ছেলেদের লড়াইয়ে গর্বিত কোচ অরুণ। —নিজস্ব চিত্র।
খাদের কিনার থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সেমিফাইনালে অবিশ্বাস্য জয়। তারকাখচিত কর্নাটককে ইডেনে কার্যত পর্যুদস্ত করল বাংলা। বহুযুদ্ধের সৈনিক অরুণ লালের ‘ফাইটিং স্পিরিট’টাই কি সঞ্চারিত হল বাংলার ক্রিকেটারদের মধ্যে? সাফল্যের রসায়নটা ঠিক কী? অরুণ লাল যা বললেন...
বাংলার এই সাফল্যের কারণ কী?
আমাদের পেসাররা দেশের সেরা। এ বিষয়ে আমার মনে কোনও সন্দেহই নেই। ছেলেদের ফিটনেস দারুণ। প্রতিটি ম্যাচে পরিকল্পনা অনুযায়ী ছেলেরা নিজেদের মেলে ধরতে পারছে মাঠে। একেক দিন একেক জন নায়ক হয়ে উঠছে। কাল যেমন ঈশান পোড়েলের দিন ছিল। আজ মুকেশ জ্বলে উঠেছে।
মুকেশের অবিশ্বাস্য বোলিং নিয়ে কী বলবেন?
ম্যাজিকাল স্পেল বলতে যা বোঝায়, সেটাই করল। ওর বল দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না, বাতাসে বল কোন দিকে মুভ করবে। একটা ডেলিভারি ভিতরে আসছে তো আরেকটা ডেলিভারি বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে। কর্নাটকের ব্যাটসম্যানরা বল বুঝতেই পারেনি। মুকেশের সিম মুভমেন্টের হদিশ পাননি কেউই। আনপ্লেয়েবল ডেলিভারি বলতে যা বোঝায়, তাই করে গিয়েছে মুকেশ। একদম ঠিক জায়গায় বল ফেলেছে। ব্যাটসম্যানদের শট খেলতে বাধ্য করেছে। কর্নাটকের ব্যাটসম্যনরাও শট খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়েছে।
বাংলার সাফল্যের রেসিপি কী?
আমাদের জেতার তাগিদ ছিল। গত বছরের ১ জুলাই থেকে লড়াই শুরু করেছি। ২৫ পাক করে দৌড় করাতাম ছেলেদের। টানা দু’ মাস ধরে বিরামহীন ভাবে খেটে গিয়েছে ছেলেরা। আমাদের মধ্যে জেতার তাগিদ ছিল, বিশ্বাস ছিল। তার জন্য ওদের পাওয়ার, স্ট্রেন্থ, ফিটনেসের দিকে নজর দিয়ে গিয়েছি। আমরা এই মরসুমে অনেক বার অসম্ভব জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এ রকমও দিন গিয়েছে যখন সব আমাদের বিরুদ্ধে ছিল, সেখান থেকে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আমাকে যদি সাফল্যের ফর্মুলা জিজ্ঞাসা করেন, তা হলে আমি তা বলতে পারব না। তবে আমরা কঠোর থেকে আরও কঠোর পরিশ্রমে নিজেদের ঢুবিয়ে দিয়েছি। এটাই আমাদের জয়ের চাবিকাঠি।
আরও পড়ুন: বিধ্বংসী মুকেশ, ১৭৪ রানে জিতে ১৩ বছর পর রঞ্জির ফাইনালে বাংলা
টপ অর্ডারের রান না পাওয়া প্রসঙ্গে কী বলবেন?
ক্রিকেট টিম গেম। আমরা দলগত ভাবে কী করছি, সেটাই আসল ব্যাপার। ক্রিকেট এমন এক খেলা যেখানে সবাই সব দিন রান পায় না। টপ অর্ডার রান পায়নি তো কী হয়েছে? আমাদের ছয়, সাত, আট নম্বর রান করে টপ অর্ডারের দুর্বলতা ঢেকে দিয়েছে। ছ’টা উইকেট চলে যাওয়ার পরেও আমরা আড়াইশোর বেশি রান তুলেছি। এখানে আমি বলে কিছু নেই। সবার আগে টিম। আমরা জানি, আমি না পারলে আর এক জন ঠিক কাজটা করে দেবে। আর এটাই আমাদের শক্তি।
গত বার পারেননি, এ বার ঘুরে দাঁড়ানোর রহস্য কী?
আমার হাতে জাদুর কোনও ছড়ি নেই। আমাদের প্রত্যেকের মনে বিশ্বাস ছিল। প্রতিটি ছেলের ভিতরে জেতার দারুণ তাগিদ ছিল। আর এটাই আমাদের জেতাতে সাহায্য করেছে।
অভিমন্যুর খারাপ পারফরম্যান্স নিয়ে কী বলবেন?
অভিমন্যু দুর্দান্ত পারফরমার। ওর চেয়ে যোগ্য নেতা দলে নেই। ও প্রচণ্ড পরিশ্রমী ছেলে। দলকে সব সময়ে উদ্দীপ্ত করে। লিডার হিসেবে এরকমই এক জনকে আমাদের দরকার। আমি অভিমন্যুকে বলেছি, আমরা সবাই তোমাকে ফলো করবো। তুমি শুধু সামনে থাকো।
আরও পড়ুন: এই দলের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মশলা রয়েছে, বলছেন সম্বরণ
নিজের সম্পর্কে কী বলবেন?
একটা দল যতটা ভাল, কোচ ঠিক ততটাই ভাল। আমার হাতে তো দেশের সেরা দল রয়েছে। এটাই তো আমার শক্তি।