একটা ভাবনা। একটা দল। সেখানে এক মহাতারকা। সেই সঙ্গে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা। পরিচ্ছন্ন ভাবনার এমন এক কোচ দায়িত্বে যিনি নিজেকে জাহির করেন না। এটাই এখনকার ব্রাজিল। এই ব্রাজিলই প্রচুর সমস্যা কাটিয়ে ছাপিয়ে গেল কোস্টা রিকাকে। কিন্তু ম্যাচ দেখে আমার একটা কথাই মনে হল। ব্রাজিলকে গোলের জন্য ধৈর্যশীল হতে হবে। বিশেষ করে কোস্টা রিকার মতো দলের বিরুদ্ধে। যারা শুক্রবার যে ভাবে রক্ষণ সামলাল তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। প্রথমার্ধে তো তেমন কিছু করতেই পারেনি নেমার দ্য সিলভা স্যান্টোসরা (জুনিয়র)। তার উপর শুরুতে বেশ মন্থরই ছিল ব্রাজিল। গোলের সুযোগও নষ্ট হয়েছে। অনেক বার বল বাইরে মেরেছে ওরা। কখনও পোস্টের অনেক উপর দিয়েও।
বিশ্বকাপের ইতিহাস বলছে, একেবারে শুরুর দিন থেকে চাপ নিয়ে খেলতে হয় খেতাবের দাবিদারদের। এ বারের জার্মানি, আর্জেন্টিনা, স্পেনকে দেখে সেটা মনে পড়ছে। একই কথা ব্রাজিলের ক্ষেত্রেও খাটে। সেরা দলগুলোর সব চেয়ে বড় সমস্যা বোধহয় এই চাপটা। ভাল কিছু করতেই হবে। সেরা দলের জার্সি পরা মানেই কুড়ি মিনিটের মধ্যে ৩-০ এগিয়ে যাওয়া চাই!
বিশ্বকাপের ইতিহাস বলছে, ব্রাজিলকে চিরকালই এই চাপ নিয়ে নামতে হয়। এ বার যেমন এই চাপ মূর্ত হচ্ছে নেমারের মধ্যে। ফুটবলটা অসাধারণ খেলে ছেলেটা। সবাই এখন ওর দিকেই তাকিয়ে। ওর কাছে ব্রাজিলের লক্ষ লক্ষ ফুটবলপ্রেমী জনতার দাবি একটাই। ছ’নম্বর বিশ্বকাপ আমাদের দেশে নিয়ে আসতেই হবে। এমন প্রত্যাশা যাকে ঘিরে সন্দেহ নেই সে-ই ফুটবলের নতুন রাজা। তাই রাজার আগ্রাসন রুখে দেওয়ার চেষ্টা চলতেই থাকবে। কখনও নিয়ম মেনে রুখে দেওয়ার চেষ্টা। কখনও না মেনে।
তিতে যে দলটা নামাচ্ছেন সেখানে নেমার এমন একজন যে দলের ছন্দ ধরে রাখে, বোঝে বাকি সবার হৃদস্পন্দন। আর তিতেকে আমি একটা কথাই বলব, ভয় পাবেন না। যাদের উপর ভরসা রাখছেন তাদের খেলিয়ে যান। রণনীতিও বদলে ফেলার দরকার নেই। অবশ্য এই বার্তাটা আমি প্রথম ম্যাচের পরেই দিয়েছি। এমনিতে ধরেই নিয়েছিলাম প্রথম ম্যাচটায় ব্রাজিলের কিছু অসুবিধা থাকবেই। দেখলাম ভুল ভাবিনি। দেখলাম অনেকেই বেশ চাপে আছে। বিশ্বকাপের মতো জায়গায় প্রথম ম্যাচে এটা থাকবেই। কিছু করার নেই। তাই সে দিন ব্রাজিলের খেলায় সেরা একশো ভাগ ছিল না। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে দেখলাম সেটা অনেকটাই কেটে গিয়েছে।
এর জন্য আমি ধন্যবাদ জানাব ফিলিপে কুটিনহো আর আর নেমারকে। ওদের জন্যই আমরা এখন গ্রুপে শীর্ষস্থানে। তবে আর একটু ভাল খেলতেই হবে আমাদের। সবে বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে। তাই এখনই সমালোচনার রাস্তায় হাঁটতে পারছি না। তা ছাড়া শুধু তো আমরা না। আর্জেন্টিনা, জার্মানির মতো অন্য বড় নামও এ বারে শুরুতেই সমস্যায় পড়ছে। সে দিক থেকে তো আমাদের অবস্থা ভাল বলব।
জার্মানি গত বারের চ্যাম্পিয়ন। অথচ ওদের ভাগ্য এখনও অনিশ্চিত। যাদের আমরা দুর্বল দল ভেবে থাকি তারা যে ভাবে রক্ষণ সামালাচ্ছে তা কিন্তু চমকে দেওয়ার মতো। বড় বড় নামের সামনে তারা সাক্ষাত সমস্যা। কোস্টা রিকার রক্ষণের কথা তো আগে বললাম। সঙ্গে প্রতিআক্রমণেও উঠেছে। যে ভাবে খেলা গড়াচ্ছিল আমি তো এক সময় ভাবছিলাম আবার না ড্র হয়ে যায়! তাই ওদের হারানোটাও সহজ ছিল না। শেষ পর্যন্ত আমরা সংযুক্ত সময়ে দু’টি গোল করেছি। তবে ও ভাবে গোল আরও আগেই হওয়ার কথা। মনে আছে ২০০২ সালে আমরাও কোস্টা রিকার সঙ্গে খেলে ওদের ৫-২ হারিয়েছিলাম। এখন অবশ্য পরিস্থিতিটা অন্য রকম। এখনকার মতো রক্ষণ তখন ছিল না তথাকথিত ছোট দেশগুলোর। এর মধ্যেও ছেলেরা জিতেছে যে সেটাই বড় ব্যাপার। নেমারদের তাই আমার তরফ থেকে অনেক ধন্যবাদ। এখন পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবার সময়।
সব শেষে তারিফ জানাচ্ছি আমেদ মুসা আর নাইজিরিয়া দলটাকে। ওদের জন্যই আবার লিয়ো মেসির আর্জেন্টিনার নামটা ভেসে উঠছে। লিয়ো ইতিমধ্যেই এক জন কিংবদন্তি। সেটা বার্সেলোনা আর ফুটবলে ওর অবদানের জন্য। কিন্তু দিয়েগো মারাদোনা আর্জেন্টিনার সব চেয়ে বড় তারকা। কারণ ও দেশকে বিশ্বকাপ দিয়েছে। মেসি সেখানে ক্লাবের জন্য প্রচুর প্রচুর ট্রফি জিতেছে। কিন্তু ওর দেশের মানুষ বিশ্বকাপকে বেশি নম্বর দেবেই। কিছু করার নেই। এই প্রতিযোগিতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অন্য কিছুই হতে পারে না যে।