উইম্বলডন জেতার পরে ট্রফিতে চুমু খাচ্ছেন কার্লোস আলকারাজ। ছবি: রয়টার্স
কেরিয়ারের প্রথম উইম্বলডন জেতার পর তখন ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। ট্রফি দেখাতে গিয়ে সেটি হাত থেকেই ফেলে দিলেন স্পেনের কার্লোস আলকারাজ। নিজের কাণ্ডে নিজেই হেসে ফেললেন নোভাক জোকোভিচকে হারানো নতুন তারকা।
বিশ্বের এক নম্বর টেনিস খেলোয়াড় আলকারাজের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিল একটি টেলিভিশন চ্যানেল। আলকারাজ নিজের ঘরে বসেই সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। দুই সঞ্চালক ছিলেন চ্যানেলের স্টুডিয়োয়। সেখান থেকেই তাঁরা আলকারাজকে তাঁর উইম্বলডন ট্রফিটি দেখাতে বলেন। পাশে রাখা ট্রফিটি তুলে দেখাতে যান আলকারাজ। তখনই ট্রফির উপরের ঢাকনাটি খুলে পড়ে যায়। আলকারাজ দ্রুত সেটি তুলে নিয়ে যথাস্থানে রেখে ট্রফিটি টেলিভিশনের পর্দায় দেখান। স্পেনের খেলোয়াড়ের কাণ্ড দেখে সঞ্চালকেরাও হেসে ফেলেন। হাসেন আলকারাজ নিজেও।
বরিস বেকার এবং বিয়ন বর্গের পর তৃতীয় কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসাবে উইম্বলডন জিতেছেন আলকারাজ। ট্রফি জিতে নতুন উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন বলেছেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেও বলব, এই ট্রফিটা সত্যিই জিততে চাইতাম। তবে এত তাড়াতাড়ি জিতব ভাবিনি। এটাই আমার জীবনের সব থেকে খুশির মুহূর্ত। সত্যি বলতে, ফাইনাল শুরুর আগেও ভাবিনি পাঁচ সেটের খেলা হলে জোকোভিচকে হারাতে পারব। এ রকম একটা ঐতিহাসিক ম্যাচ খেলতে পারব তা-ও ভাবিনি। এক জন কিংবদন্তির বিরুদ্ধে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে ঠিক জায়গায় থেকে লড়াই করা সহজ নয়। এই ম্যাচ থেকেও অনেক কিছু শিখতে পারলাম।’’
দু’টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা হয়ে গেলেও আলকারাজের বয়স যে সত্যিই কম, তা বোঝা যাচ্ছে তাঁর কথাতেই। পেশাদার সার্কিটে কথা বলার বিষয়টি সম্ভবত এখনও ভাল ভাবে রপ্ত করতে পারেননি তিনি। ফাইনালে ওঠার পরেই তিনি বলেছিলেন, ‘‘জানি খুব কঠিন একটা ম্যাচ খেলতে হবে। এটুকু বলতে পারি আমি লড়াই করব। নিজের উপর আস্থা রয়েছে আমার। বিশ্বাস করি ফাইনালে জোকোভিচকে হারাতে পারব।’’ সেমিফাইনাল জেতার পর যিনি ফাইনালে জয়ে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, তিনিই খেতাবি লড়াইয়ের আগে বিশ্বাস করতে পারেননি পাঁচ সেটের খেলা হলে জোকোভিচকে হারাতে পারবেন! নাকি ফাইনালের আগে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতেই উদ্বেগ লুকিয়ে আত্মবিশ্বাসের কথা বলেছিলেন?
এই জয়ের পর নিজের উচ্ছ্বাস গোপন করেননি আলকারাজ। এ ক্ষেত্রেও শোনা গিয়েছে তাঁর পরস্পর বিরোধী বক্তব্য। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি নিজের জন্য জিতেছি। এই জয় কোনও টেনিস প্রজন্মের নয়। সত্যি বলতে জোকোভিচের বিরুদ্ধে এই জয়-ই সেরা। এই পর্যায় জোকোভিচ ইতিহাস তৈরি করেছে। ১০ বছর উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে অপরাজিত থাকা কারও বিরুদ্ধে জয় সত্যিই অসাধারণ। এই অনুভূতি কখনও ভুলতে পারব না।’’ এর পরেই আলকারাজ বলেছেন, তিনি মনে করেন তাঁর এই সাফল্য অন্য তরুণ খেলোয়াড়দেরও উৎসাহিত করবে। উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন বলেছেন, ‘‘আমার এই জয় নতুন প্রজন্মের কারও জন্য দুর্দান্ত ব্যাপার। মনে হয় জোকোভিচের বিরুদ্ধে আমার জয় দেখার পর নতুনরাও ওকে হারানোর কথা ভাববে। বুঝতে পারবে জোকোভিচকে হারানোর ক্ষমতা ওদেরও আছে। এই জয়টা আমার জন্য তো বটেই, নতুন প্রজন্মের জন্যও তাই দুর্দান্ত।’’
গত ২০ বছরে জোকোভিচ, রজার ফেডেরার, রাফায়েল নাদাল এবং অ্যান্ডি মারে ছাড়া আর কোনও খেলোয়াড় উইম্বলডন জিততে পারেননি। সেই অসাধ্যসাধন করে দেখিয়েছেন আলকারাজ। তার পরে হয়তো নিজের উচ্ছ্বাস ধরে রাখতে পারছেন না তিনি। তাই এমন সব ঘটনা ঘটছে।