক্ত করতে। রিপ্লেতেও তা স্পষ্ট। অথচ রেফারি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পেনাল্টি দিলেন। চার মিনিটের মধ্যে পেনাল্টি থেকেই গোল শোধ করল অস্ট্রেলিয়া। অ্যারন ময়ের ফ্রি-কিক বক্সের মধ্যে লাফিয়ে উঠে হাতে লাগান ফ্রান্সের স্যামুয়েল উমতিতি। নিশ্চিত পেনাল্টি। গোল করতে ভুল করেননি অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মাইল জেডিনাক।

উমতিতির ভুলের জন্য গত মরসুমে বার বার সমস্যায় পড়ছে বার্সেলোনা। এ বার একই হাল হল ফ্রান্সের। আমার তো মনে হয় পরের ম্যাচে উমতিতিকে প্রথম একাদশে রাখার আগে দু’বার ভাবা উচিত দেশঁর। শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সের ত্রাতা হয়ে উঠলেন পোগবা। ৮১ মিনিটে অস্ট্রেলিয়ার পেনাল্টি বক্সের মধ্য থেকে ডান পায়ের ফ্লিকে অসাধারণ গোল করেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ জিতবে, এই আশা কেউ করছে না। বরং এ বার ফ্রান্সের যা দল, তাতে ওদের খেতাবি দৌড়ে প্রবল ভাবেই থাকার কথা। কিন্তু তার জন্য দেশঁকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের অধিনায়ক দলকে খেলাচ্ছেন ৪-৩-৩ ছকে। এই পরিকল্পনা তখনই সফল হওয়া সম্ভব, যখন ডিফেন্ডাররা মাঝমাঠের ফুটবলারদের সাহায্য করতে উঠবেন। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে কিন্তু তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। ফলে মাঝমাঠে শূন্যস্থান তৈরি হচ্ছিল। দেশঁকে মনে রাখতে হবে, বিশ্বকাপের সব ম্যাচে কিন্তু রেফারির সাহায্য পাবে না ফ্রান্স!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement