পাশাপাশি: ভিভের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে শাস্ত্রীর টুইট, ‘‘রাজার সঙ্গে।’
অ্যান্টিগায় আজ, বৃহস্পতিবার থেকে তাঁর নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে বিরাট কোহালিদের টেস্ট বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ অভিযান। তার আগে নিজের শহর থেকে কিংবদন্তি ভিভিয়ান রিচার্ডস জবাব দিলেন আনন্দবাজারের একগুচ্ছ প্রশ্নের।
প্রশ্ন: ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টির যুগে টেস্ট ক্রিকেট কি ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে?
রিচার্ডস: আমি সব সময় বিশ্বাস করেছি, টেস্টই হল ক্রিকেটের সেরা ফর্ম্যাট। আমি সব সময় বলে থাকি, বাবাকে সম্মান করো, তা হলে দেখবে মা এবং বাচ্চারাও সম্মান পাবে (হাসি)। ক্রিকেটটা একটা পরিবারের মতো। টেস্ট ক্রিকেটের একটা সোনার অধ্যায় আমরা পিছনে ফেলে এসেছি। তাই হয়তো কিছু ঘুম পাড়ানি ড্র দেখতে হয়েছে। পাশাপাশি ওয়ান ডে আর টি-টোয়েন্টির উত্তেজনার আঁচ পেয়ে কেউ কেউ বলতে শুরু করেছে, ‘টেস্ট ক্রিকেটের আর জায়গা নেই’।
প্র: টেস্ট বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ কি সেই আকর্ষণ ফিরিয়ে আনতে পারবে?
রিচার্ডস: এই চ্যাম্পিয়নশিপের মাধ্যমে বিশ্বকে জানিয়ে দেওয়ার সুযোগ এসেছে পরিবারের কর্তা কে! এর পরে পরিবারের বাচ্চারা দায়িত্ব নেবে খেলাটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। অন্য একটা মাত্রা দেওয়ার। নতুন একটা জিনিস চালু হওয়ায় মনে হয় টেস্ট নিয়ে আগ্রহটা বাড়বে। আকর্ষণ বাড়বে। সবাই খুশি হবে। যারা পাঁচ দিনের ফর্ম্যাট ভালবাসে, তারাও। আবার যারা সীমিত ওভারের ক্রিকেট ভালবাসে, তারাও। একটা জায়গায় এসে সবাইকেই তো কিছু না কিছু ছাড়তে হবে।
প্র: আপনাকে বলা হত কিং রিচার্ডস। এখন বিরাট কোহালিকে বলা হয়, কিং কোহালি। এক সময়কার রাজা এখনকার রাজা সম্পর্কে কী বলবেন?
রিচার্ডস: বিরাটকে আমি অত্যন্ত সম্মান করি। আমাদের দু’জনের অনেক মিল আছে। দু’জনেই দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপারে প্রচন্ড আবেগপ্রবণ। শুধু নেতৃত্ব নয়, অনেক ছোটখাটো ব্যাপারেই আমার আবেগটা বিরাটের মধ্যে দেখেছি। যে জিনিসটা ঠিক বলে মনে করে, তার জন্য লড়াই করে যায়।
আরও পড়ুন: কুম্বলের হয়ে জোর সওয়াল সহবাগের
প্র: অধিনায়ক হিসেবে কোহালি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
রিচার্ডস: বিরাট অধিনায়ক হিসেবে ওর প্রাপ্য সম্মানটা আদায় করে নিতে পারছে। এমন অনেক অধিনায়ক আছে, যারা বোঝাতে পারে না কেন তাদের অধিনায়ক করা হয়েছে। কিন্তু এই ছেলেটা সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেয়। যেটা আমি দারুণ উপভোগ করি। ওর আবেগটা আমার খুব ভাল লাগে।
প্র: অধিনায়ক কোহালিকে ঘিরে কোনও ঘটনা মনে পড়ছে?
রিচার্ডস: কোহালি কতটা আবেগপ্রবণ, তা একটা ঘটনায় বুঝেছিলাম। একটা ম্যাচে বিরাট লং অন বাউন্ডারিতে ফিল্ডিং করছিল। ব্যাটসম্যানের পায়ে বল লাগে। পিচের থেকে অত দূরে থাকলেও গলা ফাটিয়ে আবেদন করছিল। দারুণ লেগেছিল আমার। এতেই বোঝা যায়, ছেলেটা চব্বিশ ঘণ্টা ক্রিকেটে ডুবে থাকে। বিরাট মাঠে থাকলে একটা বাড়তি এনার্জির আঁচ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: হরমনপ্রীত, রানিদের শাসনে সেরা ভরত
প্র: আপনার আর কোহালির মিলের কথা বলছিলেন...
রিচার্ডস: আমার বিরুদ্ধে একটা কথা উঠত। আমি নাকি ছেলেদের সঙ্গে খুব কড়া আচরণ করতাম। এই তো সে দিন বিরাটকেও দেখলাম একই কাজ করছে ওর ক্রিকেটারদের সঙ্গে। দেখে মনে হল, আরে...আমিও তো একই কাজ করতাম!
প্র: আর কিছু?
রিচার্ডস: অধিনায়ক হিসেবে আমি কখনওই ছেলেদের এমন কিছু করতে বলিনি কখনও, যেটা আমি নিজে করতাম না। আমার মনে হয়, বিরাটও এই একই কাজটা করে। মাঝে মাঝে আমরা সবাই একটু আধটু উত্তেজিত হয়ে পড়ি। যে কারণে কখনও কখনও নিজের দলের ক্রিকেটারকেও বকাঝকা করতে হয়। আমিও করেছি। পরে আমাদের খারাপ লেগেছে। তবে আমি নিশ্চিত ছেলেরা বুঝতে পারে, যে নিতান্ত প্রয়োজন না হলে কোনও অধিনায়ক এমন কিছু করবে না যা তাকেও অস্বস্তিতে ফেলবে।
প্র: বিরাটকে মাঝে মাঝে অতি আগ্রাসী বলা হয়। আপনার কী ধারণা?
রিচার্ডস: বিরাট হল এমন এক জন অধিনায়ক, যে প্রয়োজনে বিপক্ষ দলের ক্রিকেটারদের মুখের ওপর কথা বলতে ছাড়ে না। আর এই কাজটা করতেই হবে। অধিনায়ক হওয়ার তো সেটাও একটা শর্ত। প্রয়োজনে ব্যাট ছাড়াও লড়াই করতে হবে। কোনও কোনও সময় এমন হয় যে, মাঠে প্রতিপক্ষকে দক্ষতার লড়াইয়ে হারানো গেল। কিন্তু কথার লড়াইয়ে ওরা পাল্টা আঘাত করল। এই রকম পরিস্থিতিতে বিরাট কিন্তু রুখে দাঁড়াতে জানে।
প্র: ভারতীয় ক্রিকেটকে কোহালি কতটা বদলে দিয়েছেন?
রিচার্ডস: ভারতীয় ক্রিকেটের সেই দিনগুলোর কথা আমার এখনও মনে পড়ে। যখন ওরা শুধু শাসিতই হত। পাল্টা কিছু বলত না। বিরাট এই ছবিটা পুরো বদলে দিয়েছে। ভারত এখন শাসন করছে। এটাই তো চাই। সবাই ভাবত, আরে ভারত তো খুব নরমসরম একটা দল। বিরাট কিন্তু রুখে দাঁড়িয়েছে। ও যে জিনিসে বিশ্বাস করে, তার জন্য লড়াই করতে তৈরি সব সময়। এই গুণটা আমার কাছে খুব বড় একটা ব্যাপার। এটাই তো নেতৃত্বের ঠিক রসায়ন।
প্র: একটা সময় অস্ট্রেলিয়া এই ব্যাপারে সবার আগে ছিল। এখন কি কোহালির নেতৃত্বে ভারতও জবাব দিচ্ছে?
রিচার্ডস: আমি রিকি পন্টিংয়ের কথা বলব। পন্টিং শুধু বাইশ গজে অস্ট্রেলিয়াকে জেতায়নি। ওর আচরণ, আগ্রাসী মনোভাব বাগ্যুদ্ধেও অস্ট্রেলিয়াকে অনেক ‘ম্যাচ’ জিতিয়েছে। এখন ভারতও সেই রাস্তায় হাঁটছে। বিরাটের দল শুধু কথার লড়াইয়ে বিপক্ষকে পাল্টা জবাব দিচ্ছে তাই নয়, প্রতিভার দিক দিয়েও মাঠে শাসন করছে।
প্র: অধিনায়ক কোহালি কি একটা বার্তা রেখে যাচ্ছেন আধুনিক ক্রিকেটে?
রিচার্ডস: উল্টো দিকের দলটায় বিরাটের মতো এক জন অধিনায়ক থাকা মানে সবাই বুঝে যাবে মাঠের লড়াইটা কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হতে চলেছে। সবাই এটাও বুঝে গিয়েছে, আমরা যদি ওদের কিছু বলি তা হলে ওরাও (ভারত) আমাদের পাল্টা জবাব দেবে। আর এটায় আমি কোনও ভুল দেখি না। আমি বরং এই মনোভাবের প্রশংসা করি। এই ছেলেটার মধ্যে যে লড়াইয়ের তীব্রতা আছে, সেটা ক্রিকেটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্র: আজ, বৃহস্পতিবার থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শুরু হচ্ছে ভারতের টেস্ট দ্বৈরথ। ক্রিস গেলকে বাদ দিয়ে আপনার দেশ নামছে। এটা কি ঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়?
রিচার্ডস: ক্রিস দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেটটা খেলছে। এটা ভুললে চলবে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের নাম উজ্জ্বল করেছে। বিশেষ করে যখন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট পতনের মুখে ছিল, তখন ও বিশ্বের নানা ধরনের প্রতিযোগিতায় খেলে খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। ক্রিকেটারদের মধ্যে একটা বিশ্বাস জন্ম দিতে পেরেছিল যে, সেরাদের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা আমাদেরও আছে। গেল অবসর নেওয়ার পরে ওকে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের গর্ব করার অনেক কিছু থাকবে।
প্র: গেলের থেকে কি এখনও কিছু পাওয়ার আছে?
রিচার্ডস: গেল যদি মনে করে, ও এখনও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটকে কিছু দিতে পারবে, আমার তাতে কোনও সমস্যা