ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ। —ফাইল চিত্র
ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহকে ৪৮ ঘণ্টার অন্তর্বর্তী জামিন দিল দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত। ২৫ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে এই জামিন পেয়েছেন ব্রিজভূষণ। বৃহস্পতিবার আবার মামলার শুনানি হবে। সেই শুনানিতেই ঠিক হবে যে ব্রিজভূষণের আগাম জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা হবে কি না।
মঙ্গলবার কুস্তিকর্তাকে দুপুর আড়াইটেয় হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল দিল্লির আদালত। সেই মতো নির্দিষ্ট সময়েই আদালতে গিয়ে পৌঁছন ব্রিজভূষণ। কুস্তিকর্তা হওয়ার পাশাপাশি তিনি বিজেপি সাংসদও। তার ফলে আগে থেকে আদালত চত্বরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছিল। শুনানির শুরুতেই আগাম জামিনের আবেদন করেন ব্রিজভূষণের আইনজীবীরা। তাঁরা জানান, তদন্তের স্বার্থে ব্রিজভূষণ সব রকমের সহযোগিতা করেছেন। কোথাও পালিয়েও যাননি। তাই তাঁকে আগাম জামিন দেওয়া হোক। জামিনের বিরোধিতা করেনি দিল্লি পুলিশ। কিন্তু তাঁদের আইনজীবী জানান, কয়েকটি শর্ত মানতে হবে ব্রিজভূষণকে। এই সময়ের মধ্যে দিল্লি ছেড়ে কোথাও যেতে পারবেন না তিনি। অভিযোগকারী ও তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা বা তাঁদের ভয় দেখানো যাবে না। এই শর্ত মানতে রাজি হয়ে যান ব্রিজভূষণ। তার পরেই দু’দিনের অন্তর্বর্তী জামিন দেন বিচারক।
ব্রিজভূষণের আইনজীবীরা আদালতে আরও একটি আবেদন করেছেন। যে ভাবে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে করা দিল্লি পুলিশের চার্জশিট সংবাদমাধ্যমে বেরিয়েছে তা ঠিক হয়নি বলে জানিয়েছেন তাঁরা। আইনজীবীরা আবেদন করেছেন, এই মামলা সংক্রান্ত কোনও তথ্য যেন বাইরে কোনও ভাবে বার না হয়। বৃহস্পতিবারের শুনানির সময় এই বিষয়ে নিয়ে সওয়াল-জবাব হবে বলে জানিয়েছেন বিচারক।
এক নাবালিকা-সহ ছ’জন মহিলা কুস্তিগির অভিযোগ করেছিলেন ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে। কিন্তু দীর্ঘ দিন দিল্লি পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না করায় যন্তর মন্তরে ধর্না দেন বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগটদের মতো কুস্তিগিরেরা। অবশেষে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে চার্জশিটে যৌন হেনস্থা, শ্লীলতাহানি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ আনে দিল্লি পুলিশ।
আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর সাজা হতে পারে ব্রিজভূষণের। দিল্লি পুলিশ সূত্রে এমনই জানা গিয়েছে। দিল্লি পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, যে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে তাতে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ (শালীনতা নষ্ট করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ), ৩৫৪এ (যৌন হয়রানি), ৩৫৪ ডি (উত্ত্যক্ত করা) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। সর্বভারতীয় কুস্তি সংস্থার প্রাক্তন সহ-সচিব এবং অন্যতম অভিযুক্ত বিনোদ তোমারের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ (শালীনতা নষ্ট করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ), ৩৫৪এ (যৌন হয়রানি), ১০৯ (প্ররোচনা) এবং ৫০৬ (অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যে তিনটি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের (৩৫৪ ধারায়) কারাবাস হতে পারে। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে মোট ১০৮২ পাতার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।