উৎসব: পেরুর বিরুদ্ধে গোল কিলিয়ান এমবাপের (ডান দিকে)। নজির গড়লেন সবচেয়ে কম বয়সে ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপে গোল করে। বৃহস্পতিবার একাতেরিনবার্গে। ছবি: গেটি ইমেজেস।
ফ্রান্স ১ : পেরু ০
পল পোগবারা যখন নিজেদের রক্ষণ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, তখন কি দিদিয়ের দেঁশর কুড়ি বছর আগের কথা মনে পড়ছিল? পড়াই স্বাভাবিক।
ব্রাজিলকে হারিয়ে বিশ্বকাপে শেষ বার ফ্রান্সকে চ্যাম্পিয়ন করার দিনে রোনাল্ডো, বেবেতোদের মাঝমাঠে থামিয়ে দিয়েছিলেন দেঁশ। সে দিন তিনি ছিলেন ফ্রান্সের অধিনায়ক। বৃহস্পতিবার ছিলেন কোচ।
এ দিন পেরুর কমজোরি ফরোয়ার্ড লাইনকে থামাতেই রীতিমতো হিমশিম খেলেন দেঁশর ছাত্ররা। রাফায়েল ভারান বা স্যামুয়েল উমতিতিদের বারবার সমস্যায় ফেললেন পল গুইরেরো, কুয়েভারা। এতটাই যে, হুগো লরিসের মতো অভিজ্ঞ গোলকিপার না থাকলে ম্যাচটা জিততে পারত না ফ্রান্স। এটা ছিল দেশের জার্সিতে লরিসের একশোতম ম্যাচ। অসাধারণ দুটো সেভ করলেন তিনি। টেনে তুললেন ফ্রান্সকে।
অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করছেন, এই ফ্রান্স কি চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে? গ্রুপ লিগের দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে শেষ ষোলোয় ওঠা নিশ্চিত করার দিনেও কিলিয়ান এমবাপেদের হয়ে বাজি ধরতে পারছি না। চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে দেঁশর দলের রক্ষণকে আরও ভাল খেলতে হবে। আরও জমাট হতে হবে। নিজে স্টপার ছিলাম বলেই জানি, স্ট্রাইকাররা যতই গোল করুক, পিছনে শক্তিশালী ব্যাক ফোর না থাকলে যে কোনও দল সব সময় অস্বস্তিতে থাকে।
জিনেদিন জিদানের জোড়া গোলে যে ফ্রান্স উনিশশো আটানব্বইতে বিশ্বকাপ জিতেছিল তাদের সঙ্গে পোগবাদের এই দলটার ফারাক কোথায় সেটা বোঝা যাচ্ছিল ম্যাচের সময়। ফারাক মূলত ব্যক্তিগত চাতুর্যের, দক্ষতার। ফ্রান্সের গোলটা অবশ্য বেশ ভাল হল। অলিভিয়ের জিহু বলটা বিপক্ষের গোলে মারতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বল পেরুর এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে ফ্লিক করা বল যায় এমবাপের কাছে। এমবাপে কৃতিত্ব পাবেন এ জন্যই যে বলটা তাড়া করে গিয়েছিলেন। পঁয়ত্রিশ মিনিটের ওই গোলটাই শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সকে তুলল নক আউট পর্বে। কুড়ি বছর আগে ফ্রান্স শক্তিশালী ব্রাজিলকে হারিয়েছিল ফাইনালে। কোন ব্রাজিল? রবের্তো কার্লোস, দুঙ্গা, রিভাল্ডো, রোনাল্ডোদের ব্রাজিল! মারিও জাগালোর সেই দলকে তিন গোলে হারানো সহজ ছিল না। তাও সফল হয়েছিলেন জিদানরা। এর প্রধান কারণ ছিল ব্যক্তিগত দক্ষতার দিক দিয়ে সে বারের ফ্রান্স অনেক এগিয়েছিল। জিদান তো একাই দু’গোল করেছিলেন ফাইনালে। ক্লাব ফুটবলে পল পোগবা, কিলিয়ান এমবাপে, আতোয়াঁ গ্রিজম্যানরা যথেষ্ট সফল। কিন্তু দেশের জার্সিতে এঁদের কাউকে জিদানের সমকক্ষ বলতে পারছি না।
তবুও এরই মধ্যে বলব দেঁশর আক্রমণভাগের গতিময় ফুটবল আমাকে মুগ্ধ করেছে। অ্যাটাকিং থার্ড থেকে স্কোরিং জোনে এত দ্রুত চলে যাচ্ছিলেন পোগবা, এমবাপেরা যে সামাল দিতে পারছিল না রিকার্ডো গ্যারেকার দলের রক্ষণ। এখানেই পেরু পিছিয়ে ছিল। বাকিটা প্রায় সমান সমান। দু’দলই একাধিক সুযোগ পেয়েছিল গোলের। পেরু সহজ সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে ম্যাচটা অন্য রকম হত। আবার ফ্রান্সও সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু গোল হয়নি।
ম্যাচটা শেষ হল সেই এক গোলের ব্যবধানে। এ বারের বিশ্বকাপে দেখছি গোল কম হচ্ছে। এর কারণ হিসাবে অনেকেই বলছেন, দলগুলির মধ্যে শক্তির পার্থক্য কম। অনেকে বলছেন, ব্যক্তিগত দক্ষতার ফুটবলাররা নিজেদের মেলে ধরতে পারছেন না। বিশেষ করে তারকা স্ট্রাইকাররা। আমার অন্য কথা মনে হচ্ছে। সব দলই রক্ষণে ফুটবলার বাড়িয়ে খেলছে। বক্সের সামনে সাত-আট জনকেও নামিয়ে দিচ্ছে। ফলে গোলের রাস্তা খুলছে কম। রাশিয়া বিশ্বকাপে এটাই হয়তো নতুন ভাবনা কোচেদের। আগে গোল বাঁচাও, পরে করো।