D Gukesh

ভারতের কনিষ্ঠতম গ্র্যান্ড মাস্টার, বিতর্ককে সঙ্গী করে বিশ্বরেকর্ড গুকেশের

ভারতের কনিষ্ঠতম গ্র্যান্ড মাস্টার হিসাবে ক্যান্ডিডেটস দাবা প্রতিযোগিতা জিতেছেন গুকেশ ডোম্মারাজু। তাঁর ক্যান্ডিডেটসে সুযোগ পাওয়া নিয়েই বিতর্ক হয়েছিল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৩৭
Share:

গুকেশ ডোম্মারাজু। —ফাইল চিত্র।

সোমবার ভারতীয় সময় ভোরে আমেরিকার হিকারু নাকামুরার বিরুদ্ধে ভারতের গুকেশ ডোম্মারাজুর খেলা ড্র হওয়ার পরেই উল্লাস কানাডার টরন্টোর গ্রেট হলে। একে একে সবাই এসে অভিনন্দন জানাচ্ছেন ১৭ বছর বয়সি ভারতীয় গ্র্যান্ড মাস্টারকে। কারণ, দাবায় ইতিহাস গড়েছেন তিনি। শুধু ভারতীয় নন, বিশ্বের কনিষ্ঠতম হিসাবে ক্যান্ডিডেটস দাবা প্রতিযোগিতা জিতেছেন তিনি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ডিং লিরেনকে চ্যালেঞ্জ জানানোর যোগ্যতা অর্জন করেছেন গুকেশ।

Advertisement

ক্যান্ডিডেটসে ভারতের প্রতিনিধি ছিলেন দু’জন। গুকেশ ও রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। প্রথম থেকেই গুকেশ নজর কাড়ছিলেন। বেশ কয়েকটি রাউন্ড জুড়ে শীর্ষে ছিলেন তিনি। তবে শেষ দিকে প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে পড়ে। সবার নজর ছিল ফ্যাবিয়ানো করুয়ানা ও ইয়ান নেপমনিয়াচির ম্যাচের উপর। এগিয়ে ছিলেন করুয়ানা। কিন্তু ৪১তম চালে ভুল করে বসেন তিনি। ফলে ১০৯ চালের পরে খেলা ড্র হয়। এই ড্রয়ের ফলে শেষ রাউন্ডে নাকামুরার বিরুদ্ধে ড্র যথেষ্ট ছিল গুকেশের। সেটাই করেন তিনি। ১৪ রাউন্ডের প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন হন ভারতীয় গ্র্যান্ড মাস্টার।

করুয়ানা ও নেপমনিয়াচির ম্যাচের দিকে নজর ছিল গুকেশেরও। সেই খেলা ড্র হওয়ায় চাপ অনেকটা কমে যায় তাঁর উপর থেকে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর গুকেশ বলেন, “ভাল লাগছে, স্বস্তি লাগছে। করুয়ানা আর নেপমনিয়াচির খেলা দেখছিলাম। তার পর আমার সেকেন্ড গ্রেগর গাজেভস্কির সঙ্গে একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। সেটা দারুণ সাহায্য করেছে।”

Advertisement

কে এই গুকেশ ডোম্মারাজু?

ভারতের প্রথম গ্র্যান্ড মাস্টার তথা প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দের শহর চেন্নাইয়ে জন্ম গুকেশের। বাবা চিকিৎসক। মা মাইক্রোবায়োলজিস্ট। সাত বছর বয়সে দাবা খেলা শুরু গুকেশের। এক বছর পরেই অনূর্ধ্ব-৯ এশিয়ান স্কুল দাবা প্রতিযোগিতা জেতেন তিনি। অনূর্ধ্ব-১২ স্তরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পাঁচটি সোনা জেতেন গুকেশ। মাত্র ১২ বছর ৭ মাস ১৭ দিন বয়সে গ্র্যান্ড মাস্টারের যোগ্যতা অর্জন করেন তিনি। ভারতের কনিষ্ঠতম ও বিশ্বের দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম (১২ বছর ৭ মাস বয়সে গ্র্যান্ড মাস্টার হয়েছিলেন রাশিয়ার সের্গে কারজ়াকিন) হন গুকেশ। ভারতীয় দাবায় তাঁর উল্কার গতিতে উত্থান সবার নজর কেড়েছিল। ২৬ বছর পরে আনন্দকে টপকে ভারতের এক নম্বর দাবাড়ু হন গুকেশ।

চিনের লিরেনকে হারাতে পারলে কনিষ্ঠতম হিসাবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবেন গুকেশ। এই রেকর্ড রয়েছে ম্যাগনাস কার্লসেন এবং গ্যারি কাসপরভের। দু’জনেই ২২ বছর বয়সে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। অর্থাৎ, বিশ্ব দাবায় আরও একটি ইতিহাস লেখার সুযোগ রয়েছে গুকেশের সামনে।

আনন্দের পরে দ্বিতীয় ভারতীয় হিসাবে ক্যান্ডিডেটস দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন গুকেশ। আনন্দের অ্যাকাডেমিরই ছাত্র তিনি। আর সেই কারণেই হয়তো ক্যান্ডিডেটসে গুকেশের সুযোগ পাওয়া নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। গত বছর ভারতীয় দাবার প্রাথমিক ক্যালেন্ডারে ছিল না চেন্নাই গ্র্যান্ড মাস্টার্স। শেষ মুহূর্তে সেই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। তার পরেই বিতর্ক শুরু হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, দক্ষিণের দুই গ্র্যান্ড মাস্টার গুকেশ ও অর্জুন এরিগাইসি যাতে ক্যান্ডিডেটসের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন তার জন্যই কি এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে?

সেই সময় গুকেশের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বিশ্ব দাবা সংস্থা ফিডে-র সহকারী সভাপতি বিশ্বনাথন আনন্দ। ভারতের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার বলেছিলেন, ‘‘যদি কোনও প্রতিযোগী দেখে যে প্রতিযোগিতায় পঞ্চম হলে সে সুযোগ পাবে আর সে জেতার বদলে পঞ্চম হওয়ার দিকেই নজর দেয়, তা হলে কি সে নিয়ম ভেঙেছে? আমার মতে, প্রত্যেকের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই খেলা উচিত। কিন্তু কোনও প্রতিযোগী যদি পঞ্চম হওয়ার জন্য খেলে তা হলে তো সে কোনও অন্যায় করছে না। নিয়ম ভাঙছে না। এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করে কোনও নিয়ম ভাঙা হয়নি। এতে কোনও সমস্যা নেই।’’

আনন্দ যে সেই সময় ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা প্রমাণ করে দিয়েছেন গুকেশ। ভারতীয় দাবাকে আবার সিংহাসনে বসানোর সুযোগ চলে এসেছে তাঁর কাছে। ক্যান্ডিডেটসে শনিবার ভারতীয় তারকা হারিয়ে দিয়েছিলেন ফ্রান্সের আলিরেজ়া ফিরউজ়া-কে। যা নিয়ে আনন্দ বলেছিলেন, ‘‘এই ১৭ বছরের ছেলেটা যে কী করতে পারে, তা কেউ কল্পনাও করতে পারবেন না। শেষ রাউন্ডের ফল যা-ই হোক না কেন, গুকেশ যা করবে সেটাই ভারতীয় দাবার ইতিহাসে নতুন অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।’’

নতুন অধ্যায় তৈরি করে ফেলেছেন গুকেশ। ছাত্রের কৃতিত্বে তাই উচ্ছ্বাস আটকে রাখতে পারেননি আনন্দ। এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) আনন্দ লিখেছেন, “কনিষ্ঠতম চ্যালেঞ্জার এখন গুকেশ। অভিনন্দন। আনন্দ অ্যাকাডেমির সবাই তোমার জন্য গর্বিত। যে ভাবে কঠিন পরিস্থিতিগুলোর মোকাবিলা করেছ তার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে আমিও খুব গর্বিত। মুহূর্তটা উপভোগ করো।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement