শেষ আটের যুদ্ধের আগে রক্ষণে জোর ‘মহার্ঘ’ কোচের

কলম্বিয়ার বিদায়ের পরে ‘এইচ কে নাইন’ (এখন রোনাল্ডোর মতো এই নামেই ডাকা হচ্ছে হ্যারি কেনকে)-এর হাতে হামেসের সোনার বুট হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি আর একটা ছবিও স্পষ্ট হয়ে গেল রাশিয়া বিশ্বকাপে।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

মস্কো শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৮ ০৪:৩৩
Share:

পিতা-পুত্র: ছেলেকে নিয়েই অনুশীলনে নেমার দা সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র)। রাশিয়ার সোচিতে। ছবি: এএফপি

লিয়োনেল মেসির পেনাল্টি ফস্কানো দেখে গ্যালারিতে ছটফট করছিলেন এক কিংবদন্তি। জাতীয় দলে যাঁর দশ নম্বর জার্সিটা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন মেসি। দিয়েগো মারাদোনার সে দিনের মুখটা মঙ্গলবার রাতে বারবার মনে পড়িয়ে দিচ্ছিলেন আর এক তরুণ। দেশের হয়ে দশ নম্বর জার্সিটা তিনিও পরেন। দলের বড় ভরসা তিনিও। কিন্তু নিষ্ঠুর চোট মাঠের বদলে গত কাল গ্যালারিতে পাঠিয়েছিল হামেস রদ্রিগেসকে।

Advertisement

গত বিশ্বকাপের সোনার বুটের মালিক হামেস। গত কাল কলম্বিয়া যখন গোল শোধ দিয়েছে কি পেনাল্টি নষ্ট করেছে— ক্যামেরা বারবার ধরেছে হামেসকে। কখনও হাত ছুড়েছেন, কখনও দু’হাতে মুখ ঢেকেছেন। কলম্বিয়ার হারের পরে গ্যালারিতে গিয়েই তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে এসেছেন ইংল্যান্ডের জর্ডন হেন্ডারসন। বায়ার্ন মিউনিখ তারকা তখন ট্র্যাজিক নায়ক। হামেস চোট না পেলে ফল অন্য রকম হতেই পারত বলে ধারণা ফুটবল বিশেষজ্ঞদের।

কলম্বিয়ার বিদায়ের পরে ‘এইচ কে নাইন’ (এখন রোনাল্ডোর মতো এই নামেই ডাকা হচ্ছে হ্যারি কেনকে)-এর হাতে হামেসের সোনার বুট হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি আর একটা ছবিও স্পষ্ট হয়ে গেল রাশিয়া বিশ্বকাপে। কোয়ার্টার ফাইনালে লাতিন আমেরিকার দল হিসেবে টিকে থাকল শুধু নেমার দা সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র)-এর ব্রাজিল এবং লুইস সুয়ারেসের উরুগুয়ে। বিশ্বজয়ীদের মধ্যে এখন ব্রাজিলের সঙ্গে ফ্রান্স, উরুগুয়ে, ইংল্যান্ডও আছে শেষ আটে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ থেকে বুকিদের একটা বড় অংশ ব্রাজিলকেই সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন বলে ধরছেন। তাঁদের যুক্তি, তিতের দলের রক্ষণ অত্যন্ত শক্তিশালী। দলটায় ভারসাম্য আছে। যত দিন যাচ্ছে, উন্নতি করছে। তাদের হারানো কঠিন। উরুগুয়ে ছাড়া ব্রাজিলই একমাত্র দল, বিশ্বকাপের চার ম্যাচে যাদের গোলে বল ঢুকেছে মাত্র এক বার। সেটাও ছিল বিতর্কিত গোল। গোলের সময়ে মিরান্দা ফিলহোকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। তিতের জমানায় শেষ ২৫ ম্যাচে মাত্র ৬টা গোল খেয়েছেন থিয়েগো সিলভা-রা। তা সত্ত্বেও এ দিন সোচির অনুশীলনে রক্ষণেই জোর দিয়েছেন ব্রাজিলের ‘প্রফেসর’।

Advertisement

পর্তুগিজ তিতে শব্দের বাংলা অর্থ ‘মহার্ঘ’। কোচ তিতে তার দলের রক্ষণকে ঠিক সেটাই করে তুলতে চাইছেন। এর প্রধান কারণ, কোয়ার্টার ফাইনালে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বেলজিয়ামের ফরোয়ার্ড লাইন। এডেন অ্যাজার, রোমেলু লুকাকু, দ্রিস মের্তেন্স— এই ত্রিফলা বিপক্ষের রক্ষণে ঝড় বইয়ে দিয়েছেন। চার ম্যাচে ১২ গোল করেছে বেলজিয়াম। ম্যাচ-প্রতি তিনটে। তিতের চিন্তা তো থাকবেই। ব্রাজিল দলের সহকারী কোচ সেলেবার জেভিয়ার অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমাদের রক্ষণ শুধু থিয়েগো সিলভা বা মিরান্দার উপরে নির্ভরশীল নয়। এটা একটা সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে চলে। কোনও বল তারা ছাড়ে না।’’

আরও পড়ুন: ‘সাহস ও ক্ষিপ্রতায় নজর কেড়েছেন আকিনফেভ’

তা সত্ত্বেও তিতেকে ভাবাচ্ছে মাঝমাঠে দলের সেরা ব্লকার কার্লোস কাজিমিরোর অনুপস্থিতি। দু’টো হলুদ কার্ডের জন্য শুক্রবারের ম্যাচে তিনি নেই। কাজিমিরো শুধু অনেকটা জায়গা জুড়েই খেলেন না, রক্ষণের সামনে এসে সামাল দেন প্রতিপক্ষ আক্রমণও। ফলে বেলজিয়ামকে থামাতে নতুন কাউকে নামাতে হবে তিতেকে। কাকে নামাবেন, সেই ইঙ্গিত অবশ্য দেননি তিনি। বিশেষ করে যেখানে বেলজিয়ামের মাঝমাঠে কেভিন দ্য ব্রুইনের মতো পাসার আছেন, সেখানে অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে তাঁকে।

সোচিতে বুধবার পুরো দলই অনুশীলন করেছে। শুধু পাওলিনহো মূল অনুশীলনে নামেননি। মেক্সিকো ম্যাচে চোট পেয়েছিলেন তিনি। পাওলিনহোকে দেখা গিয়েছে ফিজিয়োর সঙ্গে সময় কাটাতে। তবে শুক্রবারের ম্যাচে খেলবেন তিনি। নেমার, ফিলিপে কুটিনহো, রেনাতো আগুস্তো-রা পেনাল্টি কিক অনুশীলন করেছেন অনেকক্ষণ। গোলকিপার অ্যালিসন বেকার-দের নিয়েও দীর্ঘ ক্ষণ পড়ে থেকেছেন তিতে।

আজ, বৃহস্পতিবার কাজান উড়ে যাচ্ছে ব্রাজিল দল। লুকাকুদের বেলজিয়ামকে হারাতে পারলেই নেমারদের সামনে পড়বে ফ্রান্স বা উরুগুয়ে। ফ্রান্স এ দিন মস্কোয় অনুশীলন করেছে। কিলিয়ান এমবাপে-রা তৈরি হচ্ছেন লুইস সুয়ারেসদের হারানোর জন্য। হ্যারি কেনের পরে এমবাপেকে নিয়েই এখানে সব চেয়ে বেশি হইচই। দিদিয়ে দেঁশও অনুশীলনে আজ পেনাল্টি কিক প্র্যাক্টিস করিয়েছেন পল পোগবাদের। শেষ ষোলোর লড়াইয়ে যে-হেতু টাইব্রেকারে অনেক ম্যাচেরই ফয়সালা হয়েছে, তাই কোনও ঝুঁকি নিতে পারছেন না তিতে বা দেশঁর মতো কোচেরাও।

কারণ, অঘটনের বিশ্বকাপে কোনও অঙ্কই যে মিলছে না!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement