প্রস্তুতি: শেষ চারের মহড়ায় দিমিত্রি, অনিরুদ্ধ, জনি ও কামিংস। রবিবার যুবভারতীতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
মোহনবাগানের অন্দরমহলে জনপ্রিয় প্রবাদ— একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে না পড়লে মাঠ থেকে আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাসকে দূরে রাখার সাধ্য কারও নেই। সদ্য সুস্থ হয়ে ওঠা ৬৭ ছুঁইছুঁই স্পেনীয় কোচের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই দলের পরিচালন সমিতির তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল রবিবার বিকেলে যুবভারতীতে সাংবাদিক বৈঠক করবেন সহকারী কোচ ম্যানুয়েল কাসকালানা ও ফুটবলার লিস্টন কোলাসো।
ওড়িশা এফসি-র বিরুদ্ধে আইএসএলের প্রথম পর্বের সেমিফাইনাল খেলতে ভুবনেশ্বর রওনা হওয়ার আগে হাবাসকে নিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকিও নিতে চাননি ক্লাব কর্তারা। কিন্তু স্পেনীয় কোচকে আটকাবেন কে? প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করে সহকারী ম্যানুয়েল ও লিস্টনকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে হাজির হাবাস। সবুজ-মেরুনের এক কর্তা বলছিলেন, ‘‘হাবাস জানান, অনুশীলন শুরুর আগে তিনিই সাংবাদিক বৈঠক করবেন।’’
স্পেনীয় কোচের এই হার না মানা মানসিকতা ও অফুরান প্রাণশক্তিই তাঁদের প্রেরণা, প্রকাশ্যেই বলেন শুভাশিস বসু, জনি কাউকো থেকে দিমিত্রি পেত্রাতস। রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে কোচের পাশে বসে লিস্টন কোলাসো বলছিলেন, ‘‘আমার জীবনে কোচের অবদান প্রচুর। ওঁর জন্যই যে কোনও মূল্যে লিগ-শিল্ড জিততে চেয়েছিলাম। আমার ফুটবলজীবনের এটা অন্যতম সেরা মরসুম।’’ গত মরসুমে প্রত্যাশাপূরণ করতে পারেননি তিনি। তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার দাবিও তুলেছিলেন সমর্থকরা। সেই লিস্টন ফের মাঠে ফুল ফোটাচ্ছেন। মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে তাঁর অসাধারণ গোলেই এগিয়ে গিয়েছিল মোহনবাগান। দুঃসময়ে হাবাস কী পরামর্শ দিয়েছিলেন? লিস্টন বলছিলেন, ‘‘কোচ আমাকে সবসময় বলতেন, লক্ষ্যে স্থির থাকতে হবে। অতীত ভুলে সামনের দিকে তাকাও।’’ আরও বললেন, ‘‘আমি অবশ্য গত বছর মরসুম শেষ হওয়ার পর সব ম্যাচের রেকর্ডিং দেখতাম। কী কী ভুল করেছি তা খুঁজে বার করে শোধরানোর চেষ্টা করেছি।’’
লিস্টন আবার স্বমহিমায়। আর এক তারকা সাহাল আব্দুল সামাদ-কে কি ফের দেখা যাবে চেনা ছন্দে? চোটের কারণে শেষ চারটি ম্যাচে খেলতে পারেননি সাহাল। রবিবাসরীয় সন্ধেয় যুবভারতীতে অবশ্য পুরোদমেই তিনি অনুশীলন করেছেন। উচ্ছ্বসিত হাবাস বললেন, ‘‘সাহাল এখন একশো শতাংশ সুস্থ। আগের ম্যাচ লাল কার্ড দেখায় ব্রেন্ডন হামিল নেই। চোটের কারণে দীর্ঘ দিন ধরেই বাইরে আশিক কুরুনিয়ন। ওরা দু’জন ছাড়া বাকি সব ফুটবলারই রয়েছে।’’
এই মরসুমে এএফসি কাপের গ্রুপ লিগে প্রথম পর্বের সাক্ষাতে ওড়িশাকে ৪-০ গোলে হারিয়েছিল মোহনবাগান। যুবভারতীতে ফিরতি ম্যাচে ২-৫ গোলে হেরে গিয়েছিল। আইএসএলের প্রথম পর্বে যুবভারতীতে ২-২ ড্র করেছিলেন দিমিত্রি-রা। তখন জুয়ান ফেরান্দো কোচ ছিলেন। হাবাস দায়িত্ব নেওয়ার পরে ভুবনেশ্বরে আইএসএলের ফিরতি দ্বৈরথের ফল ছিল গোলশূন্য। মঙ্গলবার কী হবে? হাবাস বলছেন, ‘‘ওড়িশা খুবই কঠিন প্রতিপক্ষ। ওদের কোচ (সের্খিয়ো লোবেরা) এবং ফুটবলাররা অসাধারণ। তবে অতীতে কী হয়েছে তা না ভেবে জেতার লক্ষ্য নিয়ে নামতে হবে।’’ ওড়িশাকে হারাতে আক্রমণাত্মক ফুটবলকেই কি হাতিয়ার করার পরিকল্পনা রয়েছে স্পেনীয় কোচের? সতর্ক হাবাসের জবাব, ‘‘সেমিফাইনালের প্রথম পর্বে জেতা খুবই কঠিন। কিন্তু কোনও মতেই হারা চলবে না। আগের ম্যাচের মানসিকতা নিয়েই খেলতে চাই।’’
লিগ-শিল্ড জয়ের পরে ফুটবলারদের আত্মতুষ্ট হয়ে পড়ার সম্ভাবনা কি চিন্তায় রাখছে? স্পেনীয় কোচের কথায়, ‘‘সকলেই যাতে লক্ষ্যে স্থির থাকে, আমরা তার জন্য সতর্ক। ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলছি। অনুশীলনে ওদের মানসিকভাবে তরতাজা রাখার চেষ্টা করছি। মনে রাখতে হবে, আমাদের লক্ষ্য এখনও পূরণ হয়নি।’’
যে রয় কৃষ্ণ এক সময় তাঁর তুরুপের তাস ছিলেন, মঙ্গলবার তাঁকেই আটকানোর পরিকল্পনা করা কতটা কঠিন? হাবাস বলছেন, ‘‘কৃষ্ণ আমার অন্যতম প্রিয় ফুটবলার। ওকে আমি খুব ভালবাসি। অবশ্যই খেলা শুরু হওয়ার আগে এবং পরে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরব। কিন্তু ম্যাচে কেউ কারও বন্ধু হয় না। আমি মোহনবাগানের কোচ। কৃষ্ণকে আমি প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখব।’’
কৃষ্ণ কি শুনলেন?