‘বিনোদন পরে হবে, বিশ্বকাপ জেতাই আসল’

তখন প্রতিপক্ষ বেশি মাথায় চড়ে যেতে পারে। সব চেয়ে ভাল হচ্ছে, নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেলো।

Advertisement

রিভাল্ডো

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৮ ০৪:৫০
Share:

মহড়া: ব্রাজিলের অনুশীলনে উইলিয়ান, নেমাররা। মঙ্গলবার।  ছবি: এএফপি।

গ্রুপের শেষ ম্যাচ। কিন্তু সেটা মোটেও হাল্কা ভাবে নেওয়ার নয়, বরং ব্রাজিলের কাছে পরের রাউন্ডের ফয়সালার লড়াই হয়ে থাকছে। কোচ তিতে নক-আউটের আগেই নক-আউটের স্বাদ পেয়ে যাচ্ছেন আজ।

Advertisement

বিশ্বকাপে কখনও কোনও দলকে হাল্কা ভাবে নেওয়ার উপায় থাকে না। এটা এমনই এক প্রতিযোগিতা যেখানে দু’দলের মধ্যে পার্থক্যটা খুবই কম থাকে। প্রত্যেক দলই তাদের শেষ বিন্দু দিয়ে লড়ার চেষ্টা করে বলে অনেক বড়কে অনেক সময়েই অঘটনের মুখে পড়তে হয়। রাশিয়ায় সেটা আরও বেশি করে দেখা যাচ্ছে। গত বারে চ্যাম্পিয়নরা হেরে গিয়েছে, অন্য বড় দলগুলোয় হোঁচট খাচ্ছে। তা বলে প্রতিপক্ষকে অতিরিক্ত সম্মান করতে গেলেও বিপদ হতে পারে। তখন প্রতিপক্ষ বেশি মাথায় চড়ে যেতে পারে। সব চেয়ে ভাল হচ্ছে, নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেলো।

আমরা এমন এক ব্রাজিল দলকে বিশ্বকাপে দেখছি, যাদের খেলোয়াড়রা বিশ্বের সব ভাল ক্লাবে দারুণ খেলে এসেছে। তাদের ক্লাবকে জিতিয়ে এসেছে। সারা বছর ধরে কঠিনতম পরিস্থিতিতে ওরা খেলছে। তাই চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা ওদের কাছে নতুন কিছু নয়। তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন খুব সফল এবং বিচক্ষণ কোচ। নক-আউট পরিস্থিতি থেকে ওদের বেরিয়ে আসার মানসিক শক্তিটা থাকবে বলে আশা করা যায়।

Advertisement

ব্রাজিলের ফুটবলার হলে বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে থেকেই চাপ তৈরি হয়ে যায়। পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দেশ আমরা। বিশ্ব ফুটবলকে কী সব কিংবদন্তি ফুটবলার উপহার দিয়েছি আমরা! পেলে, জিকো, রোনাল্ডো এবং আরও অনেকে! ইতিহাসটাই এমন যে, তার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে পরের প্রজন্মের যে কেউ চাপে পড়বে। যুগ যুগ ধরে যে কোনও ব্রাজিল দলকেই এটা সামলাতে হয়েছে। আর আমার মতে, চাপ সামলানোর একটাই রাস্তা আছে। ম্যাচ জিততে হবে। যত তুমি জিততে থাকবে, তত চাপ কমতে থাকবে। তত আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে দল। ব্রাজিলকে ঘিরে তাদের নিজেদের দেশেই শুধু নয়, পৃথিবীর সর্বত্র প্রত্যাশা থাকে। সকলে আশা করে ব্রাজিল ভাল ফুটবল খেলবে। ব্রাজিল জিতবে। ব্রাজিল আনন্দ দেবে।

চাপটা আরও বেড়ে যায়, যদি বিশ্বকাপে খেলতে আসা দলটা ভাল হয়। এ বারে আমাদের দলটাকে নিয়ে সেটাই হয়েছে। তিতের দলটা ভাল বলেই সকলের প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছে। নেমার আর উইলিয়ানকে উইংয়ে রেখে তিতেকে ৪-২-৩-১ ছকেও খেলতে দেখা যাচ্ছে। কুটিনহোকে মাঝখান থেকে প্লে-মেকার হিসেবে খেলাচ্ছেন তিতে এবং বলতেই হবে, দারুণ সফল তাঁর এই রণনীতি। তার একটা কারণ হচ্ছে, কুটিনহোকে স্বাধীনতা দিচ্ছেন তিতে।

ব্রাজিলের এই দলটায় সুদক্ষ খেলোয়াড়ের অভাব নেই। পাওলিনহো নীচ থেকে উঠে এসে সাহায্য করে যাচ্ছে। গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে ভাল লাগছে। কিন্তু নেমারের ব্রাজিলে আমার সব চেয়ে বেশি করে নজর কেড়েছে কাজিমিরো। ম্যাচ জেতানো ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে ওকে। আর একটা ভাল ব্যাপার হচ্ছে, এই ব্রাজিল দলটায় কোও এক জন নির্দিষ্ট ক্যাপ্টেন নেই। যোগ্যতা অর্জন পর্ব থেকেই অনেককে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দিয়েছেন তিতে। এতে সুবিধে যেমন রয়েছে, অসুবিধেও কিন্তু থাকতে পারে। দল সমস্যায় পড়লে নেতার দিকে তাকায় খেলোয়াড়রা। কোনও স্থায়ী অধিনায়ক না থাকলে ব্রাজিল ড্রেসিংরুমে শূন্যতা তৈরি হতে পারে। এই অভাবটা পূরণ করতে দারুণ ভাবে এগিয়ে এসেছে মার্সেলো। কিন্তু আমার মনে হয়, নেমারকে আরও বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। না হলে নেতৃত্ব নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। আমার মনে হয়, সার্বিয়া খুব জটিল এক ধরনের রণনীতি নিতে চাইবে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে। সাম্বার ছন্দটাই ওরা তছনছ করে দিতে চাইবে। ব্রাজিলকে ‘ডেড বল’ পরিস্থিতিতে অনেক উন্নতি করতে হবে। ডিফেন্সে উঁচু বল থামানোর ব্যাপারে নিখুঁত হতে হবে। সার্বিয়া কিন্তু উঁচু শটে খেলতে পছন্দ করে।

মানুষ তুলনা করতে ভালবাসে। ব্রাজিলের বর্তমান দলকেও তাই অতীতের কিংবদন্তিদের সঙ্গে অহরহ তুলনা সহ্য করতে হচ্ছে। আমার মতে, এই তুলনাটা করা উচিত নয়। দু’টো প্রজন্মের মধ্যে অনেক তফাত থাকে। প্রত্যেকেই তার মতো করে সফল হয়েছে, সেরা হয়েছে। প্রত্যেকেই তাদের সময়ে দলের সাফল্যে অবদান রেখেছে। আমাদের দেশে রোনাল্ডো, রোনাল্ডিনহো বা আমি যেমন অবদান রেখেছি, তেমনই এখনকার প্রজন্মে লিয়োনেল মেসি বা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো রয়েছে। ওরা দারুণ ফুটবলার। আবার জ়িনেদিন জ়িদান ছিল তার প্রজন্মে। কারও চেয়ে কম বড় ফুটবলার নয়। তাই তুলনা করে কাউকেই ছোট করা উচিত নয়।

আমি তাই তুলনাতে যাব না। আশা করব, আমাদের বর্তমান প্রজন্মের দলও দেশের স্বপ্নপূরণ করবে। একটা অভিযোগ শুনতে পাচ্ছি যে, ব্রাজিলের এই দলের খেলা দেখে সেই আনন্দ পাওয়া যাচ্ছে না। যেটা বরাবর ব্রাজিল ফুটবলকে বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সেটা যেমন ঠিক, এটাও তো মাথায় রাখতে হবে যে, ব্রাজিলের ইতিহাসে যখনই কোনও দল হেরেছে, তাকে ঘিরে প্রচণ্ড সমালোচনা হয়েছে। অনেক সময় আমাদের দেশের ফুটবলাররা দারুণ খেলেও বিশ্বকাপ জেতেনি। তখন প্রশংসা নয়, সেই দলের ভাগ্যে সমালোচনাই জুটেছে।

ব্রাজিল সুন্দর ফুটবল খেলতে পারে কি পারে না, সেই তর্ক এখন না থাক। ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিততে পারে কি পারে না, সেটাই গরিষ্ঠ সংখ্যক ফুটবল ভক্ত আগে দেখতে চাইবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement