ক্যারিবিয়ানদের ঝোড়ো শুরু। ফ্লোরিডায়। -এএফপি
আবহাওয়ার পূর্বাভাস, রবিবার ‘হারিকেন’ আছড়ে পড়তে পারে ফ্লোরিডায়। তার এক দিন আগেই শনিবার সেন্ট্রাল ব্রোওয়ার্ড পার্কে সাইক্লোন তুললেন ব্যাটসম্যানরা। প্রথমে ক্যারিবিয়ানরা, পরে ভারতীয়রা। এমন ব্যাটিং স্বর্গে অবশ্য মার্কিন প্রবাসী ক্রিকেট ভক্তরা বিরাট কোহালির কাছ থেকে যা দেখবেন ভেবে এসেছিলেন, তার ঝলক দেখিয়ে ফিরে গেলেন ভারতীয় টেস্ট ক্যাপ্টেন। দলকে ডেঞ্জার জোনে রেখেই। তবে সমর্থকদের সেই ক্ষতে মলম লাগিয়ে দিলেন কে এল রাহুল আর রোহিত শর্মা। এই খবর লেখার সময় দু’জনেরই হাফ সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ২৪৬-এর টার্গেটে পৌঁছতে ভারতের ১১০ রান বাকি। হাতে ৫১ বল আর আট উইকেট।
শনিবার জীবনের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে নেমে ৪৮ বলে সেঞ্চুরি করেন ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর ২৫ বছর বয়সি ওপেনার এভিন লিউইস। আর এক ওপেনার জনসন চার্লস ৭৯ করলেন ৩৩ বলে। দু’জনে মিলে ষোলটা ছয় হাঁকালেন ভারতীয় বোলারদের। স্টুয়ার্ট বিনিকে এক ওভারে পরপর পাঁচবার সোজা বাউন্ডারির বাইরে আছড়ে ফেললেন তরুণ ব্যাটসম্যান। সব মিলিয়ে রান ফোয়ারার যে ট্রেলার তাঁরা দেখালেন, ভারতীয় ব্যাটিংয়ের শুরুতে তার পুরো ছবিটার ইঙ্গিত সে ভাবে ছিল না। শিখর ধবন এগারোর বাইরে। তাঁর জায়গায় ওপেন করতে নামা অজিঙ্ক রাহানে আন্দ্রে রাসেলের এক বাউন্সারে ডান কানে আঘাত পান। কানে অবশ্য গার্ড ছিল বলে আঘাত অতটা গুরুতর ছিল না। কিন্তু রাহানেকে মানসিক ভাবে পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে ছিল যথেষ্ট। ওই ওভারেই ব্র্যাভোর দুর্দান্ত ক্যাচে আউট হয়ে ফিরে যান। কোহালি ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই স্যামুয়েল বদ্রিকে দুটো বাউন্ডারি মারেন। এর পর ব্র্যাভো বল করতে এলে তাঁকেও বাউন্ডারির বাইরে পাঠান। কিন্তু সেই ওভারেই ব্র্যাভোর শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে স্টাম্পের পিছনে ধরা পড়ে যান তাঁর ১৬ রানের মাথায়। সুনীল নারিন এ দিন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের হাতে বেশ মার খান। তাঁর প্রথম ওভারেই মিড অফের উপর দিয়ে ছয় মারেন রাহুল। তাঁর পরের ওভারে রোহিত পরপর দুটো ছয় মারেন। আগের ওভারে রাহুল আরও দুটো চার মেরেছিলেন। ব্রেথওয়েটকেও জোড়া বাউন্ডারি মারেন রাহুল।
এই পিচে এমনটা যে হতে পারে, তা ম্যাচের আগে ব্রোওয়ার্ড পার্কের বাইশ গজ দেখেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। রবিচন্দ্রন অশ্বিন নিজেই পিচ দেখে টিভিতে বলে দেন, ‘‘আমাদের বোলারদের জন্য ভাল খবর কিছু নেই। দুশো প্লাস স্কোর এই পিচে বাঁধা।’’ হলও তাই। খেলা শুরু হতে সেটাই হল। টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে যখন ব্যাট করতে পাঠালেন এম এস ধোনি। প্রথম ওভারেই মহম্মদ শামিকে দুটো চার আর একটা ছয় হাঁকিয়ে সাইক্লোনের ইঙ্গিত দিয়ে রাখেন ওপেনাররা। জসপ্রীত বুমরাহ যখন তাঁর দ্বিতীয় ওভারে দুই ওপেনারকে ১৮ রান দেন, তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর দাঁড়ায় পাঁচ ওভারে ৬৪-০।
স্টুয়ার্ট বিনির অভিশপ্ত ওভারে লিউইসের পাঁচটা ছয়, একটা ওয়াইড ও একটা খুচরো রান। এক ওভারে ৩২ ওঠা দেখে বীরেন্দ্র সহবাগ টুইট করেন, ‘‘হচ্ছেটা কী? ক্রিকেট, না ভিডিও গেমস?’’
ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে এই মাঠে ২০৬-৩ তুলেছিল সেন্ট লুসিয়া। ২০১২-য় ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তুলেছিল ২০৯-২। এগুলোই ছিল এই মাঠে এতদিনের সর্বোচ্চ স্কোর। সব রেকর্ড শুইয়ে দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ দিন ২৪৫ রান তোলে ছ’উইকেট হারিয়ে।
তাও এগারো ওভার পর্যন্ত যে গিয়ারে ছিলেন ক্যারিবিয়ানরা, সেই গিয়ারে থাকতে পারলে কুড়ি ওভারের শেষে রানটা অনায়াসে তিনশোর উপর যেতে পারত। কিন্তু এই সময়েই রাশ টেনে ধরেন ভারতীয় বোলাররা। শামি শিকার শুরু করার পর বুমরাহ ও রবীন্দ্র জাডেজা দুটো করে উইকেট নিয়ে আর অশ্বিন বিপক্ষের গতিতে ব্রেক লাগিয়ে দেওয়ায় সেটা অবশ্য আর হয়নি। দুই ওপেনারের রান ফোয়ারার পর আন্দ্রে রাসেল (২২), কায়রন পোলার্ড (২২), কার্লোস ব্রেথওয়েটরা (১৪) ব্যর্থ হওয়ায় ক্যারিবিয়ানদের রান গতি শেষ দিকে কমে যায়।