১৯৮৩ সালে ফেভারিট ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। ১৮৩ রানের পুঁজি নিয়েও হাল-না-ছাড়া মানসিকতায় জয় ছিনিয়ে এনেছিল কপিলের দল। ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেমে গিয়েছিল ১৪০ রানে। লর্ডসে সৃষ্টি হয়েছিল ইতিহাস। যা পাল্টে দিয়েছিল ভারতে ক্রিকেটের গতিপথ। বিশ্বকাপজয়ী সেই দলের ক্রিকেটাররা এখন কে কোথায়, দেখে নেওয়া যাক।
সুনীল গাওস্কর: ফাইনালে মাত্র ২ রান এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। টেস্টে সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় উপরের দিকেই থাকবেন লিটল মাস্টার। টেস্টে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার রানের গণ্ডি পার করেছিলেন তিনি। তাঁর ৩৪ সেঞ্চুরিও একসময় ছিল রেকর্ড। অবসরের পর ধারাভাষ্যে মন দিয়েছেন তিনি। এখন রীতিমতো জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার তিনি। মাঝে বোর্ডের প্রশাসনিক দায়িত্বও সামলেছেন।
কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত: ফাইনালে দলের পক্ষে সর্বাধিক ৩৮ করেছিলেন। যাতে ছিল সাতটি চার ও একটি ছয়। পরবর্তীকালে জাতীয় দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন এই বিস্ফোরক ওপেনার। অবসরের পর ভারত ‘এ’ দলের কোচ হয়েছিলেন। চার বছর ছিলেন নির্বাচকমণ্ডলীর চেয়ারম্যানও। এখন মূলত তামিল ভাষায় ধারাভাষ্য দেন তিনি।
মোহিন্দর অমরনাথ: সেমিফাইনালের মতো ফাইনালেও ‘ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ’ হয়েছিলেন। ব্যাটে ২৬ রানের পাশাপাশি মিডিয়াম পেসে নিয়েছিলেন তিন উইকেট। পরবর্তীকালে নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। জাতীয় নির্বাচকদের জোকার বলেছিলেন। অবসরের পর মাঝে মাঝে টিভিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে বসেন, লেখেন কলামও।
যশপাল শর্মা: প্রতিভা মেলে ধরতে পারেননি পুরোপুরি। তবে তা সত্ত্বেও খেলেন ৩৭ টেস্ট ও ৪২ ওয়ানডে। ’৮৩ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেই করেছিলেন ৮৯। সেমিফাইনালে করেছিলেন ৬১। ফাইনালে করেন ১১। খেলা ছাড়ার পর জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য হয়েছিলেন। কিছু দিন আম্পায়ারিংও করেছিলেন।
সন্দীপ পাতিল: বিশ্বকাপ ফাইনালে পাঁচে নেমে ২৯ বলে ২৭ করেছিলেন। যাতে ছিল ভারতীয় ইনিংসের দ্বিতীয় ছয়। বলিউডে গিয়ে ক্রিকেট কেরিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তাঁর। পরে অবশ্য জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান হন। ভারতের সিনিয়র দল ও ‘এ’ দলেরও কোচ হন।
কপিল দেব: ব্যাট হাতে ১৫ ও বলে রবার্টসের উইকেট নিয়েছিলেন। তবে রিচার্ডসের ক্যাচে ম্যাচের মোড় পাল্টে দিয়েছিলেন তিনিই। ভারতের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার কপিল পরের বিশ্বকাপেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দলকে। টেস্টে ৪৩৪ উইকেটে থেমেছিলেন তিনি। তবে কোচ হিসেবে সাফল্য পাননি। আইসিএলে যোগ দিয়েছিলেন একসময়। ধারাভাষ্যও দিয়েছিলেন। এখন হরিয়ানার স্পোর্টস ইউনির্ভাসিটির চ্যান্সেলর তিনি।
কীর্তি আজাদ: বিশ্বকাপজয়ী দলে তাঁর জায়গা নিয়ে বার বার উঠেছে প্রশ্ন। ফাইনালে তিনি কোনও রান করেননি। দেশের হয়ে তিনি মাত্র সাতটি টেস্ট ও ৩৫ ওয়ানডে খেলেছিলেন। খেলা ছাড়ার পর রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি। প্রথমে বিজেপিতে যোগ দিলেও অরুণ জেটলির সঙ্গে ঝামেলার কারণে কংগ্রেসে আসেন এই স্পিনার অলরাউন্ডার।
রজার বিনি: ’৮৩ বিশ্বকাপে ১৮ উইকেট নিয়েছিলেন, যা দলের পক্ষে সর্বাধিক। ফাইনালে বুদ্ধি করে নিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েডের উইকেট। ২৭ টেস্ট ও ৭২ ওয়ানডে খেলেছেন এই অলরাউন্ডার। খেলা ছাড়ার পর কোচিংয়ে মন দিয়েছিলেন। ২০১২ সালে তিনি জাতীয় নির্বাচক হন। বর্তমানে কর্নাটক রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার পদাধিকারী তিনি।
মদন লাল: ফাইনালে তাঁর বলেই ক্যাচ তুলেছিলেন ভিভ রিচার্ডস। সেই উইকেটই ম্যাচে ফিরিয়েছিল ভারতকে। ফাইনালে রিচার্ডস-সহ তিন উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। করেছিলেন মূল্যবান ১৭ রানও। দেশের হয়ে ৩৯ টেস্ট ও ৬৭ ওয়ানডে খেলেছিলেন। খেলা ছাড়ার পর কোচিং করিয়েছিলেন ভারতকেও। হয়েছিলেন জাতীয় নির্বাচক। নিজের অ্যাকাডেমি রয়েছে তাঁর।
সৈয়দ কিরমানি: ফাইনালে ১০ নম্বরে নেমে ১৪ রান করেছিলেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। ধরেছিলেন ফাউদ বাক্কাসের ক্যাচও। কেরিয়ারে খেলেছিলেন ৮৮ ক্যাচ। ভারতের সর্বকালের সেরা উইকেটকিপারদের মধ্যে পড়েন তিনি। পরবর্তীকালে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নানা টিভি শোয়ে দেখা যায় তাঁকে।
বলবিন্দর সান্ধু: ফাইনালে গর্ডন গ্রিনিজকে বোল্ড করার ডেলিভারির জন্য বিখ্যাত তিনি। ম্যাচে ৩২ রানে দুই উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। দেশের হয়ে তিনি খেলেন আট টেস্ট ও ২২ ওয়ানডে। অবসরের পর তিনি পঞ্জাব ও মুম্বইয়ের কোচ হয়েছিলেন। আইসিএলেও গিয়েছিলেন তিনি।