২০০৪ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে আবির্ভাব ঘটেছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির। তার পর কেটে গিয়েছে ষোলো বছর। অভিষেক ম্যাচে ধোনির সতীর্থরা ব্যাট প্যাড তুলে রেখেছেন আগেই। কিন্তু তিনি, ধোনি এখনও বহমান। ধোনির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাবের সেই ম্যাচের সতীর্থরা আজ কে কোথায়? দেখে নেওয়া যাক।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় — তখন ভারতীয় দলের রিমোট কন্ট্রোল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে। তাঁর নেতৃত্বেই ধোনির অভিষেক হয়েছিল ভারতীয় দলে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে ওপেন করতে নেমেছিলেন সৌরভ। দলের অধিনায়কও ছিলেন তিনি। সেই ম্যাচে অবশ্য একেবারেই রান পাননি। ২০০৮ সালে অবসর নেন সৌরভ। এখন তিনি ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের প্রেসিডেন্ট।
সচিন তেন্ডুলকর — সেই সময়ে সৌরভ ও সচিন ওপেন করতেন ভারতের হয়ে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে সচিন ৩২ বলে ১৯ রান করেছিলেন। ২০১৩ সালে মাস্টার ব্লাস্টার ক্রিকেটকে বিদায় জানান। রিও অলিম্পিকে ভারতের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ। আইএসএল-এর দল কেরল ব্লাস্টার্সের অন্যতম মালিক তিনি।
যুবরাজ সিংহ— ধোনির অভিষেক ম্যাচে যুবরাজ ব্যাট করতে নেমেছিলেন তিন নম্বরে। ৩৩ বলে ২১ রানে করেছিলেন বাঁ হাতি। ২০০৭ সালের টি টোয়োন্টি বিশ্বকাপে স্টুয়ার্ট ব্রডকে ছ’বলে ছ’টি ছক্কা এখনও টাটকা ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। ২০১১ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। যুবির অবদান কম ছিল না। বিশ্বকাপের পরেই ধরা পড়ে ক্যানসারে আক্রান্ত যুবরাজ। সেই মারণরোগকে হারিয়ে ফের মাঠে ফেরেন তিনি। শেষের দিকে বিরাট কোহালির দলে জায়গা হচ্ছিল না তাঁর। গত বারের বিশ্বকাপের মধ্যেই অবসর নিয়ে ফেলেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার।
রাহুল দ্রাবিড়— রাহুল দ্রাবিড় ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের দ্য ওয়াল। সে দিনের ম্যাচে চার নম্বরে দ্রাবিড় খেলেছিলেন ৮০ বলে ৫৩ রানের ইনিংস। বর্তমানে দ্রাবিড় জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির ক্রিকেট অপারেশনের ডিরেক্টর।
মহম্মদ কাইফ— কঠিন সময়ে নেমে ম্যাচ জেতানো ইনিংস বহু খেলেছেন মহম্মদ কাইফ। ধোনির অভিষেক ম্যাচে ম্যাচেও সেরা হয়েছিলেন তিনি। ১১১ বলে ৮০ রান করেছিলেন ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে লড়া এই ক্রিকেটার। ২০১৮ সালে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন কাইফ।
শ্রীধরন শ্রীরাম — ধোনির অভিষেক ম্যাচে দলে প্রত্যাবর্তন ঘটে শ্রীধরন শ্রীরামের। ওই ম্যাচে ৫ বলে ৩ রান করেন। বল হাতে অবশ্য নেন ৩ উইকেট। ২০১২ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে অবসর নেন।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি— সে দিন তিনি রান আউট হয়ে গিয়েছিলেন। অভিষেক ম্যাচে বলার মতো কিছু করতে না পারলেও পরবর্তীকালে ধোনি হয়ে উঠেছিলেন সেরা ফিনিশার। তাঁর নেতৃত্বে ভারত ২৮ বছর পরে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়। ক্যাপ্টেন হিসেবে সোনা ফলিয়েছেন তিনি। গত বারের বিশ্বকাপেও দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা থেকে ভারতকে টেনে তুলেছিলেন। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায় ম্যাচটা হারতে হয় ভারতকে। কবে তিনি আবার মাঠে ফিরবেন, তার অপেক্ষায় সমর্থকরা।
অজিত আগরকর— সে দিন বল হাতে ২ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে দ্রুত ২৫ রান করেছিলেন আগরকর। ২০১৩ সালে সব রকমের ক্রিকেট থেকেই অবসর নেন। ভারতীয় ক্রিকেটের প্রধান নির্বাচক হওয়ার দৌড়ে ছিলেন আগরকর।
ইরফান পাঠান— ওই ম্যাচে ১১ বলে ২১ রানে অপরাজিত ছিলেন, পেয়েছিলেন একটি উইকেটও। দারুণ সুইং বোলিং করতেন। সেই সঙ্গে ব্যাটের হাতও ছিল খুব ভাল। চ্যাপেল জমানায় ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যাটিং অর্ডারে উপরের দিকেও নেমেছিলেন। তখন থেকেই তাঁর রামধনুর মতো বাঁক খাওয়ানো সুইং হারিয়ে যায় হাত থেকে। ধীরে ধীরে দল থেকে বাদ পড়তে থাকেন। এই বছরের গোড়ার দিকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন পাঠান।
যোগিন্দর শর্মা — ধোনির সঙ্গে সেই ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল যোগিন্দর শর্মারও। ব্যাট হাতে তাঁর বিশেষ কোনও ভূমিকা ছিল না। বল হাতে এক উইকেট নিয়েছিলেন। ২০০৭ সালের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়ক তিনি। মিসবাকে আউট করে ধোনির হাতে বিশ্বকাপ তুলে দিয়েছিলেন যোগিন্দর। এখন তিনি ডেপুটি পুলিশ সুপার। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবদানের জন্য যোগিন্দর আবার খবরে এসেছেন।
হরভজন সিংহ— সেই সময়ে ভাজ্জি ছিলেন ভারতীয় দলের অন্যতম প্রধান সদস্য। ধোনির অভিষেক ম্যাচে ভাজ্জি বল হাতে পাননি একটি উইকেটও। ২০১১ সালে ভারত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ভাজ্জি ছিলেন দলের অন্যতম প্রধান। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের উত্থানের জন্য হরভজন জায়গা হারান। বর্তমানে আইপিএল-এ চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলছেন তিনি।